অতিপ্রাকৃত গল্প: কে? – ধ্রুব নীল

অতিপ্রাকৃত গল্প
দরজায় টোকা দিল কেউ। মানুষের মগজের প্রসেসিং ক্ষমতা নিয়ে কোনো গবেষণা হয়েছে? একটি টোকার শব্দ থেকে কতদ্রুত কত কী আমরা একসঙ্গে ভেবে বসতে পারি? আমি লেখক বলে একটু বেশি বা দ্রুত ভাববো ব্যাপারটা তা নয়। লেখালেখিটা নিছক ক্রাফট। মাথার ভেতর আমরা সবাই লেখক।
আবারও টোকা। কিছুই ভাবিনি দুই টোকার বিরতিতে। বসেছিলাম কম্পিউটারের সামনে। একটা কিছু লেখা দরকার। মাথায় ঘাপটি মেরে বসে আছে মধ্যবয়সী এক লোক। দাঁত কেলিয়ে হেসে যাচ্ছে অনেকদিন ধরে। তাকে নিয়ে একটা আধিভৌতিক গল্প লিখতেই হবে নাকি। লেখক হিসেবে কাউকে উপেক্ষা করার শক্তি আমার নেই।
রাত আড়াইটা। ইন্টারনেট থাকায় কম্পিউটার-মোবাইলে এখন ভুল সময় দেয় না। অবশ্য সময়ের আবার ভুল সঠিক কী!
কে আসতে পারে? এত রাতে সিকিউরিটিকে পাশ কাটিয়ে কেউ ঢুকতে পারবে না। গেট বন্ধ থাকবে। ভদ্রোচিত কেউ এলেও গার্ড ইন্টারকমে জানাবে। আশপাশের কোনো ফ্ল্যাট থেকে কেউ আসবে? আমাকে তো কেউ চেনে না।
ডাকাত হবে না। ডাকাতরা এভাবে টোকা দেবে কি? আমি জানি না। ডাকাতবাবদ আমার পড়াশোনা নাই। আমি বসে আছি লিখবো বলে। প্রবল তৃষ্ণা পেলো। ফ্রিজ পর্যন্ত যেতে ইচ্ছে করলো না। তার আগে দরজার কি-হোলে তাকানো প্রয়োজন।
অবশ্য আগন্তুকের জরুরি কাজ নেই। তা না হলে দরজা ধাক্কাধাক্কি করে অস্থির করে তুলতো।
চাবির শব্দ শুনতে পেলাম। লক খোলার চেষ্টা করছে! মগজ সতর্ক করলো, এ দরজায় ছিটকিনি নেই।
আমি এ রুম ও রুম ছোটাছুটি করছি। কি-হোলে অন্ধকার। হতে পারে আগন্তুক বাতিটা অফ করে দিয়েছে, কিংবা সে চিউইংগাম চিবিয়ে ওটা দিয়ে কি-হোল আটকে দিয়েছে। আবার এমনও হতে পারে, বিশেষ কোনো কারণে (যেমন- ভয়) আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না। লৌকিক-অলৌকিক সবকিছুতেই আমার প্রবল বিশ্বাস।
চাবি ঢুকছে, মোচড় দেওয়ার শব্দটাও পেলাম। কিন্তু দরজা খুললো না। হাঁফ ছাড়তে পারলাম না। কারণ লোকটার চাবি বের করা, ঢোকানো ও মোচড় দেওয়ার মধ্যে দারুণ আত্মবিশ্বাসের গন্ধ। এর মানে সঠিক চাবিটা এখনও সে ঢোকায়নি।
কে?
সাড়া নেই। শুনতে না পাওয়ার কথা নয়। সম্ভবত জবাব দেওয়ার কোনো তাড়া নেই আগন্তুকের।
ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকি। আরেকটা চাবি তিনতলার বৃদ্ধার কাছে। বৃদ্ধা এখন ঘুমে কাদা। তার দেখভালের জন্য অবশ্য আছে একজন। তাকে নিয়ে ভাবা অনর্থক। সে এমন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চাবি ঢোকাবে না। সুতরাং ধরে নেওয়া যায় আজ রাতে এমন কিছু ঘটবে যা সচরাচর ঘটে না।
এত অস্থিরতার মানে নেই। বরং বাতি নিভিয়ে এক কোনে চুপটি করে বসে থাকা যাক। দরজা তো খুলেই যাবে একটু পর।
চাবির গোছা নিচে পড়ে গেলো। আগন্তুক আবার তা তুলে নিল। সঙ্গে সঙ্গেই দরজা খোলার চেষ্টা করলো না। গোছা থেকে ঠিক চাবিটা খুঁজে নিচ্ছে বোধহয়। এখুনি হয়তো বুঝে যাবে, যে চাবিটার মাথায় সামান্য মরচে লেগে আছে ওটাই আসল চাবি। নাকি আগন্তুক অপেক্ষা করছে- আমি দরজা খুলি কিনা দেখতে?
আমি দরজাটা খুলে দিলেই এ অধ্যায়ের সমাপ্তি। অস্বাভাবিক কিছু ঘটবে সেক্ষেত্রে। প্রকৃতি অস্বাভাবিকতা পছন্দ করে। কিন্তু মানুষকে সেটা দেখাতে পছন্দ করে না। মানুষকে সেই ক্ষমতা দেওয়াও হয়নি। আমাকে দেবে কেন? আমি তেমন কেউ না।
দরজা খুলবো? সাহসে কুলোচ্ছে না। সাহস থাকা জরুরি? ভয়ই বা পাচ্ছি কেন? কেন ধরে নিয়েছি যে আগন্তুক দরজা খুলে ফেললে ঘোরতর অনিয়ম ঘটে যাবে? হতে পারে এটাই নিয়ম।
দরজার ঠিক সামনে দাঁড়ালাম। টান টান হয়ে। হাতলে মোচড় দিলেই খুলে যাবে নিশ্চিত। হাতলে হাতও রাখলাম। আঁকড়ে ধরলাম শক্ত করে।
এমন সময় আমি হাতলে মোচড়ে দিলাম কিংবা আগন্তুক সঠিক চাবিটা ঢুকিয়ে অ্যান্টি-ক্লকওয়াইজ ঘোরালো। খুলে গেলো দরজা।
হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলাম। ঢুকেই ফ্রিজ খুলে ঢকঢক করে পানি খেলাম গলা পর্যন্ত। এরপর বাথরুমের বেসিনে উগড়ে দিয়ে এলাম সব। লেখক সংঘের আড্ডায় পড়ে আজ একটু বেশিই গিলে ফেলেছিলাম।
[আমাদের কাছে গল্প লিখুন: news@matinews.com এই ঠিকানায়।
storiesগল্প