রূপ কমে যায় শব্দবোমায়

লেখক: আজাদ

  

       


নারী কণ্ঠের শব্দ বোমা জানালার কাঁচ অতিক্রম করে কর্ণকুহরে প্রবেশ করছিল। ভর দুপুরে নারী কণ্ঠের আওয়াজে মনঃযোগ দেয়া অর্থহীন, এতে নতুনত্ব কিছুই নাই।
শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ে মাত্রই রুমে আসলাম, জুমার নামাজ পড়ে আসার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল খাবার গ্রহণ, এটা বাধ্যতামূলক, জুমার নামাজ পড়ে এসে খাবারের যে স্বাদ তা অন্য সময়ের চেয়ে আলাদা। এখন কে কি নিয়ে কার সাথে ঝগড়া করছে তা পর্যবেক্ষণ করার কাজটি কম গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া কে কার সাথে ঝগড়া করছে তা জেনে আমার কি! এখানেতো আর আমার পরিবার পরিজন বা আত্মীয় স্বজনরা কেহ থাকেনা। ঝগড়া করুক! আরো বেশি করে করুক!! ঝগড়া হাতাহাতি বা মারামারিতে রুপান্তরিত হোক!!!
শব্দ বোমা অনবরত বিসর্জিত হচ্ছিল, আগে খেয়ে নেই পরে প্রয়োজনে দেখবো এই ভেবে খাওয়া আরম্ভ করলাম।
জানালারতো পর্দা নাই স্বচ্চ গ্লাসের এই পাশ থেকে আমি দেখবো কিন্তু আমি তাদের ঝগড়া দেখছি তা তারা বুঝতে পারবেনা এই ভেবে নিজের অবস্থানের জন্য নিজেই নিজেকে বাহবা দিচ্ছি।
এখন মানুষ যেভাবে কারণে অকারণে রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ করছে, যার যেমন ইচ্ছে তেমনটা করতে পারছে, তাতে গ্রামের এই বাড়ির মালিক তার ভাড়াটিয়ার সাথে ঝগড়া করা যুক্তি সংগত। ঝগড়া করা তার অধিকার!


ছোট কালে এমন অনেক ঝগড়াঝাটি দেখেছি, পুরুষদের ঝগড়াঝাটি একটু রিস্কি তারা খুব বেশিক্ষণ তা কন্টিনিউ করতে পারেনা, খুব দ্রুতই বাস্তবায়নে নেমে যায়, অনেকটা টি টুয়েন্টি ক্রিকেটের মত, ক্যাজুয়ালিটি ঘটা পুরুষের ঝগড়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। নারীদের বিষয়টা একটু ব্যতিক্রম তারা হাতাহাতির পর্যায়ে যাওয়ার মত উত্তেজিত হতে একটু বেশি সময় নেয়, বলা যায় টেস্ট ক্রিকেট।
পেটের ক্ষুধা নিয়ে টেস্ট ম্যাচ দেখার ধৈর্য নাই। তারা আরেকটু উত্তেজিত হোক আমার পেটের ক্ষিধা নিস্তেজ করি। যেহেতু নারী কণ্ঠের আওয়াজ তাই আশা করতেই পারি যে খাবার শেষেও তা অব্যাহত থাকবে। নারীদের ঝগড়া সহজে শুরু হয় কিন্তু সহজে শেষ হয়না।
আপনি তাদের সাথে ঝগড়ায় তাল মিলাতে না পারলে তার চোখে অযোগ্য পুরুষ হিসাবে বিবেচিত হবেন, আবার ঝগড়ায় জিতে গেলেনতো আপনি তার অধিকার হরণ করলেন, পুরুষের সাথে ঝগড়ায় জয় নারীদের জন্মগত অধিকার! এ অধিকার হরণ করা যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে মারধর করার মত জঘন্য অপরাধ!
খাবার শেষে দোতলার ব্যলকুনিতে বসে একটা সিগারেট ধরিয়ে পাশের বাড়ির উঠানের ঝগড়া উপভোগ করাতে আনন্দ আছে। সময়, স্থান সহ অন্যান্য সকল উপকরণ যাকে বলে পারিপার্শ্বিক অবস্থা তা ঝগড়া উপভোগ করার আদর্শ সময়।
খাবার শেষ, ঝগড়া চলমান কিন্ত শব্দের ব্যবহার আদিমতার দিকে গেলেও দুইজন ব্যক্তি একটু দূরত্ব রেখেই একে অপরের প্রতি শব্দ বোমা ছোড়ছে। ঝগড়ার সময় শব্দ বোমা ব্যবহার হবে এটা স্বাভাবিক, শব্দ বোমার জন্মই হয়েছে একারণে।মন চায় তারা একটু অন্তত হাতাহাতি করুক, শুধুই মুখের ব্যবহার অসমাপ্ত গল্পের পূর্বাভাস।
আমার কক্ষের দক্ষিণে সেমি পাকা লম্বা ঘর অনেকটা পূর্বেকার প্রাইমারি স্কুলের মত। উঠান পাঁকা, কিছু ফল গাছ আছে যা পুরো বাড়িটাকে ছায়ায় আচ্ছাদিত করে রেখেছে। গাছের গোড়ায় সিমেন্ট দিয়ে বৃত্তাকারে পাঁকা করা এর মধ্যে লোকজন বসে আড্ডা দিতে পারে। পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা ঘরের পূর্ব পাশের দরজায় দাঁড়ানো আনুমানিক ১৫/১৬ বছরের শ্যাম বর্ণের হ্যাংলা পাতলা সুন্দরী একটা মেয়ে সে এই ঝগড়ার একটা পক্ষ, যার মুখ দিয়ে শব্দ বোমা ফায়ার হচ্ছে, তার পাশেই লিচু গাছে হেলান দিয়ে মধ্য বয়সী একজন নারী নিশ্চুপভাবে দাঁড়িয়ে আছে। সম্ভবত তার মা হতে পারে, মেয়ে ঝগড়া করছে আর মা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে তা আমার কাছে বেমানান, এমনটা কখনো দেখিনি। এটা আমার কাছে অস্বস্তিকর!
সম্ভবত মেয়ে ঝগড়ায় কেমন পটু তা মা যাছাই করছেন। অপর পক্ষে বাড়ির পশ্চিম পাশে উঠানে দাঁড়ানো খালী গায়ের কালো রংয়ের মধ্য বয়সী একজন পুরুষ তার হাতে তরকারি কাটার একটা বটি দা। তার হাতে দা দেখে একটু পুলকিত হলাম এই ভেবে যে, ঘটনা শুধুমাত্র মুখে শব্দ বোমার মধ্যে না থেকে আরেকটু বাড়লে বিপদ হতে পারে।
আজকাল মানুষের জীবনের মূল্য দেখিনা, যে যাকে যেভাবে পারছে সেভাবেই শারীরিক, মানসিক, সামাজিক কত ভাবেইনা আঘাত করছে, এগুলো এখন গা সওয়া হয়ে গেছে।
পুরুষটা মেয়েটাকে বলছে “আমরা তোমাদের মত ঘর ভাড়া দিয়ে চলিনা”, মেয়েটা তুই তুকারি সহকারে তার বাবার বয়সী লোকটাকে বলছে “আমাদের মত ঘর থাকলেইতো তবে ভাড়া দিবি…।” ঘর ভাড়া দিয়ে আয় করাও যে একটা গালি হতে পারে জীবনে এই প্রথম শুনলাম!
মেয়েটা সম্ভবত ঘরের মালিকের মেয়ে, পুরুষটা ভাড়াটিয়া তাই মেয়েটার গলা উঁচু হলেও পুরুষটা কিছুটা নিয়ন্ত্রিত। বুঝতে পারলাম আর যাই হোক এই ঝগড়া আর জমবেনা, এটা অসম ঝগড়া।
খাটে এসে বিছানায় তনু এলিয়ে ভাবতে লাগলাম, এই বয়সের নব যৌবনা একটা সুন্দরী মেয়ের মুখের ভাষা এমন কেন হবে? সে কি জানেনা যে, আল্লাহ তাকে সুন্দরী রুপে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন, তার এই রুপেরও কাফফারা আছে, সুন্দরী ললনার রুপের কাফফারা হল, সে কোন অবস্থায় কটু কথা বলবেনা, কটু কথা সুন্দর রুপের সাথে বেমানান। এতে রুপ কমে যায়। তাদের মুখের সামান্য গালিও গুলির মত মনে হয়।
সৃষ্টিকর্তা তোমাকে সুন্দর বানিয়েছে অন্যের গালি শুনবে কিন্তু নিজে প্রতি উত্তর দিবেনা। তোমাকে সুন্দর করে গড়েছেন তুমি কালো রংয়ের ছেলেকে বিয়ে করবে, তোমার রুপের আলোয় তোমার সংগীকে আলোকিত করে তুলবে।

লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ: mdabulkalamazad21@yahoo.com

আজাদগল্পরম্য রচনা