রোমান্টিক গল্প: ছায়া এসে পড়ে পর্ব- ১৩-১৫

রোমান্টিক গল্প উপন্যাস: ছায়া এসে পড়ে পর্ব- ১৩-১৫

রোমান্টিক থ্রিলার ঘরানার বইটি মধ্যবয়সী পুরুষ তৈয়ব আখন্দকে ঘিরে। জীবন সংসারের প্রতি খানিকটা উন্নাসিক কিন্তু বুদ্ধিমান এ মানুষটা পালিয়ে বেড়াতে চায়। কিন্তু আচমকা টাঙন নদী ঘেঁষা গ্রাম পদ্মলতায় এসে সে আটকা পড়ে চাঁদের আলোয় ঝুলতে থাকা একটা লাশ আর লাবনীর জালে। তৈয়ব নিজেকে বের করে আনার চেষ্টা করে। চলতে থাকে জড়িয়ে পড়া ও ছাড়িয়ে আনার মাঝে এক সমঝোতা।

রোমান্টিক প্রেমের গল্প ও একই সঙ্গে থ্রিলার স্বাদের উপন্যাস ছায়া এসে পড়ে । লেখক ধ্রুব নীল

কুরিয়ারে হার্ড কপি পেতে এই পেইজে অর্ডার করুন

ছায়া এসে পড়ে

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -১  এর লিংক

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -২  এর লিংক

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -৩  এর লিংক

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -৪  এর লিংক

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -৫  এর লিংক

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -৬  এর লিংক

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -৭  এর লিংক

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -৮ ও ৯  এর লিংক

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -১০  এর লিংক

ছায়া এসে পড়ে পর্ব ১১-১২

 

১৩

খুন করার চেয়ে ধামাচাপা দেওয়াটা কঠিন কাজ। তবে তৈয়ব তা নিয়ে অতো চিন্তিত নয়। সে জানে শামীমের অন্তর্ধান রহস্যের তদন্তে নামবে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের লোকজন। তারা ঝরনার কথা জানবে। তৈয়বের কথামতো বরফকলে গিয়ে সেই কিশোরের ইন্টারভিউ নেবে ঘটা করে। তারপর সাইফুল মাস্টারের কাছেও যাবে। ঝরনার প্রেমকাহিনি জানার পর তারা জানবে ঝরনাকে খুন করেছিল এসআই শামীম। এরপর পলাতক আসামি হিসেবে শামীমকেই খুঁজবে পুলিশ। এ খোঁজার চক্র কখনই শেষ হবে না।

কিন্তু তৈয়বের দ্বিতীয় সন্দেহটাই সঠিক প্রমাণ হলো। সাইফুল মাস্টার ভিন্ন কিসিমের লোক। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের আগেই সুরসুর করেসব বলে দিল। তৈয়বের বুদ্ধিতে পাঁচটা মরা শেয়ালের সঙ্গে যে এসআই শামীমকে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল সেটাও বলল। বলার সময় গর্বের ছাপ তার চোখেমুখে। এসআই শামীমকে যে সে খুন করেছে এটা যেন পত্রপত্রিকায় আসে সেই অনুরোধও করলো।

যথারীতি তৈয়বের ডাক পড়লো থানায়। বিপত্তিটা হয়েছে দ্বিতীয়বার থানায় যাওয়ার কথা শুনে মিনুকে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় রওনা দিতে চেয়েছে রেবেকা। হাতেপায়ে ধরে তাকে থামিয়েছে শরবানু। লাবনীও অনুরোধ করেছিল। তার কথায় বিশেষ পাত্তা দেয়নি রেবেকা। তবে রবিউলকে দিয়ে আরেকটা বোতল আনার প্রতিশ্রুতিটা কাজে দিয়েছে। তা না হলে তৈয়ব তার মেয়ের সঙ্গে দেখাটাও করতে পারতো না।

‘এসআই শামীম আর আমি বন্ধু মানুষ। এলাকার সবাই স্বীকার করবে। তিনি রাগের মাথায় আমাকে গ্রেফতার করেছিলেন। আবার ছেড়েও দিয়েছেন। আমি সেদিন গিয়েছিলাম তাকে সাইফুল মাস্টারের ব্যাপারে সতর্ক করতে। ফোন করে বলেছিও। তার সঙ্গে আমার কথাও হয়েছে। তিনি গালমন্দ করেছিলেন আমাকে। কল রেকর্ড করা আছে। তারপরও বলেছিলেন দেখে নেবেন। আর আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। এটা সাইফুল মাস্টার বানিয়ে বলেছে। আমি গিয়েছিলাম বিরামপুরে। ব্যবসা ট্যাবসা একটা করা দরকার। বেকার আর কতদিন থাকবো।’

তৈয়ব জানে, তাকে গ্রেফতার করা হলেও সে জামিন পাবে। না পেলেও ক্ষতি নাই। তবে ভটভটির সঙ্গে যে সে বিরামপুর গিয়ে রাতে ফিরেছিল সেটা প্রমাণ হবে মোবাইল ট্র্যাকিং করে। তারপর তৈয়ব না থালেও সেই ভটভটিওয়ালা তো বলবেই তৈয়ব তার সঙ্গে ছিল সারারাত। সে একটা কিছু বললেই হবে। গাঁজাখোরের কথার দাম কে দেয়!

ওসির সন্দেহ যায় না। সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আরও জানতে চায়। মানুষ সাত ঘাটের পানি খায়। ওসিরা আট-দশ ঘাটের পানি খাওয়া লোক। চেহারা দেখেই খুনি চিনে ফেলে। ঝামেলা করে পাবলিক প্রসিকিউটর। আদালত উকিলের কাছে পুলিশ অসহায়।

কেইস ভালোমতো না জমলে চার্জশিটে নামই দেওয়া যাবে না। তারউপর আজমল সাহেবের মেয়ের জামাই। তবে ঘটনাপ্রবাহের ব্যাখ্যা, কয়েকজন সাক্ষী, রেকর্ড করা কলের কথাবার্তা দেখে ওসির কথার কিছু রইল না। ছাড়া পেল তৈয়ব।

সাইফুল মাস্টারকে কোর্টে চালানের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ফাঁসিও হতে পারে। ঠাণ্ডা মাথার খুন বলে কথা। লোকটার জন্য মায়াও হলো না তৈয়বের। বেকুব লোকের জায়গা নেই তার মনে। জেল খাটার দুদিনের মাথায় তার ভুল ভাঙবে। তখন তৈয়বের কথা না শোনায় নিজের চুল ছিঁড়বে বসে বসে।

 

রোমান্টিক গল্প উপন্যাস

 

তৈয়ব বুঝতে পারছে আগের চেয়ে বেশি গুটিয়ে গেছে সে। পদ্মলতা গ্রামটাকে মনে হচ্ছে আরেকটা ঢাকা। গ্রামের সেই রহস্যময় পরিবেশটা নেই। মনে হচ্ছে ঢাকার চাকরি ছাড়াটাই ভুল হয়েছে তার।

‘এখানে আমি আর থাকতে পারবো না। মিনুরও সমস্যা হচ্ছে। মিস্ত্রি ডাকিয়ে হাই কমোড লাগাতে হয়েছে। কিন্তু আশপাশ খুব নোংরা। ওর স্কুলও খুলবে কদিন পর।’

‘নোংরার মধ্যে বড় হলেই তো ভালো। শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। আমেরিকা যাচ্ছো, সেখানে অল্পতেই হ্যাঁচ্চো হ্যাঁচ্চো করে সবাই।’

‘অস্ট্রেলিয়াও যেতে পারি। চাইলে মেয়ের খাতিরে তুমিও যেতে পারো। অবশ্য তোমাকে আবার দরকার হবে লাবনীর।’

‘আমাকে কারও দরকার হয় নাকি।’

‘ওর বাচ্চা হচ্ছে না। ওর বাচ্চার বাবা হয়ে এখানে শেকড় পুঁতে বসে থাকো। বাচ্চা বড় হবে। আব্বা আব্বা করবে। তারপর মিনুর কথা ভুলে যাবে।’

‘তুমি আমাকে নতুন করে ভালোবাসতে শুরু করেছো নাকি রেবেকা? আগে তো বাসতে না।’

‘হুহ।’

তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে রেবেকা চলে গেলো সিগারেট ধরাতে। বাড়ির ভেতর সিগারেট ধরালে শরবানু বিশ্রী ভাষায় গালাগাল শুরু করেন। যদিও তাকে বিন্দুমাত্র পরোয়া করছে না রেবেকা।

রোমান্টিক গল্প উপন্যাস

 

১৪

‘লাবনী তুমি কি আজকেও তৈয়বের সঙ্গে থাকবা? আমাকে প্রতি তোমার আর একটুও…’

ঋজু হয়ে বসে আছে লোকমান মিয়া। অসম্পূর্ণ কথাটা বলল মৃদু স্বরে। লাবনী ইচ্ছে করেই গলা চড়িয়ে ভেতরের বাসিন্দাকে শুনিয়ে বলল, ‘তোর তাতে কী হারামজাদা? আমার যার লগে মন চায় শুমু। বেশি কতা কবি, তোর ওইটা কাইট্টা ভুনা কইরা কুত্তারে খাওয়ামু।’

জবাব দিল না লোকমান মিয়া। তার চেহারায় ভ্যাম্পায়ারের মতো যন্ত্রণার ছাপ। যে ভ্যাম্পায়ার কিনা অনেক দিন রক্তের স্বাদ পায়নি। রক্ত খাওয়ার মতো ধারাল দাঁতও যার নেই।

লাবনী কথাগুলো রেগেও বলেনি। তার চোখমুখ স্বাভাবিক। পর্দার আড়ালে থাকা লোকমান মিয়ার নতুন বউ মিলিকে শাসাল এবার।

‘হারামজাদি, বেশি খিলখিলাইবিনা। লটকাইয়া দিলে জিব একদম লকলকাইয়া বাইর অইয়া পড়বো। যা আমার বিড়ির প্যাকেট নিয়া আয়।’

‘জি আপা আনতেসি।’

‘আর আমারে আপা ডাকবি না। বড় মালকিন ডাকবি। সতীনের মুখে আপা শুনতে ভালো লাগে না।’

‘জি বড় মালকিন। খিক খিক খিক।’

মেয়েটাকে ধরে চড় মারতে পারলে শান্তি পেতো লাবনী। লোকমান মিয়ার মতো নপুংশক স্বামী থাকতে এতো সুখ কোন দিয়ে আসে মেয়েটার?

 

‘লাবনী, শোনো। কথা আছে।’

‘কী কথা বলেন, আমি বয়রা না। সব শুনি। আস্তে করে বললেও শুনবো।’

সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বসলো লাবনী। বারান্দায় বসা দুজন। লোকমান মিয়ার মুখোমুখি।

‘আমি ঠিক করেছি আমি সব স্বীকার যাবো।’

‘মানে?’

‘মানে আমি থানায় গিয়া বলবো আমি আমার ভাইকে খুন করেছি। কারণ সে আমার বউকে ধর্ষণ করেছিল।’

‘মামলা টিকবে না। কারণ উনি আমারে রেপ করেন নাই। আমি নিজের ইচ্ছায় উনার রুমে গিয়েছিলাম। আদালতে আমি যাইতে পারি। আমি ওসব ডরাই না। আমি বলবো আমি গর্ভবতী হই নাই কারণ উনি ব্যবস্থা নিছিলেন। ব্যবস্থা মানে বুঝেন তো? উনি আমার লগে রং তামাশা করতে আমারে পিল খাওয়াইছেন।’

আহত দেখালো লোকমান আলীকে। পারলে এখনই লাবনীর গলা টিপে ধরেন। কিন্তু তাতে ঝামেলা আরও বাড়বে। নারী নির্যাতন কেইসে পড়বেন। জামিন ছাড়া ছয় মাস জেল খাটতে হবে।

‘আমার বাচ্চা লাগবে বুঝছেন! বাচ্চা না দিতে পারলে পুলিশের কাছে ধরা দেন আর নিজের গলায় দড়ি দেন। আমার কিছু যায় আসে না।’

‘তুমি দিন দিন ডাকিনি হইয়া যাইতেসো।’

‘আমি ডাকিনির চাইতেও ভয়ানক। মা হওয়া কী জিনিস আপনি বুঝবেন না।’

‘আমার অতো বুইঝা কাম নাই। আমি বলবো, তুমি আর আমি মিলে খুন করেছি। রবিউলকেও ডাকা হবে। সে হবে রাজসাক্ষী। আমরা দুজন জেলে যাবো।’

‘প্রমাণ করবেন কী দিয়া? খালি মুখের কথায় কাজ হইবো? আর আমরা দুই জন জেলে গেলে আপনার পেয়ারের মিলি কার কাছে যাইব?’

‘সে যাইব, অন্য কারও কাছে। তোমার মতো। তবে তোমারে ফাঁসানির মতো বহুত কিছু আছে আমার হাতে লাবনী। আমি ফাঁসলে তুমি বাঁচবা না। জেলে তোমারে যাওনই লাগবো।’

হুমকিটা নীরবে হজম করলো লাবনী। তার হিসেবে লোকমান মিয়া এখন মৃত্যুপথযাত্রী। এমন লোকের সব কথা কানে নিতে নেই। লাবনী মনস্থির করে ফেলেছে লোকমান মিয়াকে দিয়ে সে তার খুনের শেষ পেরেক ঠুকবে। আর খুন করার বুদ্ধি দেওয়ার মতো একজন তো তার হাতেই আছে।

 

রোমান্টিক গল্প উপন্যাস

১৫

রেবেকা চলে যাচ্ছে। শরবানু যথারীতি মিনুকে ধরে কান্নাকাটি করতে করতে নারকেল, মোয়া এসব ভরছেন পুরনো একটা বাজারের ব্যাগে। তৈয়ব জানে রেবেকা ওটা সঙ্গে নেবে না। গাড়িতে করে কিছুদূর বয়ে নিয়ে যাবে। তারপর ফেলে দেবে। এ কাজটা যন না করে এ জন্য তৈয়ব বুদ্ধি করে ব্যাগের একেবারে তলায় হাতেভাজা এক প্যাকেট মুড়ি ঢুকিয়ে দিয়েছে।

মিনু বহুকষ্টে নিজেকে শরবানুর হাত থেকে ছাড়াল। এবার লটকে গেলো বাবার গলায়।

‘তুই কি একটা বানর?’

‘হ্যাঁ বাবা। ছোট বানর।’

‘ছোট না তো। বেশ বড়সড় ওজনদার বানর। তোর মা কি তোকে লোহা খাওয়ায়?’

‘আমি চেয়ার টেবিল সব খাই বাবা।’

‘মুড়িগুলো কিন্তু ওই ব্যাগে। তোর মা যেন আবার ফেলে না দেয়।’

‘ফেলে দিলে আমি গাড়ি থামিয়ে তোমার কাছে চলে আসবো।’

‘সেটা তো সম্ভব নয় আম্মা।’

‘আবার কবে আসবো বাবা?’

‘আরেকটু বড় হলে আসবি। তোর যখন শাড়ি পরার বয়স হবে তখন। শাড়ি পরে গ্রামের পুকুর পাড়ে দৌড়াবি। সজিনা গাছের সজিনা পাড়বি।

‘সজিনা কী বাবা?’

‘ইংরেজিতে বলে মরিঙ্গা। বিশাল ওষুধি গাছ।’

‘বাবা কোল থেকে নামবো। মা ডাকে।’

মিনুর কান বেশ খাড়া। তৈয়ব শুনতে পায়নি। রেবেকার মিহি গলার ডাক সে শুনতে পায় না। মিনু পায়। তৈয়বের কেন যেন অতো খারাপ লাগছে না।

বিদায়ঘন পরিবেশ। তৈয়বের মনে হচ্ছে তার চাইতে রেবেকারই বেশি মন খারাপ। রেবেকা শেষমুহূর্তে আবার কোনও ঘটনা ঘটিয়ে বসবে না তো? এটা আবার তৈয়বের অবচেতন মনের ইচ্ছে নাকি? সে চায় রেবেকা থেকে যাক? তা তো হবে না। তৈয়ব চলে যাবে? তাও তো হবে না।

তৈয়বের বিভ্রান্তি ভালো লাগে না। সে মিনুকে কোল থেকে নামিয়ে চট চলে গেলো ছাদে। কাউকে বিদায় দিতে অভ্যস্ত নয় তৈয়ব।

গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার শব্দটা কানে এলো শুধু। সিগারেট ধরালো। ফুঁ দিয়ে কিছু কষ্ট উড়িয়ে দিতে চাইল। পারলো না। দুয়েক ফোঁটা বেরিয়েই গেলো।

 

রোমান্টিক গল্প : ছায়া এসে পড়ে শেষ পর্ব ১৬-২১

 

storiesছায়া এসে পড়েধ্রুব নীল