ব্যর্থ প্রেমের গল্প : অপূর্ণ প্রেম

দীর্ঘ ছুটি শেষে আজ লাবণ্য ও অমিতের দেখা হতে যাচ্ছে, অমিত প্রতিবার দেরি করে বের হলেও আজ একটু তাড়াহুড়ো করে বেরিয়েছি; নীলাভ একটা পাঞ্জাবি গায়ে একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে কদমতলায় অপেক্ষা করছে। প্রতিবার লাবণ্য আগে থেকে অপেক্ষা’র প্রহর গুনলেও আজ ওর আসতে অনেক দেরি হচ্ছে!

অবশেষে লাবণ্য অনেকটা অগোছালো অবস্থায় রিক্সা থেকে নামল, লাবণ্যের মুখটা আজ ফ্যাকাসে হয়ে আছে, চোখ তার যেন শত শতাব্দীর নীল অন্ধকার! সব সময় পরিপাটি ও গুছানো থাকা লাবণ্য আজ অগোছালো! বিষন্ন কেন?

এই প্রশ্ন অমিতকে খুব বিচলিত করে তুলল! কি হয়েছে তোমার? লাবণ্য কোনো উত্তর না দিয়ে বলল চন্দ্রবিন্দু ক্যাফেতে চল, তোমার সাথে কথা আছে। হঠাৎ লাবণ্যের মাঝে এত পরিবর্তন অমিতের ভেতর ভয় সৃষ্টি করে! বসা মাত্রই জিজ্ঞেস করল তোমাকে এমন লাগছে কেন?

লাবণ্যের চোখ অশ্রুতে টলমল করছে, কিছু একটা বলতে চেয়েও বলতে পারছে না: মৃদুস্বরে কাঁপা গলায় বলল তোমার আমার প্রণয় হয়তো ঈশ্বর লিখেনি! অমিত কিছুটা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল হয়েছে টা কি? এবার লাবণ্য আর না বলে থাকতে পারল না, কান্না জড়িত কন্ঠে বলল বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে! ছেলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আমি তোমার কথা বলেছি; বাবা কোন অবস্থায় বেকার ছেলের সাথে আমাকে বিয়ে দিবেনা! আমি উনাকে কোনভাবেই রাজি করতে পারিনি! কতবার বললাম জীবন নিয়ে একটু সিরিয়াস হও, বাস্তবতা নিয়ে ভাবো; তুমি আমার কথা শুনলেই না, এখন আমি কি করবো? আমি নিরুপায়, আমাকে ক্ষমা করে দিও!

কথাগুলো শুনে অমিতের মাথায় যেন আকাশে ভেঙ্গে পড়ল, বেকার প্রেমিকের শত প্রচেষ্টা ও ভালোবাসা আজ ম্লান হয়ে গেছে, বোবার মত লাবণ্যের দিকে তাকিয়ে আছে; মনে হচ্ছে শব্দ বোমের আঘাতে কণ্ঠস্বর হারিয়েছে: চোখের কিনারা বেয়ে অশ্রু গড়াচ্ছে আর অপলক দৃষ্টিতে লাবণ্যের পুষ্প স্ফুটিত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, এ যেন জন্মের তরে শেষ দেখা! এতদিনের জমানো প্রেম এভাবে নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে এমনটা সে কখনোই ভাবেনি, দুমড়েমুচড়ে যাওয়া হৃদয়ে শুধু বলল নতুন জীবনে ভালো থেকো; সুখে থাকো।

লাবণ্য কিছু বলতে পারলো না, শুধু মাথা নেড়ে সায় দিল, “আমাকে উঠতে হবে” এই বলে অমিতের চিরচেনা প্রেয়সী তাকে রেখে চলে গেল! একটা চাতক যেভাবে জলের আশায় হাঁ করে তাকিয়ে থাকে, না পাওয়ার যন্ত্রনা ও অপূর্ণতার বিষাদ নিয়ে লাবণ্যের পথ পানে অমিত সেভাবেই তাকিয়ে রইল! এজন্যই হয়তো কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন, প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়; হয় নাকি?

লেখক: 
সজীব চন্দ্র দাশ 
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ। 

storiesগল্পপ্রেমের গল্পব্যর্থ প্রেম