ধ্রুব নীল
এখন রাত দশটা। সকাল দশটা থেকে তরিকুলের মনে হচ্ছে কোথাও একটা বড় গণ্ডগোল আছে। গণ্ডগোলটা কী সেটা গত বারো ঘণ্টায়ও ধরতে পারেনি।
সকাল দশটায় তরিকুল তার মুদিদোকানের শাটার খোলে। গ্রামের বাজারে তরিকুলের ছোটখাট মুদি দোকান। বেচাকেনা মাপমতো। দেরি করে দোকান খুললেও সমস্যা নেই। কাস্টমার হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকে।
সকাল দশটার আগেই যা ঘটল তাতে দোকান খুলতে তরিকুলের দেরি হওয়ার কথা। অথবা দোকানে তার যাওয়ার কথাই না। তারপরও গেল। আধাঘণ্টার হাঁটাপথ। সারাটা পথ ভাবতে ভাবতে হেঁটেছে। কূল কিনারা হয়নি।
ঘটনাটা এমন- তরিকুল নাস্তা শেষ করে নলকূপ চিপে হাত ধুচ্ছিল। এমন সময় দেখল বাড়ির সামনের পুকুরঘাটে বসে পাতিল মাজছে রুনু। কিন্তু তার কাছে মনে হচ্ছিল রুনু আছে রান্নাঘরে। নাস্তার কোন ফাঁকে শাড়ি বদলাল, আবার পুকুরেও চলে এলো, টেরই পেল না তরিকুল।
রুনুর পরনে একটা লাল শাড়ি। তরিকুল হা করে তাকিয়ে আছে। আহামরী দৃশ্য নয়। কিন্তু তরিকুল জানে একটু পর কী ঘটবে। উঠতে গিয়ে পিছলে পুকুরে পড়ে যাবে রুনু। সেটা দেখে তরিকুল হাসবে। তারপর…। তরিকুল এত কিছু জানে কারণ একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটছে চোখের সামনে। তরিকুল এ দৃশ্য আগেও দেখেছে। বিয়ের কয়েক মাস পরের ঘটনা। সেটাও কমসে কম দশ বছর আগের কথা। রুনুর পরনের শাড়িটাও সেই হিসেবে দশ বছরের পুরনো। কিন্তু এখন সূর্যের আলো পড়ে ঝিলমিল করছে।
‘হা করে দেখ কী?’
‘রুনু! তুমি না একটু পর পুকুরে পইড়া গেলা?’ বুঝতে পারল বাক্যটা ঠিকঠাক হয়নি। দৃশ্যটার মতো তার বাক্যেও গণ্ডগোল আছে। বাক্যের গণ্ডগোল নিয়ে পরে ভাবা যাবে। আগে ঘটনা কী ঘটে সেইটা দেখা দরকার।
‘কী কন। কই পড়মু!’
‘না না.. তুমি না.. আগে একবার দেখলাম মনে হইল।’ ধাতস্থ হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে।
দ্রুত কলতলা থেকে একচালা ঘরটার ভেতর গেল তরিকুল। কান খাড়া। বাড়ির পেছনে থাকা চুলার পাশ থেকে খুটখাট শব্দ আসছে। বাড়িতে তারা দুই জন। আর কেউ নাই। বাচ্চা-কাচ্চা হয়নি এখনো। চুলার পাশে তো কারোর থাকার কথা না।
তরিকুল এগিয়ে গেল। রুনু পাতিলে ভাত চড়িয়েছে। পরনে ময়লা শাড়ি। আঁচলে একটু ছেঁড়াফাটাও আছে।
‘কী? কিসু বলবা?’
‘তুমি একটু আগে কই ছিলা?’
মূলত ঝামেলার শুরু এই প্রশ্নের পর থেকেই। তরিকুল মনে করেছিল রুনু এ প্রশ্নের উত্তর দেবে না। মুখ ঘুরিয়ে অকারণে চুলার লাকড়ি ঠেলাঠেলি করবে। এসব ফালতু প্রশ্নের উত্তর স্ত্রীরা দেয় না। কিন্তু রুনুর মুখ দিয়ে একসঙ্গে দুটো রুনুর কণ্ঠ শুনতে পেল তরিকুল।
প্রথম কণ্ঠ (বয়স কম) : একটু আগে পুকুরে গেলাম পাতিল মাজতে। তুমি তো হা কইরা তাকাইয়া ছিলা।
দ্বিতীয় কণ্ঠ : সকাল সকাল তামাশা করো? দোকানে যাও। ভাত বসাইয়া তরকারি কুটি, চোখে দেখো না!
তরিকুল সোজা সামনের ঘরে গিয়ে একটা দুর্বল পায়াওয়ালা চেয়ারে সাবধানে বসল। নিজেকে দেখল। সকালে গোসল করে যে চেক প্রিন্টের লুঙ্গি পরেছিল, ওটাই আছে। বদলে যায়নি। পুকুরের ঘাটে তাকাল। দ্বিতীয় রুনুকে দেখতে পেল না। দ্বিতীয় রুনুর বিষয়টা কল্পনা। এত পরিষ্কার দেখা কল্পনা কী করে হয়। মনে সন্দেহ নিয়ে উঠে দাঁড়াল তরিকুল।
‘গেলাম।’
‘আওনের সময় তিতকরলা আর কুমড়ার ফুল নিয়া আইসো। রাইতে ভর্তা ভাজি বানাবো।’
কথাটা এলো রান্নাঘর থেকে। ঠিক যেমনটা ভেবেছিল তরিকুল। এতসব ভাবনা অগ্রিম চলে আসছে কী করে জানে না সে।
হাঁটতে হাঁটতে তরিকুল বিষয়টা কিছুটা ধরতে পারল।
‘সব কিছু এমন ঠিকঠাক কেন? কোনো গণ্ডগোল নাই কেন।’
রুনুর সঙ্গে ঘর সংসার চলছে বেশ। বাচ্চা-কাচ্চা হচ্ছে না। তারপরও ঠিকঠাক সব। ঝগড়াঝাঁটি যে হয় না তা নয়। ঝগড়াও হয়। আবার মিটমাটও। সেটাও কেমন ঘড়ির মতো। টিক টিক টিক ঠিক ঠিক ঠিক।
তরিকুলের মাথায় ঘড়ির ব্যাপারটাও ঢুকে গেল। সব কেমন ঘড়ি ধরে হচ্ছে। আজ ঘড়ির কথা না শুনলে কেমন হয়? তরিকুলের মন সঙ্গে সঙ্গে দুই ভাগ হয়ে গেল। জিতে গেল দোকান না খোলার ভাগটা।
দোকানদারি করছে বিশ বছর। মধ্যবয়স পার হয়ে গেল। আয়-রোজগার নিয়েও কোনোদিন ঝামেলায় পড়তে হলো না।
‘কী এক ঝামেলা! থু। আইজকা একটা ঝামেলা বাঁধাইয়া দেখি।’
ঝামেলা সকালেই বেঁধে বসে আছে। তরিকুলের মন এখনো ঘটনাটাকে কল্পনা বা চোখের ভুল বলে মানতে নারাজ। কারণ চোখের ভুল হয়, তাই বলেও কানেরও?
‘রুনুরে আবার জিনে ধরে নাই তো?’
বিড়বিড় করতে করতে তরিকুল হাঁটা দিল হারুমাঝির ঘরের দিকে। নৌকা নিয়ে বের হলে ঘরে পাওয়া যাবে না।
লোকটার বেজায় বুদ্ধি। লোকজন নানান সমস্যা নিয়ে আসে হারুমাঝির কাছে। তরিকুল ছোটবেলা থেকে হারুমাঝিকে যেমন দেখে আসছে এখনো তেমন। বয়স মনে হয় এক দানাও বাড়েনি।
‘তরিকুল না তুমি?’
‘জি কাকা।’
‘তোমার আবার কী সমস্যা? তোমারে তো গত বিশ বছরে কোনো সমস্যায় পড়তে দেখলাম না।’
‘আমার কোনো সমস্যা নাই কাকা।’
‘হা হা হা। তাইলে আমার কাছে আইলা কেন। সমস্যা ছাড়া মানুষ দেখতে তো ভালো লাগে না।’
‘এইটাই মনে হয় সমস্যা।’
‘হুম। কাজের কথা কইস বটে। বসো। চা বানাই।’
‘আইজকা নৌকা নিয়া বাইর হইবেন না?’
‘তুমিও তো আইজকা দোকান খুললা না।’
আবারো মনে হলো ঘড়ির কাঁটার মতো মিলে যাচ্ছে সব। তরিকুলের দোকান না খোলা ও অবেলায় হারুমাঝির ঘরে থাকার মধ্যে মিল আছে একটা।
হারুমাঝির বুদ্ধির গুণ আশপাশের দশ গ্রাম জানে। তাকে কি সকালের ঘটনাটা বলবে? নাহ, বুদ্ধিমান লোকজন এসব শুনলে হাসবে। তারা হাসি হাসি মুখে অন্যের ভয়ানক ভূতুড়ে অভিজ্ঞতার কথা শুনবে তারপর মাথা এমনভাবে দোলাবে যেন এতক্ষণ একটা বাচ্চার কথা শুনেছে। তরিকুল বাচ্চা না। সামনের পৌষে চল্লিশ পার হবে।
হারুমাঝি দাবার বোর্ডে গুটি সাজাল। চা চুলোয়, চায়ের সঙ্গে খেলাও হবে। তরিকুলের মনে দুম করে আরেকটা বিষ্ময় গেঁথে গেল। হারুমাঝির সঙ্গে সে দাবা খেলছে বহু দিন ধরে। যতবারই খেলেছে প্রত্যেকবার ড্র হয়েছে। কোনো দিন কেউ জেতেনি। অবশ্য এমনটা হতেই পারে। একটা পয়সা একশ বার ছোড়ার পর একশ বারই শাপলা উঠতে পারে। এতে বিষ্ময়ের কিছু নেই।
তারপরও তরিকুল শান্ত হতে পারছে না। ছোট থাকতে দাবায় সে পাড়ার মধ্যে চ্যাম্পিয়ন ছিল। পাড়ার বাইরে কোনোদিন খেলার সুযোগ পায়নি। পেলে নির্ঘাৎ আরো প্রাইজ টাইজ পেত। হারুমাঝি তার চালের মারপ্যাঁচ কী করে যেন আগেই টের পায়। তরিকুল মনে মনে প্ল্যান করে কিন্তু কাজ হয় না। এক কাজ করলে কেমন হয়, আজ দাবার চাল এলোমেলো করে দিক। ইচ্ছে করে জেতা যায় না, হারা যায়। আজ হারার জন্য খেললে কেমন হয়?
‘তোমার কী হইসে।’
দুই চাল দিতেই ধরা খেয়ে গেল তরিকুল।
‘কিছু না।’
‘বউয়ের লগে ঝগড়া হয় নাই তা বুঝতে পারছি। ঘটনা কী?’
‘ঠিক ধরসেন কাকা। ঘটনা অন্যখানে।’
‘তাইলে খেলা বাদ দাও।’
‘না কাকা, খেলি, আপনে আমারে হারাইয়া দেন আজকে। প্রত্যেক দিন ড্র করতে ভালা লাগে না।’
‘নিজে হারতে চাইলে তো হইব না। মনে করো হাইরা গেস। ঝামেলা মিটমাট। আপাতত খেলা বন্ধ। চা খাইয়া আমার লগে নৌকায় চালাও। তোমারে নৌকা বাওন শিখাই।’
তরিকুল নৌকা চালাতে জানে। ছোটবেলায় তাদের একটা নৌকা ছিল। বাবা চালাত নৌকাটা। তরিকুলও টুকটাক শিখেছিল। বাবার সঙ্গে হারুমাঝির চেহারায় খুব মিল।
‘ঘটনা হইল আইজকা আমি দুইটা রুনু দেখসি, বুঝলেন কাকা।’
এক বাক্যেই সব বুঝে গেল হারুমাঝি।
‘একলগে দুইজন? নাকি আলাদা আলাদা?’
‘জে, আলাদা আলাদা। তবে এক টাইমেই ছিল। এক রুনু ছিল পুকুর ঘাটে। দশ বছরের পুরানা রুনু। আরেক রুনু রান্নাঘরে শিম আর আলু কাটাকুটি করতেছিল।’
‘হুমম। ঘটনা পরিষ্কার। তোমার মন পইড়া আছে দশ বছর আগে।’
‘চোক্ষের ভুল এত পরিষ্কার কেমনে হয়। তারপর আবার ধরেন দুই রুনুর গলা একলগে শুনলাম কানে। কানেও মানুষ উল্টাপাল্টা শোনে?’
‘শুনতেও পারে। তুমি মতির কাছে যাও। দুইটা সাদা চিনির গোল্লা খাইয়া আসো। হোমিওপ্যাথির উপরে কথা নাই। পেট কিডনি সব পরিষ্কার।’
তরিকুলের মন আগেই বলছিল, এমনটা বলবে হারুমাঝি। কিছু হলে মতি বৈদ্যের কাছে যাও। দুটো বড়ি খাও। এরপর সব ঠিক। ঠিক ঠিক ঠিক টিক টিক টিক।
‘এমুন টিকটিকির মতো শব্দ করতাসো কেন? তোমার কি গলাও উল্টাপাল্টা করতাসে?’
‘জি না কাকা। খুব বিরক্ত লাগতাসে।’
‘মতির চেম্বারে যাইবা?’
‘না কাকা। আমি কারো কাছে যাব না। আইজ একটু আউলা লাগতেসে সব।’
‘কী আউলা লাগতাসে?’
‘না কাকা। আমার ভালা লাগতেসে না। সব আউলা। আমি নৌকা চালাইতে জানি। আমার বাবা আমারে শিখাইসিল। বৈঠা নৌকা, ইঞ্জিন নৌকা সব পারি। আপনিও পারেন। আমি ছোটবেলায় দাবা খেলতাম। আপনি আমার মতো ভালো খেলেন।’
তরিকুলের মাথায় হাত রাখল হারুমাঝি। হালকা জ্বর। প্রলাপ বকার মতো বেশি জ্বর না।
তরিকুল দ্রুত উঠে দাঁড়াল। ভূতে পাওয়া লোকের মতো হন হন করে ছুটতে লাগল। ছুটছে ছুটছে। তরিকুল মনে মনে বিড় বিড় করছে, ‘রানার ছুটেছে রানার..।’ ছোটাছুটি নিয়ে আর কী কবিতা আছে? মনে পড়ছে না। এই বয়সে দুদ্দাড় করে দৌড়ানো কষ্টসাধ্য। একটু পরই থামতে হল। তরিকুল যা চেয়েছিল তা হয়নি। সে ঠিক করেছিল এলোমেলো দৌড়ে অচেনা কোনো জায়গায় চলে যাবে। উবু হয়ে দম নিতে নিতে সামনে দেখল মেসার্স মাধবীলতা এন্টারপ্রাইজের সাইনবোর্ড। তরিকুলের দৌড় দোকান পর্যন্ত। ঠিক করেছিল মেয়ে হলে নাম রাখবে মাধবীলতা। ছেলেমেয়ে কিছুই হয় নাই। দোকানের সাইনবোর্ড আছে শুধু।
‘আপনার মাথা টিপ্পা দিমু? তেল রসুন গরম করি?’
‘হুম।’
‘তরকারিতে লবণ হয় নাই।’
‘এমন স্বাদের তরকারি আমি জীবনেও খাই নাই রুনু। তুমিও খাইতে বসো। পরে দেখা যাইব আমি সব শেষ কইরা দিসি।’
‘কই মাছ দিয়া শিম, ফুলকপি খাইতাসেন। আরবের খোরমা খেজুর তো রান্ধি নাই।’
‘তুমি বুঝবা না।’
‘না বুঝার কী আছে। একদিন মুরগি নিয়া আসেন। পোলাউ রান্না কইরা দিমু।’
‘তোমার পোলাউ খাইতে ইচ্ছা করতাসে? সকালেই আইনা দিমু।’
‘আপনের তো জ্বর নাই। শইল খারাপ? গ্যাস হইসে? ট্যাবলেট খাইবেন?’
‘নাহ.. সব ঠিক। সব ঠিক। টিক টিক টিক ঠিক ঠিক ঠিক।’
শব্দ করে হাসল রুনু। যেন নুপুর বেজে উঠল। তরিকুল জানে নুপুর বেজেছে তার মাথায়। চোখে এমন উল্টোপাল্টা দেখলে কানে নুপুর কেন, একটু পর ব্যান্ডপার্টির ঢাকঢোলও শুনবে।
রাত দশটা। ঘটনার বারো ঘণ্টা পরের কথা। রুনু তাকে হাবা টাইপের মনে করলেও তরিকুল নিজেকে বেশ বুদ্ধিমান ভাবে। বুদ্ধি প্রকাশ করতে হয় না। বোকামি এমনিতেই প্রকাশ পায়। তরিকুলের মনে হচ্ছে সবাই তাদের বোকামি প্রকাশের জন্য উš§ুখ হয়ে আছে। গোটা গ্রামে যেন একমাত্র তরিকুলই বুদ্ধিমান। অবশ্য হারুমাঝিও বুদ্ধিমান। সে কোনোদিন দাবায় জিতল না কেন? সমস্যাটা কোথায়? দাবা খেলা আর পয়সা ছুড়ে মারা তো এক না। নাকি এক?
‘তরিকুল ভাই, আছেন?’
‘আমারে তো দেখতাসেনই, আবার আছি কিনা জানতে চান ক্যান।’
‘না মানে, ভাবের জগতে ছিলেন তো। এই দুনিয়ায় আছেন কিনা।’
‘বাহ, মতি মিয়া খুব কথা শিখেছেন।’
‘আপনারা তো মনে করেন আমি চিনির গোল্লা বেচি। আসল জিনিস তো বুঝলেন না।’
‘বোকা মানুষের কাছে সব মিষ্টিই চিনি।’
‘হারুমাঝি কইল আপনার নাকি একটা বিরাট সমস্যা হইসে।’
‘ঠিক বলেছেন। আমি পাগল হয়ে যাইতাছি। পাগল হওয়াটা বিরাট সমস্যা। পাগল হইলে সবাই তারে ভয় পায়।’
তরিকুল বাইরের একটা মাচায় বসা। রুনু শুয়ে পড়েছে। তরিকুলের কথা তার কানে গেলেও যেতে পারে। কিন্তু তরিকুলের মেজাজ ফুরফুরা। শুনলে শুনুক।
‘মতি মিয়া, আপনার ওষুধ খাইয়া সবার রোগ সারে কেমনে বলেন তো?’
‘আমি তো জানি না। বিশ্বাসে মেলায় বস্তু।’
‘আমি যদি অবিশ্বাস নিয়ে খাই? দেখি দেন অবিশ্বাস নিয়ে খাই। দেখি পাগলামি সারে কিনা।’
‘ওষুধ তো নিয়া আসি নাই। পরে নিয়া আসবো।’
তরিকুল জানে মতি ওষুধ নিয়ে এসেছে। সে খানিকটা অপমানিত বোধ করেছে বলে ওষুধ এখন দেবে না। যাক, দিনের শেষে একটা ঝামেলা তরিকুল বাঁধাতে পেরেছে। এমন সময় ঘর থেকে হুড়মুড় করে বেরিয়ে এলো রুনু।
‘কেন আনেন নাই? দেন ওষুধ দেন! আমারেও একটা দেন।’
‘ভাবি স্লামালেকুম। জি, ইয়ে মনে হয় পকেটে একটা শিশি আছে। এই লন। আপনারেই দিলাম।’
তরিকুল একগাদা বিরক্তি নিয়ে থুথু ফেলল। ঝামেলা বাঁধাতে গিয়েও পারেনি। সব আবার লাইনে চলে এসেছে। তার ইচ্ছে হলো মতিকে তার শিশিসহ পুকুরে ফেলে দেয়। ‘হুম বুদ্ধি খারাপ না।’
‘এ কি! কী করতাসেন! ভাই! ও ভাবি! আমি সাঁতার জানি না।’
‘সাঁতার শেখেন নাই, এখন শিখবেন। দরকার হয় আমিও আপনার লগে ঝাঁপ দিমু। ডরাইয়েন না মতি ভাই। নামেন।’
হ্যাংলা পাতলা মতি তরিকুলের সঙ্গে পারল না। তাকে চ্যাংদোলা করে পুকুরে ফেলে দিল। হা করে তাকিয়ে দেখল রুনু। তারপর দৌড়ে এসে স্বামীর কপালে হাত রাখল। যেন দুনিয়ার সব সমস্যার মূলে আছে জ্বর। স্ত্রীর দিকে শীতল চোখে হাসল তরিকুল।
‘ডরাইসো? চিন্তার কারণ নাই। তুমি আমার পেয়ারের বউ। তোমারে পানিতে ফেলব না।’
সরে গেল রুনু। চোখে ভয় ঝিলিক দিয়ে আবার চলে গেল।
‘তোমারে আমি ডরাই? তুমি চাইলেও আমারে ফেলতে পারবা না। উল্টা আমি তোমারে ফেলে দিতে পারি।’
‘ভাবি সাহেবান আমারে তোলার ব্যবস্থা করেন। দয়া করেন এই অধমের প্রতি।’
মুখে আঁচল গুঁজে ফিক ফিক করে হাসল রুনু। গলা সমান পানিতে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে মতি বৈদ্য।
‘আপনি পুকুরে খাড়াইয়া থাকেন। জল চিকিৎসা নেন। হি হি হি।’
তরিকুলের মনে হলো একটা নাটক চলছে। নাটকের শেষ দৃশ্য। এখুনি সব নিভে যাবে। সে আর রুনু চলে যাবে যার জায়গায়। কিন্তু নাটক শেষ হলো না। তরিকুল একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে রুনুর দিকে। পৃথিবীর যত রূপ সব যেন রুনুর মুখে ঢেলে দেওয়া হয়েছে। কে ঢেলে দিল? তরিকুলেরই বা মন এত ভালো কেন? মতি বৈদ্য পানি থেকে চাইলেই উঠতে পারে। কিন্তু সে ভয়ে উঠছে না। উঠলে যদি আবার ফেলে দেয়।
‘রুনু চলো, ঘরে যাই।’
‘চলো!’
মতি বৈদ্য দৃশ্যপট থেকে বিদায় নিল।
[একটি সবিনয় নিবেদন: আমাদের আয় নেই বলে লেখকদের আমরা খুব একটা সম্মানি দিতে পারি না। তবে লেখকরা লেখা থামান না। তারা লিখছেন। তাই পাঠকদের কাছে অনুরোধ, গল্প বা লেখা ভালো লেগে থাকলে লেখকের জন্য একটা নামমাত্র সম্মানি দিতে পারেন। সম্মানি আমাদের “নগদ” একাউন্টে পাঠাতে পারেন: নম্বর 01407-885500]
পরদিন। ভোরে ভোরে ঘুম থেকে উঠেছে তরিকুল। উঠেই পুকুর ঘাটে গিয়ে বসে রইল।
‘পুকুরঘাটে কারে খোঁজেন?’
‘মতি বৈদ্যরে খুঁজি। মইরা গেলে তো লাশ ভাইসা থাকনের কথা।’
‘হি হি হি। ভাবি সাহেবানের কাছে বেচারা দয়া চাইল। দিলাম না। পরে তো আর চিনির গোল্লা দিব না। হি হি হি।’
রুনু অকারণের হাসলে তরিকুলের তা মনে হলো না। রুনুর হাতে চা আর বিস্কিটের ট্রে। কী চমৎকার। তরিকুলের একবার মনে হলো তার মন চাইতেই সব হাজির হচ্ছে। সে কি বেহেস্তে আছে? চায়ে চুমুক দিতেই আবার চিন্তা বন্ধ। এত স্বাদের চা যে তার কিছু ভাবতেও মন চাচ্ছে না। বেহেস্তে গেলে মানুষের চিন্তাভাবনা কেমন বদলে যাবে সে সেটা ভাবছে। মানুষ কী করে অসীম জীবনকে মেনে নেয় এটা জানার আগ্রহ আছে তার। চিন্তায় পড়ে গেল আবার। সে এত জটিল সব চিন্তা করছে কী করে? সে তো মুদি দোকানদার। ভালো দাবাড়– কী করে মুদি দোকানদার হলো।
‘সবই কপাল বুঝলা।’
‘কীসের কপাল। কার কপাল।’
‘আমার কপাল। আমার থাকার কথা এখন নাসায়। মহাবিজ্ঞানী হওয়ার কথা। কিন্তু গ্রামের নেশা কাটাইতে পারলাম না। পইড়া রইলাম এইখানে।’
‘ভালো হইসে। তা না হইলে আমাদের বিয়া হইত?’
‘হুমম। সব মাপমতো। তোমার চায়ের মতো। চিনিও মাপমতো। তোমার নাম দিলাম চিনিবালা। মিষ্টি নাম।’
‘আপনার মনে কী আছে বলেন তো?’
‘আমার মনে কী আছে আমি নিজেও জানি না। তবে না.. ভুল বললাম চিনিবালা। আমি মনে হয় কিছু কিছু জানি। আইচ্ছা তোমার লগে কি আমি কোনো দিন এম থিউরি নিয়া কথা বলসি?’
‘কী?’
‘এম থিউরি.. এম মানে ম্যাজিক। বোসন আর ফার্মিয়নের সেতু। সুপারসিমেট্রি… আমি সব বুঝতে পারসি। তারপর আমার মাথা গেল আউলাইয়া। সব কিছুতে আমি ঠিকঠাক নিয়ম দেখতে পাইলাম। যেমন আমি আর তুমি। আমি, তুমি ও এই যে গ্রাম। সবই কেমন ঠিকঠাক… কেউ যেন সব আগে থেকে ঠিক করে রাখসে। যাকে বলে সুপারসিমেট্রি।’
‘রসুন তেল গরম কইরা আনি? কপাল টিপা দিব?’
‘হুম? দাও। তোমার কামই তো মাথা টিপা আর কপাল টিপা।’
‘ঠিক কইসো। পড়ালেখা কইরা চাকরি বাকরি করলে তখন বুঝতা।’
‘পড়ালেখা কর নাই ভালো করসো। পড়ালেখা করেও কিছু বুঝতা না, না কইরাও বুঝো না। সমান সমান।’
‘আপনি কিছু বোঝেন না?’
‘আমি বেশি বুঝে ফেলসি মনে হয়। এইজন্য মাথা আউলা।’
‘সেইটা তো অনেক আগের কথা। এখন তো সব ঠিক।’
‘হুম। সব বেশি বেশি ঠিক। এতটা ঠিক হওয়া উচিত না। আমি সব বুইঝা ফালাইসি বুঝলা চিনিবালা?’
‘কী বুঝছো কও দেখি?’
‘বুঝতে পারসি যে দুনিয়াটা বহু রকম। আমি তুমি এক দুনিয়ায়, আবার আরেক দুনিয়ায় আরেক রকম।’
‘আরেক দুনিয়াতে কি আমার চাইতেও বেশি সুন্দরী কেউ তোমার বউ?’
‘আমার মনে হয় আমি আরেক দুনিয়াতেই আছি। মানে আমার আসল দুনিয়াতে নাই। সেইখানে আমার বউ হয়তো তোমার মতো এমন করে আমারে জিজ্ঞেস করবে না।’
‘এই সব মারফতি কথা বুঝি না। আপনার দুনিয়াতে আমিই আছি। আর কেউ নাই।’
‘হুম।’
‘কী নিয়া এত ভাবেন? মনে কোনো কষ্ট আছে? কষ্ট তো আছে জানি। তবে আমার মন কইতাসে খুব তাড়াতাড়ি..।’
‘কী?’
‘এখন কমু না। আগেভাগে কইলে মুখদোষ লাগে। হিহিহি। এক কাম করেন পুকুরে ডুব দিয়া আসো। আমি রুটি বানাই।’
তরিকুল পুকুরে ডুব দিল না। ভাবনার সাগরে ডুব দিল।
মাসখানেক পরের কথা। এ কয়দিন তরিকুল বাড়িতে যায়নি। খোঁজখবরও নেয়নি। রুনু কী করছে কে জানে। যা খুশি করুক। তরিকুল এ গ্রাম থেকে ও গ্রামে দিকভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়িয়েছে। এখন কোথায় আছে নিজেও জানে না। আশপাশে দেখে আর একটু পর পর চুল ধরে টানাটানি করে। স্বপ্ন ভেঙে বাস্তবে আসার প্রাণান্ত চেষ্টা। কিন্তু কিছুই হয় না। মাঝে একবার আত্মহত্যা করার কথা মাথায় এসেছিল। ঝুলেও পড়েছিল একটা দড়ি জোগাড় করে। কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। চোখ মেলে দেখে সে একটা অচেনা গাছের নিচে শুয়ে আছে।
‘ও গাছ! ও বৃক্ষ! তুই বল আমি কী করব!’
‘তুমি আমার নিচে পইড়া থাকো।’
‘তোর নিচে পইড়া থাকলে এই জগৎ থেইকা মুক্তি পামু কেমনে।’
‘তোর মুক্তি নাই।’
‘অবশ্যই আছে।’
‘যা ভাগ!’
‘না, ভাগব না। তুই বল আমি কই যামু।’
‘বউয়ের কাছে যা।’
‘বউ তো নাই মনে হয়। সব চক্ষের ধান্দা।’
‘তুই একটা বেকুব।’
তরিকুল আর কথা চালাল না। গাছের সঙ্গে কথা বলতে এমনিতেই তার অস্বস্তি হয়। তবে মজাও আছে। গাছের সঙ্গে কথা বলা মানে অন্য জগতের সঙ্গে যোগাযোগ। বন্দিদশা থেকে ক্ষণিকের মুক্তি।
বছর তিনেক পরের কথা। তরিকুল শুয়ে আছে একটা নামিদামি হাসপাতালের কেবিনে। হাসপাতাল বেশ পরিচ্ছন্ন। নাকে ফিনাইলের গন্ধ বাড়ি দিচ্ছে না। হুট করে হাসপাতাল বলে মনেও হবে না। তরিকুল বড় বড় চোখে সিলিংয়ে তাকিয়ে আছে। ফ্যান নেই। কিন্তু ঠাণ্ডাা লাগছে কেন? ওহ, এসি চলছে।
‘কেমন আছো?’
পাশে তাকাল। রুনু বসে আছে। তার পরনে চকচকে একটা ড্রেস। দেখাচ্ছে একেবারে মডেলদের মতো। সে কি প্রতিদিন এমন সেজেগুজে আসে?
‘তিন দিন তোমার জ্ঞান ছিল না। আজ ফিরেছে। ঘাবড়ানোর কিছু নেই। তোমার শরীর পুরো সুস্থ। ধীরেসুস্থে উঠে বসো।’
‘তিন দিন জ্ঞান ছিল না কেন? তার আগে আমি কোথায় ছিলাম?’
‘তুমি বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়িয়েছো। তোমাকে ধরে আনা হয়েছে।’
‘কোন বনে ছিলাম? বাংলাদেশে তো বন একটাই, সুন্দরবন।’
‘তুমি কোথায় কোথায় ছিলে আমি নিজেও জানি না। তোমাকে খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। কোমরে দড়ি বেঁধে আনা উচিৎ ছিল। কিন্তু তারা সেটা করেনি। তোমাকে এনে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তার আগে থানায় নিয়ে একটা ডলা দিলে ভালো হতো।’
তরিকুল হেসে ফেলল। রুনুর জামাকাপড় বদলেছে, কিন্তু রুনু বদলায়নি। তার রাগ প্রকাশের ধরন আগের মতোই আছে।
‘তুমি তা হলে নতুন সেটাপের অংশ। আমাকে নিয়ে এটা কী খেলা শুরু হয়েছে শুনি। আমি কি মহাবিশ্বের কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর গিনিপিগ হয়ে গেছি?’
‘শোনো, যথেষ্ট হয়েছে। এবার বাসায় যাবে। তৈরি হও।’
‘বাসা.. ওহ.. ধানমণ্ডিিতে.. হুম। ধানমণ্ডিতে আমাদের ফ্ল্যাট আছে। নিউমার্কেটে আমার দুটো মুদি দোকান আছে। দোকানের নাম মাধবীলতা এন্টারপ্রাইজ.. না না এ নাম হবে কেন?’
‘তোমার দোকানের নাম শোভা। নামের শেষে এন্টারপ্রাইজ নাই। আর কিছু জানতে চাও?’
‘আমি কি পাগল টাগল হয়ে গেছি?’
‘অবশ্যই হয়েছো। তবে আমি তোমার চেয়ে বড় পাগল। আমার পাগলামি এখনো দেখোনি।’
‘হে হে। শোভা কোথায়?’
‘ও পিয়ানোর কোর্সে ভর্তি হয়েছে। তুমি আমার সঙ্গে যাবে। ওর ছুটি হবে পাঁচটায়। আমরা দুজন গিয়ে ওকে নিয়ে আসবে।’
‘বললে না যে, তিন দিন জ্ঞান ছিল না কেন?’
‘ডাক্তাররাও জানে না, আমি জানব কোন দুঃখে।’
‘তারমানে কোনো একটা ত্রুটি আছে।’
‘অবশ্যই আছে। পাগল কখনো ভালো হয় না। তুমিও হবে না। তবে এবার তোমার শার্টের কলারে জিপিএস ট্যাগ লাগানো থাকবে।’
‘আচ্ছা, রুনু। তুমি কি কখনো পুকুরে পিছলে পড়ে গিয়েছিলে?’
‘জলদি ওঠো। তোমার হাত-পা সব অক্ষত আছে। আমি টাকাপয়সা বুঝিয়ে দিয়ে আসছি।’
রুনু জবাব না দিয়েই চলে গেল। চোখ বুঁজে ভাবার চেষ্টা করল তরিকুল। হাসপাতালের নরম বিছানা। ঘুম দেবে নাকি আবার। জেগে উঠে হয়তো দেখবে আবার সেই গ্রাম। সে আর রুনু। হারুমাঝির সঙ্গে দাবা। হারুমাঝিটা কে যেন?
ডাক্তার এলো। প্রেশার মাপছেন। হার্টবিটও দেখলেন। চোখ টেনেও দেখলেন।
‘ডাক্তার, আপনার নাম কি মতি?’
‘জি না। আমার নাম জিলানি।’
‘ও, আপনি দেখতে মতি বৈদ্যর মতো।’
‘তা হতে পারে। একই চেহারার নাকি সাত জন করে মানুষ আছে পৃথিবীতে। কোটি কোটি মানুষ। কোটি কোটি চেহারা থাকবে এমন তো কথা নেই।’
দীর্ঘদিন বাবাকে না দেখলেও এখন শোভার সঙ্গে বেশ খাতির হয়েছে তরিকুলের। দোকানপাট কর্মচারীদের হাতে তুলে দিয়ে সে এখন মেয়ের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। বাকি সব রুনু সব সামলে নিচ্ছে বলে আরামে দিন কাটছে তার। ঠিক যেন আবার সেই গ্রামেই ফিরে গেছে। সব ঠিক ঠাক।
‘বাবা তুমি বিড় বিড় করে কী খেল? মাঝে মাঝে দেখি হাতি ঘোড়া বলো।’
‘মনে মনে দাবা খেলিরে মা।’
‘মনে মনে কী করে খেলে, কার সঙ্গে খেলতে হয়?’
‘হারুমাঝির সঙ্গে খেলি।’
‘উনি কে?’
‘চিনবি না। দাঁড়া, কিস্তিটা চালি।’
‘এবার কি তুমি জিতবে?’
‘মনে হয় জিতব।’
‘গুড! জিততেই হবে।’
‘হ্যাঁরে মা! আজকেই জিতেই ছাড়ব।’
পরিশিষ্ট: তরিকুল এই জগতেও যথেষ্ট ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে। তার ভাষায় গণ্ডগোল। রুনু আর একমাত্র মেয়ে শোভার সঙ্গে একটা গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিল। রুনুর কোনো এক বান্ধবীর বাড়ি। সে বাড়িতে হাঁস-মুরগির অভাব নেই। পরিপাটি গ্রাম। সবই ঠিকঠাক। শুধু একবার চোখে পড়ল একটা দেশি হাঁস ডিমে তা দিচ্ছে। হাঁস যে ডিমে তা দেয় না এটা তরিকুল আগে থেকেই জানত। কিছু বলল না। হুট করে একবার চোখে পড়ল একটা দেয়াল ঘড়ি। এক থেকে এগারো পর্যন্ত লেখা সেই ঘড়িতে। বিস্মিত তরিকুল ভাবে, এত নিখুঁত একটা জগতে এত বড় ত্রুটি রয়ে গেল কী করে! তবে বুদ্ধিমান তরিকুল এবার আর ত্রুটি নিয়ে হইচই করে না। সে তার কন্যার হাত ধরে রাখে শক্ত করে।
১০ নভেম্বর ২০১৯