খাবারে এমন সব অদ্ভুত রুচি নিয়েই আমাদের মায়েরা পার করে দিচ্ছে বছরের পর বছর। আমি আগে বুঝতাম না, মায়েরা এমন করে কেন? আমি বুঝতাম না, মায়েরা দিব্যি খাবার দাবার নিয়ে মিথ্যে রুচির প্রকাশ ঘটাচ্ছে আমাদের কাছে। আমি বুঝতাম না, স্বামী সন্তানকে সেরা খাবার খাওয়াতে গিয়ে আমাদের মায়েরা ওই পোড়া সবজি, মুরগির পা, মাছের লেজ গোগ্রাসে গিলছে দিনের পর দিন, তাও তাদের অভিযোগ নেই, লোভ নেই, আক্ষেপ নেই। ভালোবাসার মানুষগুলোকে তৃপ্তি নিয়ে খাওয়াচ্ছে এই যেনো তাঁদের নিকট স্বর্গীয় সুখ। কিন্তু যখন মায়েদের এই ছলাকলা বুঝতে পারলাম তখন সন্তান হিসেবে বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠলো।
একদিন আমার প্লেটে তুলে দেয়া মুরগির রানটা তুলে মায়ের প্লেটে দিলা। তাঁর প্লেট থেকে তুলে নিলাম পাখনা, আর গলা। মা কোনভাবেই এগুলো খেতে দিবেন না, আমার জোরজুলুমের চাপে বলেই বসলেন, “এগুলা কি খাবি, মাংস আছে এতে?” আমি বললাম, তাইলে তুমি খাও ক্যান? তাঁর বয়স হইছে, মাংস না খেলেও নাকি সমস্যা নাই। আমিও জেদ ধরে বললাম, “হয় মুরগির রান খাবা, না হলে তরকারি সব পাতিল ধরে ফেলে দিব”। মা খেলেন। সেদিনের পর থেকে মুরগির রানটা মায়ের জন্যই রেখে দেই।
আমাদের মায়েদের কিছুই লাগেনা। তাদের ভালো শাড়ি লাগেনা, খাবার লাগেনা, ঘুম লাগেনা, বিশ্রাম লাগেনা। কিন্তু এই লাগেনা লাগেনা ভাবটা যদি আমাদের সন্তানদের মাঝে দেখে তাহলেই হইছে কাম। খুন্তি, ঝাঁড়ু, চিরুনি, বেলুন যেইটা পায় হাতের কাছে সেইটা দিয়াই ইচ্ছামত মাইর দিতে ভুলে না। আর চলে স্বীকারোক্তি, “খাবি?? ঘুমাবি?? পরবি?? আমার মুখের উপরে আর না করবি?” আর সন্তান বড় হলে তখন মারতে মন চায় না, কিন্তু চিন্তার রাজ্যে বুদ হয়ে যায়, “কি যে হইল ওর, খায় না…ঘুমায় না…ভালো একটা কাপড় পরেনা…”