পাখির বাসা : বাবুই পাখির বাসা

চড়ুই পাখি আর বাবুই পাখির ঝগড়ার কথা কে না জানে। একজন থাকে বাড়ির ঘুলঘুলিতে, মহা আরামে। আরেকজন খড়কুটো দিয়ে কোনমতে একটা বাসা বানিয়ে থাকে, রোদ বৃষ্টি ঝড় সব সহ্য করে। কিন্তু সময় এখন বিজ্ঞানের। পাখির বাসা নিয়েও হচ্ছে বিস্তর গবেষণা। আরও জানা গেলো বাবুই পাখিদের দিনকাল আর আগের মতো নেই! তারা একেকজন এখন রীতিমতো ইঞ্জিনিয়ার বনে গেছে!

খড়কুটো দিয়ে যা বানিয়ে বেড়াচ্ছে, তাকে আর কাঁচা ঘর বলে অবহেলা করার সাহস পাবে না কবি। চড়ুই পাখি যদি অট্টালিকায় থাকে, তবে বাবুই পাখিরা এখন আছে এপার্টমেন্টে। অন্তত একটা জায়গায় গিয়ে বাবুই পাখির বাসা দেখলে এমনটা মনে হতেই পারে। চড়ুই পাখিও সেখানে বড়াই করা বাদ দিয়ে হা করে তাকিয়ে দেখবে, আর ঈর্ষায় জ্বলবে। কেন, তা জানতে চান? সোজা চলে যান দক্ষিণ আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমিতে।

ভূতের গল্প : ভূতের দল খেললো ক্রিকেট

মরুভূমি শুনেই আবার ভড়কে যাবেন না। বালু আর ধূ ধূ করা মরু নয় ওটা। বরং পাখির কিচির মিচিরে সেখানে কান পাতা দায়। আছে অজস্র ঝোপঝাড় আর সারি সারি বিদ্যুতের খুঁটি। সেই খুঁটিগুলোর ওপর অদ্ভুতভাবে ঝুলে আছে ইয়া বড় বড় সব বাবুই পাখির বাসা।

টেইলর বার্ড ও উয়েভার বার্ড কাছাকাছি। দুটোই বাবুই পাখি। তবে কালাহারি মরুর এ বাবু্পই পুরোপুরি আমাদের বাবুইয়ের মতো নয়।

কোনটার চেয়ে কোনটা বড় সেটা মাপা সম্ভব নয়। বলা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাখির বাসাগুলো যেন কালাহারি মরুতেই বানানো হয়েছে। এমনও বাসা আছে, যার ওজন কমসে কম এক হাজার কেজি। দূর থেকে দেখলে মনে হবে বুঝি খুঁটির ওপর কুড়ে ঘরে সংসার পেতেছে কেউ।

একেকটি বাসায় থাকে একশরও বেশি পাখি। অনেক বছরের পুরনো হলেও এসব বাসা ছেড়ে যায় না বাবুই পাখির দল। বংশ পরম্পরায় তারা এক বাসাতেই কাটিয়ে দেয়। এত কষ্ট করে তিলে তিলে গড়া বহুতল ভবন ছেড়ে কে-ই বা যেতে চায়!

অতিপ্রাকৃতিক সায়েন্স ফিকশন গল্প : পরীবিবির দোলনা

একটা প্রশ্ন আসতেই পারে। বিদ্যুতের খুঁটিতে কেন বাসা বানাতে গেল বাবুই? আগেই বলেছি, জায়গাটার নাম কালাহারি মরুভূমি। ঝোপঝাড় থাকলেও গাছপালা একেবারেই কম। যে কয়টা আছে, সেগুলো আগে থেকেই বাবুই পাখির কলোনি হয়ে গেছে। তাই উঁচু কিছু খুঁজে না পেয়ে যে বিদ্যুতের খুঁটিগুলো পেয়েছে সবকটা দখল করে বসেছে পাখির দল।

বাইরে থেকে শুধু বাসাটাই চোখে পড়বে। ভেতরের বুজরুকি বুঝতে চাইলে বাসায় উঁকি মেরে দেখা চাই। বাবুই আসলেই একটা ইঞ্জিনিয়ার পাখি। বাসায় ঢোকার মুখে খড়কুটোর স্তরটা পাতলা। দিনের গরমের সময়টা সেখানে বসেই কাটানো যায়। আবার রাতে যখন প্রচণ্ড শীত পড়ে, তখন সুড়ঙ্গ বেয়ে একেবারে ভেতরের ফ্লাটে গিয়ে বসে থাকে ওরা। এমনভাবে বাসা বুনে ওরা, যেন ভেতরটা একটু বেশিই গরম থাকে।

দূর থেকে দেখে মনে হবে অতিকায় এক বাসা। কিন্তু কাছে গেলে পাওয়া যাবে ছোট ছোট বেশকটি খুপড়ি। একটি খুপড়িতে একসঙ্গে দুই তিনটির বেশি পাখি থাকে না। অর্থাৎ বিশাল ভবনে বাবুই পাখিদের যার যার নিজস্ব ফ্ল্যাট ঠিকই ভাগ করা আছে। বুঝতেই পারছেন, কুঁড়েঘরে থেকে শিল্পের বড়াই করাটা কাকে মানায়!

Tailor Bird at Wikipedia

 

ছোটদেরপাখির বাসা