রোমান্টিক থ্রিলার : ছায়া এসে পড়ে পর্ব ১১-১২

রোমান্টিক উপন্যাস: ছায়া এসে পড়ে পর্ব- ১১-১২

রোমান্টিক থ্রিলার ঘরানার বইটি মধ্যবয়সী পুরুষ তৈয়ব আখন্দকে ঘিরে। জীবন সংসারের প্রতি খানিকটা উন্নাসিক কিন্তু বুদ্ধিমান এ মানুষটা পালিয়ে বেড়াতে চায়। কিন্তু আচমকা টাঙন নদী ঘেঁষা গ্রাম পদ্মলতায় এসে সে আটকা পড়ে চাঁদের আলোয় ঝুলতে থাকা একটা লাশ আর লাবনীর জালে। তৈয়ব নিজেকে বের করে আনার চেষ্টা করে। চলতে থাকে জড়িয়ে পড়া ও ছাড়িয়ে আনার মাঝে এক সমঝোতা।

রোমান্টিক প্রেমের গল্প ও একই সঙ্গে থ্রিলার স্বাদের উপন্যাস ছায়া এসে পড়ে । লেখক ধ্রুব নীল

কুরিয়ারে হার্ড কপি পেতে এই পেইজে অর্ডার করুন

ছায়া এসে পড়ে

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -১  এর লিংক

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -২  এর লিংক

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -৩  এর লিংক

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -৪  এর লিংক

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -৫  এর লিংক

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -৬  এর লিংক

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -৭  এর লিংক

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -৮ ও ৯  এর লিংক

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -১০  এর লিংক

 

 

১১

মুড়িভাজা দেখাতে মিনুকে নিয়ে বের হলো তৈয়ব। মিনু যেমনটা ভেবেছিল বিষয়টা কেমন কিছু না। সে হতাশ হয়েছে দেখে তাকে নিয়েমাছ ধরতে গেলো তৈয়ব।

বড়শি ফেলে খালে বসে আছে সাইফুল মাস্টার। মাঝে মাঝে চোখের পানি মুছছে।মিনু ব্যস্ত হয়ে পড়লো তার ছোট বড়শি নিয়ে। নিজের হাতে আটা লাগিয়ে একটা পুঁটি মাছও ধরে ফেলল। তার খুশি দেখে তৈয়বের মনে হলো এমন খুশির দৃশ্য দেখার জন্য রেবেকাকে ধরে বেঁধে গ্রামে রেখে দেবে নাকি। লাবনী ঝামেলা করলে তাকে না হয় খুন করে ফেলবে। খুন টুন করা তার জন্য বিশেষ কোনও কঠিন কাজ নয়। ইদানীং মাথায় খুনটুন ছাড়া আর কিছু ঘুরছেও না।

কথা জুড়ে দিল সাইফুল মাস্টারের সঙ্গে। আলগোছে সত্য ঘটনা জানালো তাকে। চোখ মুখ পাথরের মতো করে সব শুনলো সাইফুল মাস্টার। এসআই শামীমের ওপর প্রতিশোধ নেবে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। নিতে চাইলে ফ্রিতে পরামর্শ দেবে তৈয়ব। এক কাজে দুই কাজ। তৈয়বকে নিজের হাতে কাজটা করতে হবে না।

তবে চোখের সামনে এখনও কাউকে খুন হতে দেখেনি তৈয়ব। সেই ইচ্ছেটা পূরণ হওয়ার একটা চান্স দেখা দিয়েছে। সাইফুল মাস্টার হাতের ছিপ পুকুর ফেলে উঠে দাঁড়িয়ছে।

‘আপনি শুধু বলেন কী করতে হবে।’

‘আপনি কিছুদিন প্র্যাকটিস করে নিন। প্র্যাকটিস একটা বড় বিষয়।’

‘কী দিয়া প্র্যাকটিস করবো?’

মিনুর নজর বড়শির ফাৎনার দিকে। এই ভয়াবহ আলাপের কিছুই তার কানে যাচ্ছে না।

‘আপনাকে দেখে মনে হয় মুরগিও জবাই করতে শেখেননি। খুন করার ঠিক আগ মুহূর্তে ফ্রিজ হয়ে যেতে পারেন। নার্ভ উল্টোপাল্টা আচরণ করতে পারে। এর জন্য চাই প্র্যাকটিস। আপনি বরং আজকেই গুনে গুনে দশটা মুরগি আর একটা ছাগল জবাই দিন। গ্রামবাসীকে খাওয়ান। নিজের হাতে জবাই করবেন। প্র্যাকটিস হয়ে যাবে।’

‘ঠিক বলেছেন। আমি মাস্টার হইতে পারি। কিন্তু আপনি গুরু মানুষ। যাই, হাটে যাই।’

‘যান, আমাকেও কিছু কাজ করে রাখতে হবে।’

 

সন্ধ্যায় মিনুকে বাড়িতে রেখে একটা ভটভটি খুঁজতে বের হলো তৈয়ব। ঘাটের দিকে পেয়েও গেলো।মাল নিয় যাবে বিরামপুর। অনেকটা পথ। সেখান থেকে ফিরতে ফিরতে রাত হবে।

ভটভটিওয়ালা মাল বোঝাই করছে। আলাপ জুড়ে দিল তৈয়ব।

‘এইবার বৈশাখি তুফানের দেখা নাই।’

‘হ’।

‘না আইলেই ভালা। তুফান আইলে রাইতের আসর বসে না।’

‘বাইজানের অভ্যাস আছেনি?’

‘তা আছে টুকটাক।’

‘শুকনা নাকি ভিজা?’

‘শুকনাটাই ভালো। ভিজার দাম বাড়তি। তারউপরে আবার এখন মদে ভেজাল মেশায়।’

লোকটার সঙ্গে রাতে গাঁজা খাওয়ার পরিকল্পনা পাকা করে ফেলল তৈয়ব। তৈয়ব ঠিক করেছে লোকটা যত খেতে চায় কিনে দেবে। সকালে উঠে লোকটা যেন ঠিকমতো বলতে না পারে যে তৈয়ব তার সঙ্গে ছিল কি ছিল না।

 

‘বিরামপুর থেকে ফিরবেন কটায়?’

‘রাইত বারোটা তো বাজবো বাইজান। কিসু দিয়া দেন তাইলে। দাম ইদানীং বাড়তি।’

তৈয়ব তার পকেট থেকে পাঁচ শ টাকার নোট বের করতে গিয়ে কিছু খুচরো পয়সা ফেলে দিলো ইচ্ছে করে। লোকটাকে নোট ধরিয়ে নিজের মোবাইল ফোনটাকে সাইলেন্ট করে রেখে দিল ভটভটির তলার একটা চেম্বারে।

 

সন্ধ্যা পেরিয়েছে। বাঁশঝাড়ের দিকে শেয়ালের ডাকাডাকিও শোনা গেছে। মিরাজ আলীর লাশ যেখানটায় ঝুলেছিল রেবেকা সেখানে মদের গ্লাস হাতে ঘুরছে। চুমুক দিচ্ছে অনেক দেরিতে। পাশে আগ্রহ নিয়ে দেখছে লাবনী। বুঝতে পারলো, জিনিসটা আস্তে আস্তে খেতে হয়।

‘লেবু নিবেন আপা? ভালো কাগজী লেবু আছে। অনেক ঘ্রাণ।’

‘নাহ, লেবুতে নেশা কেটে যায়। খাবে তুমি?’

মাথা নাড়লো লাবনী।

গ্লাস হাতে দুজন বসলো বৃক্ষতলায়।

‘রবিউলের কেইসটা কী? সে সত্যিই মানুষ মারে?’

‘সে হইল আপনার হাতুড়ির মতো। পেরেক ঠুকতে কাজে লাগলে আবার চাইলে এক বাড়িতে মালাকুল মউত আইসা হাজির।’

‘মানে?’

‘মানে আজরাইল আইসা হাজির হবে। আজরাইল টেকা নেবে না। রবিউল নেবে। মানুষ বুইঝা টেকা। তার রেট শুরু পঁচিশ হাজার দিয়া। মাঝে মাঝে কমেও করে। তবে তার জন্য তাকে অন্য কিছু দিতে হয়।’

লাবনী বুঝতে পারছে না ব্যাপারটা। রেবেকা বুঝতে পারছে লাবনীকে দুই পেগেই ধরেছে। সে এখন বকবক করতেই থাকবে।

‘তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি কাউকে খুন করিয়েছো।’

‘গোপন কথা। কাউকে বলি নাই। আপনেও বইলেন না কাউকে। বললে আমার জেল ফাঁসি হবে। আমি একা মারি নাই। আমি আর আমার স্বামী মিলে খুন করাইসি। রবিউলকে দেওয়ার কথা পঁচিশ। স্বামীর কাছ থেকে নিলাম পঁচিশ। কাজ করাইসি দশ হাজারে। বাকি পনের হাজার আমার লাভ। হি হি হি। খুন করাইয়া লাভ করসি। হি হি হি।’

‘তোমার স্বামীর সমস্যা কী?’

‘আমার স্বামী খোঁড়া মানুষ। তবে ওই খোঁড়া না। বুঝলেন তো, হি হি।যারে মারসি সে আমার স্বামীর ভাই। মানে আমার ভাসুর।’

‘কেন মেরেছো?’

‘সে ছোঁক ছোঁক করে। আমার লগে এমনে এমনে আকাম করতে চায়। আমারে রেপও করেছে একবার। বলে কিনা, আমার ভাই যা পারে না আমি তা দিবার পারমু। কিন্তু শালার বেটা কথা রাখে না।’

‘তোমার স্বামী তোমাকে বাচ্চা দিতে পারছে না? আবার ভাসুরও বাচ্চার বাবা হতে রাজি না?’

‘হ আমি বিশ্ববেহায়া। আমার মতো নষ্ট মাইয়া এই গেরাম ক্যান, দেশেও আর পাইবেন না। আপনিও ফেইল।’

‘আমি নষ্ট মেয়ে কে বলল?’

‘হে হে। তৈয়বের লগে কাইজ্জা কইরা আপনে আরেকজনের কাছে যান নাই?’

‘তাতে নষ্ট হয়ে গেলাম? একই কাজ তো সেও করেছে।’

‘তা হলে আমি হইলাম কোন দুঃখে?’

‘তোমাকে আমি নষ্ট বললাম কখন?’

‘ও, আইচ্ছা। ভুল হইয়া গেসে আফামনি। সরি। আফনের পা দুইখান দেন। পাও ধইরা মাফ চাই।’

‘পা ধরতে হবে না। তবে এসবে তৈয়বকে না জড়ানোই ভালো। শত হলেও ও মিনুর বাবা।’

‘কী করবেন আফনে? টেকা দিয়া আমারে খুন করাইবেন? রবিউলরে ভাড়ায় লইবেন? রবিউলও আমারে মারবো না। তারে খালি কমু… হি হি হি। আমি লাবনী, যা চাই তা পাই।’

‘হুম। দেখতেই পাচ্ছি। সুখেই আছো।’

‘হ। আমার স্বামীর অনেক টাকা। কিন্তু কপালে সুখ নাই। কপালের সুখ আসল সুখ। রবিউল গাছিরে ভাড়া করনের বুদ্ধিটা আমি তারে দিসি। কিন্তু পরে আফসোসের শেষ নাই। আমারে বলে কিনা ভাইরে বুঝাইতে পারলে কাজ হইত। হা হা।’

‘সেই দায়িত্ব এখন তৈয়বের? তোমার তো দারুণ সাহস।’

‘আরেকটু দেন।’

‘না, এখন আর না। লিমিট আছে। তুমি চার পেগে গিলে ফেলেছো।’

‘আমার কোনও লিমিট নাই। আমি যা খুশি করবো। আমার একটা বাবু দরকার। তা না হইলে সবাইরে মার্ডার করবো। রবিউল! ও রবিউল!’

‘তৈয়বের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটির সম্পর্ক আমার নেই। সে আসলেআমাকে ভালাবাসেনি। আমি ধরা খেয়েছি। বিয়ে করেছি। বাচ্চা হয়েছে। মিনু তার কলিজার টুকরা। আমি হলাম তার আক্কেল দাঁত। তবে এখন আমার জীবন আমার কাছে। যা মন চায় করবো।’

‘আমার তো মনে হইতাসে, যা মন চায় তা করতে পারতেসেন না।’

কথাটা বলেই আচমকা গ্লাসটা ছুড়ে ফেলে দৌড় দিল লাবনী। বমি করার শব্দ পেলো রেবেকা। হাসলো। তারপর বসে রইল গাছের গোড়ায় চুপচাপ।

ভাবছে, লাবনী ঠিকই বলেছে। তার মন যা চাইছে তা সে করবে না। তার মন চাইছে এ গ্রামে থেকে যেতে। চাইলে আশপাশের দুচারটা বাড়ি সে কিনে ফেলতে পারে। লাগেজভর্তি টাকা।এরপর তৈয়বকে দেখিয়ে দেখিয়ে সে মদ খাবে, গাঁজা খাবে। যার তার সঙ্গে শোবে।

অবশ্য তার আগে আরেকটা কাজ করতে হবে। রবিউল লোকটার সঙ্গে দেখা করতে হবে। খুন করাতে হবে আরিফকে। পঁচিশ হাজারের জায়গায় তাকে অ্যাডভান্স করে যাবে এক লাখ টাকা। কাজ শেষে আরও এক লাখ। তবে শর্ত হলো সহজে মারা যাবে না। ভয়াবহ কোনও কায়দায় মারতে হবে।

মিনুর কথা মনে হতেই গ্রামে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বদলালো। আশপাশে রবিউল আর লাবনীর স্বামীর মতো মতো মানুষরা ঘুরে বেড়াবে, আর সেখানে মিনু থাকবে, এটা হতে দেবে না। থাকুক তৈয়ব তার প্রেমিকাকে নিয়ে।

খটকার বিষয়টা তৈয়বকে জানাবে কিনা ভাবছে রেবেকা। বললে আবার তৈয়ব মনে করবে ওদের সম্পর্কে বিষ ঢালতে চায় রেবেকা। তৈয়বের বুদ্ধি আছে। সে বুদ্ধি খাটিয়ে বিষয়টা বের করুক। লাবনীর কাছে যে সে একটা স্রেফ বাচ্চা বানানোর যন্ত্র, এটা এখন তাকে না জানালেও চলবে। ফূর্তি চলুক আরও কিছুদিন।

 

 

 

১২

তৈয়বকে সরাসরি গুলি করে মারতে পারলে শান্তি পেত এসআই শামীম। সেটা সম্ভব না আপাতত। বুলেটের হিসাব দেওয়া লাগে। আর কোনো বন্দুক রিভলবারও নেই।

গলা টিপে টুপে মারলেও এক শ’টা ঝামেলা। হাতের ছাপ লুকাতে হবে। তা ছাড়া সে যে সন্দেহের কারণে তৈয়বকে হাজতে ভরেছে এটাও সবাই জানে। খুন করলে সন্দেহের তীর তার দিকেই পড়বে।

সন্দেহের তীর আবার সবসময় সোজা পথে চলে না। তীর ঘুরে গিয়ে ঝরনার দিকে চলে যেতে পারে। তৈয়ব যেভাবে তাকে পেঁচিয়ে ধরেছে তাতে ধরা পড়তে দুই মিনিট লাগবে। তারচেয়ে রবিউলকেই ভাড়া করা যায়। রবিউলের মতো কিছু লোক হাতে থাকলে ভালো।

তৈয়ব আবার কোন এক স্কুল মাস্টারের চোখের পানি মোছার কথা বলেছিল। সে-ই কি তবে ঝরনার সেই সাইফুল মাস্টার? গোপনে ঝরনা যার সঙ্গে প্রেম করে বেড়াতো?

 

ঝরনা খুন হওয়ার আগের রাতে যা ঘটেছিল।

উঠোনে গম্ভীর মুখে মোড়া পেতে বসেছে এসআই শামীম। সামনে চেয়ারে বসা ঝরনা। এসআই শামীম নিজের প্রতিভায় নিজেই অবাক।

চেহারাকে কঠিন করে কোনও ভণিতা না করে বলে ফেলল, ‘শোনো ঝরনা, তোমাকে আমার ভালো লাগে না। এই দুনিয়ার কাউরেই আমার ভালো লাগে না, পরীকে ছাড়া। পরীকে তুমি চিনবা না। এক মামলায় পরিচয়। বুদ্ধিমতি মেয়ে। তোমার মতো বোকাসোকা না।’

এরপর মুহূর্তের নীরবতা। ঝরনা বেগম বলল, ‘ঘটনা কি সত্য? প্রমাণ করতে পারবেন?’

প্রমাণের অংশটা তৈরিই ছিল শামীমের। পকেটের মোবাইল বের করে ছবি বের করে দেখালো।

‘আমাদের দুই জনের একসঙ্গে ছবি নাই। কারণ আমার ধারণা তুমি আমার মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করো।’

‘সেটা তো আপনিও করেন।’

ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে দেখে এসআই শামীম কেশে গড়া ঝেড়ে নিল। তারপর বলেই দিল, ‘ঝরনা বেগম। আমি শান্তিপূর্ণভাবে তোমাকে ছেড়ে দিতে চাই। কোনও ঝগড়াঝাঁটি না। পয়সাপাতি আমার কিছু আছে। চাইলে কিছু দিতে পারি। কিন্তু তোমার সঙ্গে সংসার করতে পারবো না। জোর করে ভালোবাসা টালোবাসা হয় না।’

‘ঠিক আছে। সমস্যা নাই। আমিও সাইফুল মাস্টারকে বলি বিবাহের ব্যবস্থা করতে। আপনি কাজী ডেকে আগে তালাক দেন আমাকে। তারপর আমি আর সাইফুল বিয়ে করে চলে যাব। আপনাকে কোনও টাকাটুকা দিতে হবে।’

পরের ত্রিশ সেকেন্ড মুখে আর কথা ফোটেনি শামীমের। অভিনয় করতে গিয়ে সত্যি সত্যিই মুখ পাথর হয়ে গেলো তার। পরী নামে যার ছবি সে দেখিয়েছে সে আসলে তামিল ছবির মেকআপ ছাড়া নায়িকা। কিন্তু ঝরনার সাইফুল মাস্টারটা কে? শামীম বিড় বিড় করে বলল, ‘কতদিন ধরে চলতেসে?’

‘যতদিন আপনার চলতেসে, আমারও ততদিন। আপনার কি ধারণা আমি বুঝি না? আমারে আপনি এক মিনিটও সময় দেন না। আমি তো আপনার দাসিবান্দি না। আমারও জীবন আছে। সাইফুল মাস্টার আমারে অনেক পছন্দ করে, আমি বুঝি। লোকটা সোজা। মুখে কিছু বলে না।’

‘আমার বউ জেনেও করতো?’

‘তার দোষ নাই। আমিই তারে সরাসরি বলেছিলাম, আপনাকে আমার বড়ই পছন্দ। কিন্তু বিয়ে করা বউ আমি। কেমনে কী করি। এখন তো আপনার একটা গতি হইসে। আমারে মুক্তি দেন তাইলে।’

এসআই শামীম রাতে প্ল্যান ঠিক করে ফেলে। মুক্তি দেওয়ার প্ল্যান। চিরতরে মুক্তি। খুনটা করে সাইফুল মাস্টারকে ফাঁসাতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু সে তাকে চিনতেই পারছে না। এদিকে ঝরনাকে মেরে ফেলার জন্য রাতেই হাত নিশপিশ করতে থাকে তার। পকেট থেকে ফোন বের করে চলে যায় পুকুর পাড়ে। ফোন করে তৈয়বকে।

 

তৈয়ব যে এত সহজে তাকে ধরে ফেলবে ভাবেনি শামীম। এখন উপায় নিয়ে ভাবছে। রবিউলও একটা মুর্খ। হাজতে মেরে ফেললে রবিউলকেও সরাসরি এনকাউন্টারে দিয়ে দেওয়া যেত। সেটা করেনি। হারামজাদার হাতের জোর নাই।

রাত এগারোটা। উঠোনে বসে একের পর এক সিগারেট খাচ্ছে এসআই শামীম। ফোন করলো তৈয়ব।

‘এসআই শামীম?’

‘বল হারামজাদা।’

‘গালিগালাজ করেন কেন শুধু শুধু। আপনার মঙ্গলের জন্য ফোন করেছি। আমার সঙ্গে সাইফুল মাস্টারের দেখা হয়েছিল বাজারে। তার মাথা গরম হয়ে আছে। তাকে কে যেন বলেছে আপনি তার পেয়ারের ঝরনাকে খুন করেছেন। সে এখন বদলা নেবে।’

‘সে তোকে বলেছে?’

‘সে আমাকে বলেছে, কারণ সত্যটা আমি জানি। ঝরনা যেদিন মারা যায় সেদিন তারে আমি চোখের পানি মুছতে দেখছি। গ্রামের এক বিবাহিতা মেয়ের জন্য অন্য পাড়ার স্কুল টিচার চোখ মুছবে কেন?’

সাইফুল মাস্টারের চোখ মোছামুছির কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল এসআই শামীম। সাইফুলকেই এখন খুন করার জন্য মাথায় রক্ত চড়ে আছে।

‘আপনি খুনটুন করলেও আপনি হইলেন পুলিশ মানুষ। গ্রামের দরকার আছে আপনাকে। সাবধানে থাকবেন।’

লাইন কেটে দিল তৈয়ব।

 

এক ঘণ্টা পর। রিভলবার বালিশের পাশে রেখে শোয় শামীম। আজ একবার হাতে রাখছে, আরেকবার টেবিলে। আরেকবার রাখছে বালিশের কভারের ভেতর। তার ধারণা, আজ রাতেই একটা কিছু ঘটাবে। সেটা তৈয়বই ঘটাবে। সে ভয়ানক চালাক। অতি চালাকের গলায় দড়ি। তৈয়ব নিজে তার গলায় দড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শামীমের মনে হচ্ছে অতিচালাক তৈয়ব সেই দড়ি শামীমের গলাতেই পরাবে।

সাইফুল মাস্টার লোকটা এলে তাকে গ্রেফতার করবে নাকি মেরে ফেলবে ভাবছে শামীম। ঝরনার মার্ডার কেইসে ফাঁসানো যাবে না। তৈয়ব ঘোল খাইয়ে ছাড়বে। সাইফুল মাস্টারকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে লাশ গুম করে ফেলতে হবে।

তাকে না মারতে পারলে প্রতিশোধটা ঠিক ষোলোআনা হচ্ছে না। এক আনা ঘাটতি থাকলেও মনে অশান্তি। অশান্তি নিয়ে বাঁচা মুশকিল।

 

‘ব্লাইন্ড স্পট বলে একটা বিষয় আছে। জানেন তো?’

চমকে ওঠার কারণে ভালোই বিব্রত হয়েছে শামীম। পুলিশ হয়ে এভাবে নিরীহ নিরস্ত্র এক লোককে দেখে আঁতকে ওঠার কারণ নেই। হুট করে মনে করতে পারলো না রিভলবারটা শেষ কোথায় রেখেছিল। বালিশের তলায় নেই। থাকলে বালিশটা ফুলে থাকতো। টেবিলে দেখতে পাচ্ছে না। আর কোথায় রাখে সে।

‘মানুষের চোখ মুরগির মতো না। এক দিকেই দেখতে পায়। আবার ধরুন মাছির কথা। চার-ছয় হাজার চোখ। যে দিক দিয়ে যাই আসুক সব দেখে। আমি আপনার পেছন পেছনেই ছিলাম। ব্লাইন্ড স্পট ক্যালকুলেশনটা আমি ভালো পারি। ম্যাজিক শিখেছিলাম একবার। তখন এটাও শিখি। আপনি ঘরে ঢুকলেন। আমি নিঃশব্দে আপনার পেছনে ঢুকে এক কোনে চলে গেলাম। আপনি কোন কোন দিকে তাকাবেন, সব আমার জানা। আমিও সেই হিসেবে নিজের অবস্থান বদলালাম। খালি পায়ে এসেছি তাই শব্দ পাননি।’

‘তোকেই আগে খুন করবো শালা। তারপর ওই মাস্টার।’

‘আমিও এ জন্যইএসেছি। নিজের চোখে খুনখারাবি দেখা হয় নাই। কৌতুহলী মন। সব দেখতে চায়। ঠিক না সাইফুল ভাই?’

তৈয়বের অবস্থান নিয়ে শামীমের চোখ এতই ব্যস্ত ছিল যে সে আরেকটা ব্লাইন্ড স্পট মিস করেছে। পেছনে দাঁড়িয়েছিল সাইফুল মাস্টার। মন নরম লোক। মুরগিও জবাই করতে পারে না এমনিতে। সে কিনা অবলীলায় পেছন থেকে ধারালো ছুরির পোঁচ দিয়ে দিল তাগড়া এক যুবকের গলায়। আবার চোখ হা করে তাকিয়ে দেখছেও, ফিনকি দিয়ে রক্ত ছিটকে পড়ার দৃশ্য। সেও মনে হয় খুন হতে দেখেনি কাউকে।

 

ছায়া এসে পড়ে পর্ব- ১৩-১৫

 

storiesউপন্যাসগল্পছায়া এসে পড়েধ্রুব নীলরোমান্টিক উপন্যাসরোমান্টিক থ্রিলার