আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)
ami tumi se natok full story
দৃশ্য ১১ থেকে দৃশ্য ২০
আমি তুমি সে দৃশ্য ১ থেকে দৃশ্য ১০
দৃশ্য- ১১।
দিন। মডেলিং এজেন্সির অফিস। শিরিন, রিসিপশনিস্ট, লোক-১, একজন কড়া মেকাপ দেওয়া মহিলা।
শিরিন একটা অফিসের ভেতরে ঢুকলো। কেউ নেই। রিসিপশনিস্ট তাকে আগাগোড়া দেখলো। শিরিন তার হাতে খাম ধরিয়ে দিল। রিসিপশনিস্ট ফোনে কাকে যেন কী বললো।
রিসিপশনিস্ট: এই নিন ফর্ম। এটা আমাদের নিজস্ব কিছু টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন। পড়ে এখানে সাইন করে দিন।
শিরিন দ্রুত সাইন করে দিল।
রিসিপশনিস্ট: পড়ে দেখলেন না।
শিরিন: নাহ, থাক। পড়ার কী আছে।
শিরিনকে বসতে ইশারা করলো। এক মধ্যবয়সী লোক আসলো। তিনিও শিরিনকে আগাগোড়া দেখলেন। ছবিগুলো নিয়ে দেখলেন। মুখের ভাব দেখে মনে হলো তার মোটামুটি মনে হলো।
লোক: চলুন।
শিরিন: জ্বি কোথায়?
লোক: কোথায় আবার ভেতরে। আসুন।
শিরিন: জ্বি। (আমতা আমতা করবে)
লোক: অডিশন দিতে হবে না?
শিরিন: আচ্ছা। একটু পানি খাবো।
রিসিপশনিস্টকে ইশারা করতেই সে পানি এনে দিল।
শিরিন লোকটার সঙ্গে ভেতরে ঢুকলো। ভেতরে কড়া আলোয় তার চোখ ধাঁধিয়ে গেল। আলোর ওপাশে এক মধ্যবয়সী মহিলা। কড়া মেকাপ দিয়ে আছেন। শিরিনকে কাছে ডাকলেন। শিরিন ভয় পাচ্ছে।
মহিলা: তুমি তৈরি তো?
শিরিন: জ্বি তৈরি।
মহিলা লোকটাকে ইশারা করলো। তিনি শিরিনের হাত ধরলেন। শিরিন ইতস্তত বোধ করলেও ছাড়িয়ে নিল না। রিসিপশনিস্ট এসে উঁকি দিয়ে দেখলো। তার চোখে মুখে অশালীন হাসি।
লোকটা তাকে আরেকটা রুমের দিকে ইঙ্গিত পূর্ণ ইশারা করলো। শিরিন এবার হাত ছাড়িয়ে নিল।
লোক: কী ব্যাপার আপনি তৈরি নন?
শিরিন: কীসের কথা বলছেন আপনারা?
লোক: ঠিকাছে আগে ওখানে গিয়ে দাঁড়ান। অডিশন হবে।
শিরিন একটা স্টেজের মতো অংশে গিয়ে দাঁড়ায়।
মহিলা: তোমার নাম বলো, আর তুমি কেন মডেল হতে চাও বলো।
শিরিন: আমি শিরিন সুলতানা।
মহিলা: উহুঁ হয়নি। ঠিক করে বলো।
শিরিন: আ.. আ আমি শিরিন সুলতানা।
লোক: উফফ। হচ্ছে না।
মহিলা: আমরা তোমার নাম জানতে চেয়েছি মেয়ে। তুমি কোথা থেকে এসেছো সেটা। তুমি তোমার নাম কী রেখেছো বা রাখবে সেটা বলো।
শিরিন: (বিব্রত। ঠোঁট কামড়ে ভাবলো কিছুক্ষণ। এরপর ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলো।) আমি শাইরিন, শুধু শাইরিন। আমি ঢাকায় থাকি, ঢাকায় বড় হয়েছি। ঢাকাতেই পড়াশোনা। তবে আমি নিজে ঢাকা থাকতে চাই না। আমি প্রকাশ করতে চাই। আমার ভেতরের আমিটাকে আমি মেলে ধরতে চাই। আমি পাখি হতে চাই.. আমি স্বাধীন হবো.. আমি এখানে মডেলিং করতে আসিনি। আমি আকাশে উড়তে এসেছি।
লোক: ব্রাভো। তো নিজেকে প্রকাশ কিভাবে করবে শুনি! হে হেহে।
শিরিন: আমি.. আমি..।
মহিলা: তুমি.. তুমি.. কী। কতটুকু কী করতে পারবে তুমি? কতটুকু যেতে পারবে মেয়ে শুনি।
শিরিন: আপনারাই বলুন।
লোক: আপনাকে যদি আমার সঙ্গে বিছানায় যেতে বলি যাবেন? মিস.. শাইরিন?
শিরিন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।
শিরিন এগিয়ে এসে তার সাইন করা কাগজটা কেড়ে নেবে লোকটার হাত থেকে। ছিড়ে কুচি কুচি করে ফেলবে। লোকটা হাসবে।
লোক: হাহাহা। তুমি কি ভেবেছিলে এখানে এসব লেখা ছিল? এসব কথা কেউ চুক্তিপত্রে লিখে? তোমার মাথায় এই বুদ্ধিটুকুও নেই?
শিরিন কিছুটা বিভ্রান্ত হলো।
লোক: ব্যাপারটা হলো তোমার অ্যাটিচুড পরীক্ষা করলাম আমরা। এত অল্পতে রিয়েক্ট করলে তো এই লাইনে তুমি কিছুই করতে পারবে না।
শিরিন: কিন্তু..।
মহিলা : (শিরিনকে ডাকবে): এদিকে এসো মেয়ে। এদিকে এসো।
শিরিন এগিয়ে যাবে। মহিলা তার হাত ধরবে। উঠে এসে চেহারা দেখবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। পাশের আরেক লোকের দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি হাসবে। শিরিন ওই মহিলার হাত সরিয়ে দেবে।
শিরিন: আমি আসি।
মহিলা: (টেনে টেনে কথা বলবে) তুমি বরং আরও ভেবে দেখো। তা…র..পর যদি আসতে চাও.. মানে যদি আমাদের শর্ত মেনে আসতে চাও.. সুপারমডেল হতে চাও.. তাহলে ফোন দিও। কোনও জোরাজুরি নেই কোথাও। সব তোমার ইচ্ছের ওপর নির্ভর করছে মেয়ে। স..ব তোমার ইচ্ছে। তুমি চাইলেই আকাশের তারা হতে পারো, আবার চাইলে চাকরি খুঁজে খুঁজে হয়রান হতে পারো, কারও ঘরের গৃহিনী হতে পারো। সারা জীবন কাটিয়ে দিতে পারো অন্যের জন্য রান্না করে করে। হা হা হা হা।
শিরিন দ্রুত বেরিয়ে যাবে।
আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)
ami tumi se natok full story
প্রথম খণ্ড দৃশ্য ১১ থেকে দৃশ্য ২০
দৃশ্য-১৩।
আউটডোর। ভার্সিটি। দিন। জেরিন, তার বান্ধবী মিতু, নাভিদ।
জেরিন ভার্সিটিতে মন খারাপ করে বসে আছে। সঙ্গে তার বান্ধবী মিতু।
মিতু: হুমম… সমস্যা গুরুতর। কিন্তু ওর ভাব দেখেও কি বোঝার উপায় নেই? তুই সরাসরি জানতে চা।
জেরিন: চাই তো… কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারি না।
মিতু: আর না হয় দেখ, অন্য কিছুতে ইনভলব হতে পারিস কিনা।
জেরিন: সেটা সম্ভব না।
মিতু: আর একটা কাজ করে দেখতে পারিস, ওকে গিয়ে বল, তোর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এরপর এক সপ্তাহ যোগাযোগ করবি না।
জেরিন: সেটাও হবে না। ও এটা নিয়েও মজা করবে।
নাভিদ রিকশা থেকে নামলো। তার হাত এখনও কাঁধের সঙ্গে বাঁধা।
নাভিদ মিতুকে: হাই বেইব…। লুকিং কুল।
মিতু: জ্বি দুলাভাই..ভালো আছেন?
জেরিন বিব্রত।
নাভিদ: ওয়াও.. তোমার বড়বোন আছে জানতাম না তো। কোথায় উনি?
মিতু ইশারায় জেরিনকে দেখাবে। জেরিন খেয়াল করবে না। জেরিন তার ব্যাগ থেকে কাগজপত্র বের করবে।
জেরিন: এই নাও। তোমার পেপার।
নাভিদ: এই না হলে বন্ধু! নিজের বউও এত কিছু করবে না।
মিতু: বউ বানিয়ে ফেললেই পারিস। সারাদিন ঘরে বসে তোমার টার্ম পেপার বানিয়ে দেবে।
নাভিদ: না না.. লস হয়ে যাবে তাহলে। এমনিতেই তো পাচ্ছি। হেহেহে।
জেরিন কী যেন ভাবছে। নাভিদের হাত ধরলো আচমকা। কিছু বলতে গিয়েও পারলো না। মিতু আস্তে আস্তে উঠে চলে গেল।
নাভিদ: কী হলো!
জেরিন: তোমার সঙ্গে একটু কথা ছিল।
নাভিদ: কী কী কথা।
জেরিন: তোমাকে এমন খুশি দেখাচ্ছে কেন? পূর্ণতার সঙ্গে কিছু হয়নি তো? ও তো এখন তোমাদের বাসায়। তোমার তো ঈদ লেগেছে।
নাভিদ: এই কথা?
জেরিন: না এটা না। চলো। কোথাও যাই।
জেরিন রিকশা ডাকছে।
জেরিন: এক ঘণ্টা ঘুরবো। যাবেন?
নাভিদ: কী আজব, এক ঘণ্টায় রিকশায় বসে কী করবো। কোমার ব্যথা হয়ে যাবে তো।
জেরিন: ওঠো!
নাভিদ: কী মুশকিল।
জেরিন: অনেক কথা আছে আমার। এক ঘণ্টায় শেষ হবে না।
দুজন রিকশায় উঠলো।
দৃশ্য-১৪
নাভিদের বাসা। দিন। ইনডোর। পূর্ণতা। নাভিদের মা।
পূর্ণতা বসে বসে পড়ছে আর ভাবছে। উঠে দেখলো নাভিদের মা ঘুমুচ্ছে। সে পা টিপে টিপে নাভিদের রুমে ঢুকলো। নাভিদের ড্রয়ার ঘাঁটলো কিছুক্ষণ। এরপর নাভিদের শার্ট নিল একটা। শার্টের ঘ্রাণ নিলো। শার্টটাকে খানিকটা বুকে চেপে ধরে আবার রেখে দিল জায়গামতো।
রুম থেকে বের হতে গিয়েই নাভিদের সঙ্গে ধাক্কা খেলো পূর্ণতা। ভয় পেয়ে খানিকটা ইচ্ছে করেই নাভিদকে জড়িয়ে ধরলো। নাভিদ তাকে জোর করে ছাড়িয়ে নিলো। নিজের হাত দুটো পেছনে নিয়ে এমন ভাব করলো যেন একটা কিছু গোপন করতে চাইছে।
নাভিদ: তুই একদম বেড়ে গেছিস। কী চুরি করতে ঢুকেছিস শুনি!
পূর্ণতা: চুরি তো করতেই দিলে না।
নাভিদ: মানে কী! কী নিয়েছিস দেখি?
নাভিদ পূর্ণতার হাত ধরে টানাটানি করলো কিছুক্ষণ।
পূর্ণতা: খালা!
নাভিদ হাত ছেড়ে খানিকটা বিব্রত হলো। পূর্ণতা দুষ্টুমির হাসি দিয়ে চলে গেল। আবার এক দৌড়ে ফিরে এলো।
পূর্ণতা: খিদে লাগলে বলো। আজ পুডিং বানাবো।
নাভিদ: (রেগে গিয়ে) না পুডিং না.. আমার হালুয়া খেতে ইচ্ছে করছে! গরুর মাংসের হালুয়া।
পূর্ণতা চলে গেলো।
নাভিদের মা ছুটে এলেন।
নাভিদের মা: কী হয়েছে কী হয়েছে! কাকে হালুয়া বানাবি!
নাভিদ: ওই পেত্নিটাকে।
নাভিদের মা: কিন্তু আমি তো শুনলাম হালুয়া আর গরুর মাংসের কথা। শুনেই তো খিদে খিদে লাগছেরে। পূর্ণতা..ও পূর্ণতা.. দেখতো কিছু করা যায় কিনা। আর হ্যাঁ ভালো কথা জেরিনের বাবা আর ফুপুকে আসতে বলবি।
নাভিদ: উনাদেরকে কেন?
নাভিদের মা: আমি আর বসে থাকতে রাজি না বাপু। খেলা ফাইনাল করে দিতে হবে। যত তাড়াতাড়ি পারি। তোর বাবার ব্যাংকে টাকা রেখে গেছেন। তোর হাতে সেটা দিলে তুই নষ্ট করে ফেলবি। জেরিন বুদ্ধিমান মেয়ে। ও একটা কিছু করবে ওটা দিয়ে।
(পূর্ণতা দেয়ালের আড়ালে থেকে কান খাড়া করে শুনছে। তার চোখে রাগ আর কষ্ট)
নাভিদ: কিন্তু মা.. আমি একশবার বলেছি, আমাদের মধ্যে শুধু বন্ধুত্ব। আর কিচ্ছু নেই। ওকে দেখে এরকম মনে হয়। ও একটু কেয়ারিং, কিন্তু আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের বাইরে কিছু নেই। আমি একশবার বলেছি! আর আমি খুব তাড়াতাড়ি ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছি। টাকা লাগবে.. টাকা দাও।
নাভিদের মা: একশ দশবার তো আর বলিসনি। সে যাক। তোর বাবা মারা যাওয়ার সময় কিন্তু আমাকে কানে কানে এই জেরিনের কথাই বলে গিয়েছিল। সেই ছোটবেলা থেকে তোদের একসঙ্গে দেখে আসছি। এখন কী করে অন্য কিছু ভাবি। আর ওকে বিয়ে না করলে তোকে এক টাকাও দেব না। তোকে পথে পথে ঘুরতে হবে। ভেবে দেখ!
নাভিদ: এটা আমার লাইফ মা, সিনেমা না! আমার মাথা খারাপ করে দিও না। সব ছেড়েছুড়ে চলে যাব বলে দিলাম!
নাভিদের মা: জেরিনের সঙ্গে তোর বিয়ে হবে এটা আমার ফাইনাল কথা। দরকার হয় জেরিনকে বলবো তোকে যেন তুলে নিয়ে যায়। আর যদি ছেড়ে ছুড়ে চলে যেতে যাস, তো ভালো কথা, এক কাপড়ে বের হবি, একটা শার্ট গেঞ্জিও নিতে পারবি না সঙ্গে। সবকটা জেরিন কিনে দিয়েছে তোকে। এটা মনে রাখবি।
নাভিদ: (রাগ করে গায়ের শার্ট খুলে ফেলবে) এই নাও! ধর! ওকে ফেরত দাও গিয়ে। দরকার হয় খালি গায়ে বের হবো!
(পূর্ণতা উঁকি মেরে দেখবে। নাভিদ পূর্ণতাকে দেখে তাকে ইশারায় শাসাবে। নিজের রুমে ঢুকে যাবে নাভিদ।)
নাভিদের মা শার্টটা শুঁকে নাক কুঁচকে ফেলবে। ওয়াশিং মেশিনে ফেলবে ওটা।
(পূর্ণতা কিছুটা খুশি। সে তার রুমে গেল। বিছানায় শুয়ে ভাবছে)
পূর্ণতা: (মনে মনে) ওই হতচ্ছাড়ির হাত থেকে তোমাকে আমি ফিরিয়ে আনবোই। অবশ্য তুমি তো এখনও ধরা দাওনি। দেখা যাবে। হুঁ।
আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)
ami tumi se natok full story
প্রথম খণ্ড দৃশ্য ১১ থেকে দৃশ্য ২০
দৃশ্য-১৫।
ইনডোর। জেরিনের বাসা। জেরিনের বাবা ও নাভিদের মা ফোনে আলাপ করছে। জেরিন আসবে।
জেরিনের বাবা পাঞ্জাবি পরে পায়চারি করছেন আর ফোনে কথা বলছেন নাভিদের মায়ের সঙ্গে।
জেরিনের বাবা: জ্বি জ্বি বেয়াইন সাহেবা ভালো আছি। তা ছেলে কিছু বললো?
নাভিদের মা: ছেলে আবার কী বলবে। জোর করে বিয়ে দিয়ে দেবো।
জেরিনের: কী বলছেন, জোর করবেন কেন? ওর কি ইচ্ছে নেই?
নাভিদের মা: ও ছোট মানুষ এখনও। ওর ইচ্ছা অনিচ্ছার দাম আছে নাকি! আপনি চিন্তা করবেন না বেয়াই সাহেব। আগামী মাসেই তারিখ ফেলবো আমি।
জেরিনের বাবা: হে হে আচ্ছা আচ্ছা। তা জেরিনের কাছ থেকে শুনলাম ওরা দুজন নাকি পার্টনারশিপে কীসের ব্যবসা শুরু করতে চায়।
নাভিদের মা: আমি ওসব জানিনে বাপু। ব্যবসা করুক আর যাই করুক কোম্পানির এমডি কিন্তু আমার বউ মা-ই হবে।
জেরিনের বাবা: অবশ্য ভালোই হলো এক দিক দিয়ে। কোম্পানির পার্টনার থেকে লাইফের পার্টনার হতে কতক্ষণ।
জেরিন আসলো।
জেরিন: বাবা, তোমার কে যেন আছে না.. অফিসে.. মিজান না কী যেন। উনাকে বলো, লাইসেন্সের জন্য কী কী পেপারস লাগবে না লাগবে রেডি করতে।
বাবা: তা তো করবোই। কিন্তু করবিটা কী তোরা।
জেরিন: বিক্রি করবো। মানুষের জিনিস বেচবো। পারলে গোটা দুনিয়াটা বিক্রি করে দেবো ভিনগ্রহের কোনও প্রাণীর কাছে।
বাবা: মানে কী!
জেরিন: অ্যাড ফার্ম দিবো বুঝলে। বিজ্ঞাপন বানাবো আমরা।
বাবা: কিসের বিজ্ঞাপন বানাবি তোরা। আমাকে একটু সুযোগ টুযোগ দিস। এখনও তো বয়স তেমন হয়নি।
জেরিন: না না.. কচি খোকা তুমি। এইজন্য পনের ডায়াবেটিস নিয়ে চুরি করে মিষ্টিও খাও।
বাবা: হে হে হে।
জেরিন: তো, আমার অফিসের জন্য পারসোনাল লোনের কী ব্যবস্থা করলে।
বাবা: আমার টাকা আবার লোন কিসের। আমার তো আর কোনও ছেলে মেয়েও নেই। সবই তো তোর।
জেরিন: সে পরে দেখা যাবে। কিন্তু বিজনেসে ক্যাপিট্যাল মানেই লোন। আগে দেখি কিছু করতে পারি কিনা। পরে দেখা যাবে।
বাবা: সবই তো বুঝলাম। এখন তোর পার্টনারকে রাজি করা।
জেরিন: আমার পার্টনার?
বাবা: মানে নাভিদের কথা বলছিলাম আর কি।
জেরিন: ও আচ্ছা।
বাবা: কেন, ও তোর পার্টনার হচ্ছে না?
জেরিন: বিজনেস পার্টনার তো হচ্ছেই।
বাবা: কেন আর কোনও কিছু।
জেরিন: বাবা গেলাম আমি।
দৃশ্য-১৬
রাত। ইনডোর। নাভিদের বাসা। নাভিদ, পূর্ণতা।
নাভিদ নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। পূর্ণতা ঢুকে পড়লো। সে বেশ সাজগোজ করে এসেছে।
পূর্ণতা: কী করো?
নাভিদ: হাডুডু খেলি।
পূর্ণতা: একা একা কী খেলবে আমাকে সঙ্গে নাও।
নাভিদ: আয়! দেখি কেমন পারিস!
পূর্ণতা: ওই! বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু! খালাকে ডাক দেবো।
নাভিদ: দে না ডাক। দেখি তোর ডাক দিতে ইচ্ছে করে কিনা! নাভিদ উঠে বসলো।
পূর্ণতা: কী করবে শুনি!
নাভিদ: তুই না হাডুডু খেলবি! আয়! যত্তসব বাঁদরামি কথাবার্তা।
পূর্ণতা: (ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে) কী জঘন্য হয়েছে! এটা কোনও ডিজাইন হলো।
নাভিদ: এটা আমার কোম্পানির লোগো। যেমন খুশি তেমন হবে। তোর কী তাতে!
পূর্ণতা: বলা তো যায় না, বলা তো যায় না, ভবিষ্যতে হয়তো আমারও একটা শেয়ার।
নাভিদ: তোর মন আছে? মন মানে হার্ট.. মানে হৃদয়। আছে?
পূর্ণতা: (চোখে প্রশ্ন) হুঁ, তো?
নাভিদ: আর কলা চিনিস? কলা? ব্যানানা? বসে বসে মন আর কলা খা। মানে মনকলা।
পূর্ণতা: ও.. আমি হতে চাইলে দোষ। আর ওই পেত্নিটা যা চাইবে সব পাবে তাই না? আমি কি ওর চেয়ে কম সুন্দরী?
নাভিদ জোরে হেসে উঠলো।
নাভিদ: তোর ধারণা আমি আর জেরিন প্রেম করে বেড়াচ্ছি? হো হো হো।
পূর্ণতা: না তো কী করছো। খালা তো তোমাদের বিয়েটাও ঠিক করে রেখেছে। এর সঙ্গে বিয়ে হলে তো তোমার লাইফ হেল।
নাভিদ: আর ওর সঙ্গে বিয়ে না হলে তুই তো আমার লাইফ হেল করে দিবি। হেহেহে।
পূর্ণতা: (কৃত্রিম রাগ। নাভিদের পাশে এসে বসবে) তোমার কী ক্ষতিটা করেছি আমি বলতো।
পূর্ণতার মন খারাপ হয়েছে বুঝতে পেরে কিছুটা সুর নরম হলো নাভিদের।
নাভিদ: অ্যাই আবার ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলিস না।
পূর্ণতার রাগ বেড়েছে। চোখ টলোমলো।
নাভিদ: আচ্ছা ঠিকাছে যা চা খাওয়া।
পূর্ণতা: আমিতো কেবল শুধু নুডলস আর চা বানানোর জন্য তাই না?
নাভিদ: আরে বাবা জেরিনের সঙ্গে আমার কিছু হয়নি। আর হবেও না। আমরা ভালো বন্ধু এর বেশি না।
পূর্ণতা: তাতে আমার কী?
নাভিদ: আজব তো, তাতে তোর কিছু কেন হতে যাবে?
পূর্ণতা: সেটাই তো.. আমি কোন ছার।
নাভিদ: উফফ.. যথেষ্ট হয়েছে আর প্যাকপ্যাক করিস না। যা নুডলসই বানিয়ে আন। মাংসের কিমা দিয়ে যেটা করিস, সেটা।
পূর্ণতা: পারবো না।
নাভিদ: আমি দেখতে পাচ্ছি, নুডলস বানানোর জন্য তোর হাত নিশপিশ করছে। যা এখুনি।
পূর্ণতা: কিন্তু খালা তো তোমার সঙ্গে…। তুমি যত যাই বলো, তোমাকে ওই মেয়ের সঙ্গেই বিয়ে দিয়ে দেবে। জোর করেই দেবে।
নাভিদ: দিলে দিবে। তোর সমস্যা কী তাতে।
পূর্ণতা: দুনিয়াতে কি মেয়ের অভাব পড়েছে! ওই বাঁদরমুখোকে কেন করতে হবে।
নাভিদ: তুই কিন্তু আমার মাথা ধরিয়ে দিচ্ছিস! দেখ, এর পর কিন্তু আর আমি কাউকে বিয়েই করবো না। আর ও বাঁদরমুখো হলে তুই কী রে! জেরিন এ নিয়ে দুবার মডেলিংয়ের অফার পেয়েছে জানিস? তুই পেয়েছিস একবারও? পারলে পেয়ে দেখা।
পূর্ণতা: তো ওকে বিয়ে করে ফেলো না। তুমিই করো। তোমরা তোমরাই করো। আমি করবো না।
নাভিদ: তোর তো বিয়ের বয়সই হয়নি। সবে ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছিস। এখনও বাক বাকুম বাক বাকুম স্বপ্ন দেখার বয়স।
পূর্ণতা: সেটাও তো ঠিকমতো দেখতে দাও না! শুধু শুধু.. ।
নাভিদ: কী শুধু শুধু কী! বল!
পূর্ণতা: তোমার মাথা। সবই বোঝো আবার ভাব ধরো বয়স এখনও আঠারো হয়নি।
নাভিদ: ঠিকাছে তোর নুডলস খাবো না। আমি চললাম।
পূর্ণতা ঝট করে উঠে দাঁড়াবে। সেটা দেখে মৃদু হাসবে নাভিদ। ল্যাপটপে আবার কাজে মন দেবে।
পূর্ণতা রান্না ঘরে যাবে। মনে মনে ভাববে।
পূর্ণতা: (ভাবছে) তবে কি নাভিদ জেরিনকেই চায়? জেরিন আমার চেয়েও বেশি সুন্দরী। ককখনও না। জেরিনের কাছ থেকে নাভিদের মন সরাতেই হবে।
আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)
ami tumi se natok full story
প্রথম খণ্ড দৃশ্য ১১ থেকে দৃশ্য ২০
দৃশ্য-১৭
ইনডোর। দিন। শিরিনের বাড়ি। শিরিন, মামী ও ফটোগ্রাফার। সাকিব ও মামা পরে আসবে।
শিরিন তার রুমে বসে আছে। ভাবছে। তার চুল এলোমেলো। মেকাপ তুললো ঘষে ঘষে। খাম থেকে ছবি বের করে রূড় চোখে দেখলো। ছবিগুলো ছিড়ে ফেললো একটা একটা করে। শেষ ছবিটা একটু বেশি গ্ল্যামারাস। ওটা ছিড়তে গিয়েও পারছে না শিরিন। তার হাত কাঁপছে।
এমন সময় কলিং বেল বাজলো। শিরিন ছবিটা ছিড়লো না। রেখে দিলো।
দরজা খুলে দিলেন শিরিনের মামী। দরজার ওপাশের মানুষটাকে দেখা যাচ্ছে না।
মামী: কে আপনি?
ফটোগ্রাফার: আমি শিরিনের পরিচিত।
মামী: কিভাবে পরিচিত, আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।
কথা শুনে শিরিন আসবে। ফটোগ্রাফারকে দেখে ভীষণ চমকে যাবে।
শিরিন: আপনি!
ফটোগ্রাফার: জ্বি আমি। আপনার আরও কিছু ছবি ছিল আমার কাছে শিরিন। আপনি নিতে ভুলে গেছেন। তো ওগুলো তৈরি আছে।
শিরিন: ও।
শিরিন ভয় পেল, বিব্রত কিছুটা। মামী একবার তার দিকে তাকায় আরেকবার ফটোগ্রাফারের দিকে।
ফটোগ্রাফার: মনে করে ছবিগুলো নিতে আসবেন। আর হ্যাঁ, ওই ছবিগুলোই কিন্তু সবচেয়ে ভালো এসেছে। আপনার সুযোগ এবার নিশ্চিত। কেউ ঠেকাতে পারবে না।
মামীর চোখে প্রশ্ন।
শিরিন: ঠিকাছে ঠিকাছে! আমি নিয়ে আসবো গিয়ে। আপনি আসুন তাহলে। আমি গেলাম।
শিরিন তার রুমে চলে আসবে। তার মামী দরজা লাগিয়ে তার কাছে যাবে।
মামী: তুমি না সব ছবি নিয়ে চলে এলে। আবার কীসের।
শিরিন: আ.. ইয়ে.. কিছু ছিল বাকি।
মামী: মডেল হবে ভালো কথা। পাড়া মহল্লাকে সেটা না জানালে হয় না? সাকিবকে তার বন্ধুরা তোমাকে নিয়ে খেপায়।
শিরিন: অতটুকুন বাচ্চাকে কেন খেপাবে! আর আমি কী এমন করলাম বলো মামী! আমাকে নিয়ে পাড়া মহল্লাতেই বা কথা হবে কেন?
মামী: তা তো আমি জানি না। তবে যাই করো, বাসার বদনাম যেন না হয়। এই যে স্টুডিওর লোকটা বাসা পর্যন্ত চলে এলো। এটা কিন্তু আমার ভালো লাগেনি।
শিরিন: উনি কেন এসেছেন তা তো উনি বলেই দিয়েছেন। আর বাসার ঠিকানা আমি দিয়ে আসিনি। উনি কার কাছ থেকে ঠিকানা পেয়েছেন তা আমি জানি না।
মামী: আমার এত কিছু জানার দরকার নেই। আমি শুধু বলবো, এমন কিছু করো না যাতে তোমার মামাকে মাথা নিচু করে চলতে হয়।
শিরিন: তুমি ঠিক বলতে চাইছো মামী বলো তো।
মামী: দেখো, এসব মডেল ফডেল কারা হয় ভেবেছো আমার কোনও ধারণা নেই? একেবারে অকাট মূর্খ আমি!
শিরিন: কারা হয় বলো! বলো!
মামী: মুখে রং চং মেখে কী কী সব করে বেড়ায়, কী কী সব পোশাক পরে। ভেবেছো এসব বুঝি না আমরা?
শিরিন: হাহ! হাহ হাহা! এই ধারণা তোমার?
মামী: তো আর কী ধারণা হবে শুনি! কোনও ভদ্রলোকে মেয়ে এসব মডেলিং করতে যায় না।
শিরিন: আজীবন রান্নাঘরে কাটালে তো এই ধারণাই হবে!
মামী: কী! কী বললে তুমি! আমার মুখের ওপর! এত বড় কথাও মুখে আসলো তোমার!
শিরিন: আমার মুখের ওপর আমাকে তুমি পতিতা বেশ্যা বলতে পারলে, আমি পারবো না কেন! আমিতো শুধু বলেছি যে নিজের জীবনটা যেমন রান্নাঘরে কাটিয়ে দিলে তেমনি চাও আমিও আর কিছু না করি। মুখে রং চং মাখবো আমি! তাতে কার কী! আমি মডেল হবো, আমার পছন্দমতো আমার রুচি মতো আমি পোশাক পরবো, যাদের যাদের সমস্যা হবে তারা চোখ বন্ধ করে রাখুক না। আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে তো আমি বলিনি। নাকি আমি সবার চোখে আঙুল ঢুকিয়ে আমার দিকে তাকাতে বলছি।
মামী: ছি! ছি! তোমার সঙ্গে আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। ওই ফটোগ্রাফার কেন বাসায় এসেছিল শুনি!
শিরিন: ওই ফটোগ্রাফারকে কি আমি কার্ড ছাপিয়ে দাওয়াত দিয়ে এনেছি? দোষটা আমার না ওই ফটোগ্রাফারের! ও কেন এসেছে তা ওকে গিয়ে জিজ্ঞেস করো না কেন?
(সাকিব আড়াল থেকে দুজনের ঝগড়া দেখছে। ও তার বাবাকে ফোন দিলো)
শিরিন: আমি তো যাব, গিয়ে জিজ্ঞেস করবো আমার ছবি দেওয়ার জন্য ওকে আমার বাসায় আসতে হলো কেন।
মামী: এ হে হে। খুব সাহসী দেখাচ্ছো নিজেকে। পারলে একটা চাকরি পেয়ে দেখাও না। সেই মুরোদ তো নেই। পারবে তো শুধু ঢং ঢাং করে ছবি তুলতে আর না জানি কী কী সব করে বেড়াচ্ছো।
শিরিন: হ্যাঁ, এটাই সমস্যা তোমার। সরাসরি দেখতে পাওনা তো, তাই ভাবো কী কী সব করে বেড়াচ্ছি। যার মন যেমন, ভাবনাও তেমন।
মামা: কী কী হয়েছে আবার দুজনের।
মামী: তোমার ভাগ্নি, বলে কিনা আমার মন নোংরা, তাই আমি নোংরা কথা ভাবি।
শিরিন: আমি মোটেও এমনটা বলিনি মামী।
মামী: ওই দেখো, এবার আমাকে মিথ্যেবাদীও বানাচ্ছে।
মামা: তোমরা এমনভাবে ঝগড়া শুরু করেছো, মনে হচ্ছে যেন ঘরের ভেতর নাটক সিরিয়াল চলছে। এবার থামো। শিরিন তুই রাতে আমার সঙ্গে বসিস। কথা আছে।
মামী: হুঁ ভালো মতো জেনে নিও যে কী কী করছে, কোথায় কোথায় যাচ্ছে। আর ঘর পর্যন্ত যেন বাইরের লোককে টেনে না আনে, সেটাও একটু বলে দিও।
মামা: আহা! সাকিবের মা! তুমি চুপ করো। শিরিন তুই কোথায় যাচ্ছিলি যা।
মামী: এই নাও করলাম চুপ। এবার খুশি! তবে, বদনামের ভাগিদার হতে রাজি না আমি।
শিরিন চলে গেল তার রুমে। দরজা লাগিয়ে দিল। মামীও রান্নাঘরে চলে গেল।
মামী: (নিজে নিজে) অ্যাঁ, বলে কিনা রান্নাঘরে জীবন কাটিয়ে দিলাম। রান্নাটা করি বলেই তো পেটভরে খাওয়া জুটে, নিজে তো কোনও দিন পেঁয়াজটাও কেটে দিলো না।
শিরিন দরজা খুলে বের হলো। তার হাতে ব্যাগ। কোথাও যাচ্ছে। সাকিব তাকে দেখে এগিয়ে এলো।
সাকিব: শিরিনাপু, আমার জন্য একটা আইসক্রিম নিয়ে এসো।
শিরিন সাকিবের চুলে হাত রাখলো।
মামী: সাকিব! সাকিব!
সাকিব চলে গেলো। শিরিন বিরক্ত হয়ে বের হয়ে গেলো।
আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)
ami tumi se natok full story
প্রথম খণ্ড দৃশ্য ১১ থেকে দৃশ্য ২০
দৃশ্য-১৮
ইনডোর। স্টুডিও। ফটোগ্রাফার শিরিন।
শিরিন স্টুডিওতে ঢুকলো। তাকে দেখে হাসলো ফটোগ্রাফার।
ফটোগ্রাফার: আসুন আসুন। মিস..শিরিন… রাইট।
শিরিন: কী চান আপনি! বলুন কী চান!
ফটোগ্রাফার: চাই তো অনেক কিছুই। কিন্তু আপনিই তো বেশি কিছু দিতে নারাজ।
শিরিন: বাজে কথা ছাড়ুন। কীসের ছবি দিতে এসেছিলেন আপনি?
ফটোগ্রাফার: কেন আপনি তো এসেছিলেন তুলতে। আপনি জানেন না বুঝি কীসের ছবি?
শিরিন: ঝেড়ে কেশে বলুন কী চান আপনি। আপনাকে আমি টাকা দিয়েছি.. আপনাকে আমি..
ফটোগ্রাফার: বলুন বলুন, আমাকে আপনি আর কী কী দিতে পারবেন.. বলুন।
শিরিন: আমি চললাম।
ফটোগ্রাফার: আরে দাঁড়ান দাঁড়ান এত তাড়া কীসের। খেলা তো সবে শুরু।
শিরিন: খেলা! বাজে বকবেন না বলে দিলাম!
ফটোগ্রাফার: এই দেখুন।
ফটোগ্রাফার একটা খাম থেকে ছবি বের করে শিরিনকে দেখাবে। শিরিনের সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ কিছু ছবি। শিরিনকে জড়িয়ে ধরে আছে, চুমু খাচ্ছে এ রকম ছবি। প্রতিটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে শিরিন বেশ আড়ষ্ট।
শিরিন: আপনি আপনি.. ! আপনি!
ফটোগ্রাফার: হে হে হে আমি কী আমি তা জানি। সমস্যা হলো আপনি কী আপনি তা জানেন না। অন্তত এখনও জানেন না। ধীরে ধীরে জানবেন। সবই জানবেন।
শিরিন: এ ছবি আমার চাই না। কিন্তু কিন্তু কে তুললো এ ছবি।
ফটোগ্রাফার: ভয় পাবেন না। কেউ জানে না। ছবিগুলো অটোমেটিকই উঠেছে। শুধু আমি আর তুমি জানি। আর কেউ জানে না।
শিরিন: ছবিগুলো দিয়ে কী করবেন আপনি শুনি?
ফটোগ্রাফার: আমি আর কী করতে পারি। যা করার তুমিই করবে। তোমার ইচ্ছের ওপর নির্ভর করছে।
শিরিন: (ভাবলো কিছুক্ষণ) আপনি স্পষ্ট করে বলুন।
ফটোগ্রাফার: দেখো আমি চাই না ছবিগুলো তোমার পরিবারের হাতে যাক। তারচেয়ে দুজনে একটু, জাস্ট একবার। মানে.. বুঝতে পারছো নিশ্চয়ই।
শিরিন: (আবারও ভাবলো খানিকক্ষণ)
ফটোগ্রাফার: ভাবো.. ভেবে দেখতে পারো। একদিকে মান সম্মান, আরেকদিকে জাস্ট একটা রাত। আর কিছুই না। একটা রাতেরই তো ব্যাপার। অথবা চাইলে এখনই। মানে এখন আমার স্টুডিওতেই চাইলে আমরা।
শিরিন: ঠিকাছে। আমাকে একটু সময় দিন। আমি একটু ভাববো।
ফটোগ্রাফার: এখানে আসলে অত ভাবার…।
শিরিন: আমি তৈরি নই।
ফটোগ্রাফার: ওহ তাই! গুড গুড! তৈরি হয়েই আসো তাহলে। খুবই ভালো হয়। তোমার সব ছবি তোমাকে দিয়ে দেব। আমার কাছে কিসসু রাখবো না, প্রমিজ।
শিরিন: তবে একবার ঠিকাছে? শুধু একবার।
ফটোগ্রাফার: হে হে অবশ্যই অনলি ওয়ান। একবারে যা ইচ্ছে তাই হবে। ঠিকাছে?
শিরিন: ঠিকাছে, আমি আসছি।
ফটোগ্রাফার খুশি। শিরিন চলে গেলো।
দৃশ্য-১৯
দিন। জেরিন নাভিদের দুই রুমের অফিস। ভেতরটা সাজানো গোছানো। প্রথম রুমে রিসিপশন সোফা আর দ্বিতীয় রুমে চেয়ার রাখা। চরিত্র: জেরিন, নাভিদ আর তাদের অফিসের পিয়ন হাসু। নাভিদের পরনে টিশার্ট জিন্স।
জেরিন একটা ঘরের দরজা খুলছে। নাভিদের চোখে কালো কাপড় বাঁধা।
নাভিদ: এ আমাকে কোথায় কিডন্যাপ করে নিয়ে এলে।
জেরিন: আজীবনের জন্য তো আনিনি। চোখ খুললেই দেখতে পাবে। তবে মুক্তি পাবে না।
নাভিদকে ধরে ধরে ভেতরে ঢোকালো জেরিন। তারপর একটা বড় চেয়ারে তাকে ধরে ধরে বসিয়ে দিলো। পাশে আরেকটা চেয়ার রাখা। সেটাতে বসলো জেরিন।
জেরিন: এবার খোলো।
নাভিদ চোখের কাপড় খুললো। চোখ পিটটিপ করে তাকালো। নিজে যে চেয়ারে বসে আছে সেটা দেখলো ভালো করে। সামনের টেবিলে রাখা অফিস স্টেশনারী।
নাভিদ: কার অফিস?
জেরিন: (মজা করে) কার আবার আমাদের! আপনি হলেন আমাদের এমডি সাহেব। জেন মিডিয়া লিমিটেডের এমডি। স্যার কেমন আছেন!
নাভিদ: অ্যাঁ..।
জেরিন: এই নাও তোমার কার্ড। (ভিজিটিং কার্ডের বাকশো থেকে কার্ড দিলো)
নাভিদ: নাভিদ হায়দার। আরে এ তো আমার নাম!
জেরিন: গাধা! তো কি এখানে হাসু মিয়ার নাম থাকবে?
নাভিদ: হাসু মিয়া কে?
জেরিন: একটু পরই আসবে। হাসু মিয়া আমাদের পিয়ন।
নাভিদ: তুমি এতসব করলে কবে! কী আশ্চর্য! কিছুই তো জানি না।
জেরিন: এটা আমার সারপ্রাইজ।
নাভিদ: কিন্তু নাম জেন কেন?
জেরিন: জেরিন আর নাভিদ মিলে কী হয়! গাধা!
নাভিদ: সবই বুঝলাম কিন্তু এই চেয়ারে আমি কেন! এখানে থাকবে তুমি। আমি বাপু একটা কোম্পানিরই ম্যানেজার হতে পারবো। অ্যাড ফার্ম চালাতে পারবো না।
জেরিন: কোন কোম্পানি শুনি?
নাভিদ: টো টো প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি।
জেরিন: একটা লাত্থি মারবো।
হাসু : স্লামালেকুম ম্যাডাম।
জেরিন: শুধু ম্যাডামকে সালাম দিলে হবে? স্যারকে দিতে হবে না? স্যার খেপলে কিন্তু চাকরি নট।
হাসু: স্যারের চেহারা দেইখাই বুঝসি, তিনি অত্যন্ত নরম মনের মানুষ।
জেরিন: তো আমি কি কড়া মনের?
হাসু: জ্বি সত্য। স্যার মানে আপনার বাবা বলেছেন আপনি অত্যন্ত কড়া। কিন্তু এই স্যারকে তো আমি চিনি। তার মতো নরম আর হইতেই পারে না।
নাভিদ: একি! এ তো আসতে না আসতে তেল দেওয়া শুরু করেছে।
হাসু: জ্বি স্যার.. তেলের দাম এখন কমতির দিকে।
নাভিদ: গুড. গুড। অ্যাড ফার্মের জন্য এমনই দরকার। হাসু মিয়া আমাদের কফি খাওয়াও।
হাসু: কফি নাই স্যার। রং চা আছে। দুনিয়ার সব বড় বড় অফিসে দেখবেন রং চা খাওয়ায়। সব কিছুতে বাড়তি খরচ করে, কিন্তু দুধ কিনে না। এ এক বিরাট রহস্য।
জেরিন: আচ্ছা ঠিকাছে ঠিকাছে রং চাই দাও। আর শোনো এসব স্যার ট্যার চলবে না। আমাকে আপা আর উনাকে ভাই ডাকবে।
হাসু: তা ডাকলাম। নো প্রবলেম ম্যাডাম। কিন্তু আপনারে আপা ডাকলে তো আপনার বাবারে খালুজান ডাকতে হয়।
জেরিন: উফ! যাও তো চা আনো।
নাভিদের বিস্ময় এখনও কাটেনি। সে চোখ কুঁচকে জেরিনের ভাবসাব বোঝার চেষ্টা করছে।
জেরিন: তো এই চেয়ারে কিন্তু এসব টিশার্ট জিন্স পরে বসলে চলবে না।
নাভিদ: এটা না আমার অফিস?
জেরিন: হ্যাঁ তো?
নাভিদ: আমার মন চাইলে আমি লুঙ্গি পরে আসবো। তোমার কী!
জেরিন: অ্যাঁ.. এমডিগিরি দেখাচ্ছো আমার সঙ্গে? এক চাঁটি মেরে বসগিরি ছোটাবো। যা বলছি শোনো। কাল আমরা ক্লায়েন্ট হান্টিংয়ে যাব।
নাভিদ: তুমি যাও্। আমি এমডি, আমি এখানে বসে থাকবো।
জেরিন: ওই! ওঠ! ওঠ! চেয়ার ছেড়ে উঠ। দিবো একটা।
জেরিন মারতে এগিয়ে আসবে। নাভিদ অফিসের একটা ফাইল দিয়ে তাকে ঠেকাবে।
অফিসের নানান কাজকর্ম দেখানো হবে। ফার্নিচার এদিক ওদিক করা হবে। ডেস্ক গোছানো হবে। রিসিপশনে একটা মেয়ে এসে বসবে। হাসু মিয়া সব ঝাড়মোছ করবে। নেপথ্যে মিউজিক বা গান।
দৃশ্য-২০
স্টুডিও। ফটোগ্রাফার, শিরিন ও দুজন পুলিশ।
স্টুডিওতে ঢুকলো শিরিন। তাকে দেখে ফটোগ্রাফার হাসলো।
ফটোগ্রাফার: বাহ এখুনি এসে গেলে দেখছি।
শিরিন: হুম এসেছি।
ফটোগ্রাফার: তো ওখানে যাও। দরজাটা লাগাতে হবে তো হে হে।
শিরিন: আমি এসেছি, তবে একা আসিনি।
শিরিন সরে দাঁড়াবে, তার পেছন থেকে দুজন পুলিশ। ফটোগ্রাফার ভড়কে গেল।
শিরিন: তোর মতো জানোয়ারকে উচিৎ শিক্ষা না দিলে সেটা আমার পাপ হবে।
পুলিশ: ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগে আপনাকে গ্রেফতার করা হলো।
ফটোগ্রাফার: কিন্তু কিন্তু, আমি তো কিছু করিনি! আমি তো শুধু কিছু ছবি.. দেখুন অফিসার আপনাদের ভুল হচ্ছে। এই মেয়েটা ভালো নয়। সে আমার সঙ্গে ছবি তুলেছে। বিশ্বাস না হয় দেখুন, দেখুন।
ফটোগ্রাফার আগের ছবির কপি দেখাবে কম্পিউটারে।
পুলিশ: কিন্তু মিস শিরিন আমাদের কাছে যখন লিখিত অভিযোগ করেছেন, আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে। বিচার করবে আদালত। তো অত কিছু আমাদের বোঝাতে আসবেন না। বেশি বাড়াবাড়ি করলে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাব।
ফটোগ্রাফার: দেখুন এই ছবিগুলো দেখুন। এগুলো শুধু উনাকে মানে শিরিন ম্যাডামকে দিতে গিয়েছিলাম।
শিরিন: আপনি আমার পিছু নিয়ে আমার বাড়ি পর্যন্ত গিয়েছেন।
পুলিশ: আর শুধু এই অপরাধেই কিন্তু আমরা আপনাকে অ্যারেস্ট করতে পারি। চলুন!
ফটোগ্রাফার: (শিরিনকে) কাজটা কিন্তু মোটেই ঠিক হলো না। আমার কাছে আরও ছবি আছে তোমার আরো আছে।
পুলিশ: উনার কম্পিউটারটাও জব্দ করো। যা যা ছবি আছে না আছে সব আমদের জিম্মায় থাকবে। আপনিও একটুও টেনশন করবেন না।
শিরিন: আপনাদের কী বলে যে ধন্যবাদ দেব।
পুলিশ: আসলে ধন্যবাদটা দেওয়া উচিৎ আপনাকে। আপনি সাহস করে আমাদের কাছে এসেছেন। এসব বিষয়ে তো কেউ কথাই বলে না। যাই হোক, আপনাকে পরবর্তী কোর্টে যেতে হতে পারে। তৈরি থাকবেন। আপনি সাক্ষী না দিতে গেলে কিন্তু পরে আপনিই হেরে যাবেন।
শিরিন: আমি অবশ্যই আসবো। ওর চূড়ান্ত শাস্তি না দেখে আমি যাব না।
ফটোগ্রাফার: হুহ, দেখা যাবে আদালতে। আমিও তোকে ছাড়বো না। এই বলে দিলাম।
পুলিশ জোর করে ফটোগ্রাফারকে নিয়ে যাবে।