সাতলা
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার একটি ইউনিয়নের নাম হচ্ছে সাতলা যেখানে প্রায় দশ হাজার একর জলাভূমিতে শাপলার জন্ম হয় । বরিশালে যারা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আসে তাদের প্রথম পছন্দের লিস্টেই থাকে এই অসম্ভব সুন্দর শাপলা বিল। ভোর বেলায় যখন শাপলা ফুলগুলো ফুটে যায় এবং পুরো জলাভূমি ভরে যায় লাল শাপলায় তখন এর থেকে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আর কিছু হতেই পারে না। সাতলা ভ্রমনের ক্ষেত্রে অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে সকাল ৯ টার মধ্যে পৌছানোর তা না হলে কিন্তু সাতলায় আসল সৌন্দর্যই উপভোগ করা যাবেনা। সাতলায় গিয়ে একটি নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারেন পুরো বিল আপনার চারদিকে থাকবে অপরুপ ফুটন্ত শাপলা।
শাপলার রাজ্যে যাওয়ার উপর্যুক্ত সময় হচ্ছে আগস্ট থেকে অক্টোবর। সাধারণত এই মাসগুলোতেই শাপলা ফুটে থাকে। বরিশাল সদর থেকে সাতলার দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। বরিশাল নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে সাতলা যাওয়ার বাস সার্ভিস আছে যার মাধ্যমে মাত্র দুই ঘন্টার মধ্যেই পৌছে যেতে পারেন সাতলায়। এছাড়াও বরিশাল থেকে শিকাপুর পর্যন্ত বাসে গিয়ে পরে অটোতে করেও সরাসরি যেতে পারবেন সাতলায়।
আটঘর কুড়িয়ানা
বরিশালে ঘুরতে যাওয়ার জায়গা হিসেবে এই স্থানে আছে এশিয়ার সবথেকে বৃহত্তম ভাসমান পেয়ারা বাজার। ঝালকাঠি, বরিশাল ও পিরোজপুর—এই তিন জেলার সীমানার কাছাকাছি এলাকাজুড়ে প্রায় ২৪ হাজার একর জমিতে পেয়ারার চাষ হয়।এবং দেশে উৎপাদিত মোট পেয়ারার প্রায় ৮০ শতাংশই উৎপাদিত হয় এই অঞ্চলে। সবথেকে আকর্ষনীয় বিষয় টি হচ্ছে নৌকায় ভেসে ভেসেই পেয়ারা বাগান দেখতে পারবেন এবং খেতেও পারবেন। যদি আপনি পেয়ারা প্রেমী হয়ে থাকেন এই ভাসমান বাজার থেকে সুলভ মূল্যে পেয়ারা কিনেও নিতে পারবেন। পেয়ারায় মৌসুমে এই এলাকার প্রধান দুইটি পেয়ারা বাজার আটগড় বাজার ও ভিমরুলী বাজার থাকে রমরমা অবস্থায়। বর্ষায় পানি ভর্তি খালে ভেসে ভেসে সরাসরি গাছ থেকে ছিড়ে পেয়ারা খেতে পারছেন এর থেকে সুন্দর অভিজ্ঞতা কি ই বা হতে পারে।
এই ভাসমান বাজার ঘুরতে যাওয়ার উপযুক্ত সময় হচ্ছে জুলাই, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাস। এ স্থানে যেতে হবে বরিশালে রুপাতলি বাসস্ট্যান্ড থেকে খুলনাগামী বাসে উঠে ঝালকাঠির কির্তীপাশা মোড়ে নেমে যেতে হবে। এরপরে অটোতে করেই সরাসরি যেতে পারবেন পেয়ারা বাগানে।
গুটিয়া মসজিদ
বরিশালের গুটিয়ায় অবস্থিত এই মসজিদ এশিয়া মহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম জামে মসজিদ। বরিশালে ঘুরতে যাওয়ার জায়গা হিসেবে এটি অনন্য। মসজিদটি স্থাপন করেছিলেন উজিরপুরের গুঠিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা এস. সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টু। প্রায় ১৪ একর জমির উপর তিনি ২০০৩ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর এই মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। এই পুরো স্থানজুড়ে রয়েছে একটি বৃহৎ মসজিদ-মিনার, ২০ হাজারের অধিক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ঈদগাহ্ ময়দান, একটি এতিমখানা, একটি ডাকবাংলো, গাড়ি পার্কিংব্যবস্থা, লেক-পুকুরসহ বিভিন্নপ্ রজাতির ফুলের বাগান।
এই মসজিদটি বরিশাল সদর থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দূরে। শহর থেকে সরাসরি গুটিয়ার বাসে, ইজি বাইকে বা অটোতে যেতে পারেন গুটিয়া মসজিদে।
দুর্গাসাগর দিঘী
দুর্গাসাগর জায়গাটি বেশ প্রাচীন ঐতিহ্য ধারণ করে। অবশ্য এখন অনেকটা সংস্কার ও করা হয়েছে জায়গাটি। এই জায়গাটি মূলত ১৭৮০ সালে খননকৃত একটি দিঘীকে ঘিড়েই গড়ে উঠেছে। দিঘী খনন করেছিলেন চন্দ্রদ্বীপ রাজবংশের রাজা শিব নারায়ণের স্ত্রী রানী দুর্গাবতী।তার নাম অনুযায়ী পরবর্তীতে এই জায়গাটির নাম দেয়া হয়েছে দুর্গাসাগর। ভীষণ সুন্দর একটি দীঘি,দীঘির মাঝে ছোট দ্বীপ,দীঘিকে ঘিরে প্রচুর গাছপালা, সুন্দর বসার জায়গা, অতিথি পাখিদের সমারোহ নিয়েই পুরো দুর্গাসাগর।
বরিশাল শহর থেকে দুর্গাসাগর মাত্র ৩০-৪০ মিনিটের পথ। নথুল্লাবাদ বাস টারমিনাল থেকে বরিশাল–বানারিপাড়া বাসে সরাসরিই দুর্গাসাগর নেমে যেতে পারবেন। এরপরে টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হবে দর্শনীয় স্থানটিতে।
লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি
বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী জায়গা গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই জমিদারবাড়ি। বরিশাল সদর উপজেলার লাকুটিয়া গ্রামে অবস্থিত এই জমিদার বাড়ি টি ১৬০০ কিংবা ১৭০০ সালে জমিদার রাজচন্দ্র রায় নির্মাণ করেছিলেন। একসময়ের জমিদারের বাসস্থান এই প্রাসাদ টি এখন অনেকটাই ধংসপ্রায়। দেয়ালগুলোতে জমে রয়েছে শ্যাওলা।প্রাসাদ ভবন টি দুই তলা বিশিষ্ট।প্রাসাদের পাশাপাশি এখানে একটি মঠ,দীঘি, পাঁচটি মন্দির, তিনটি বড় এবং একটি ছোট পুকুর রয়েছে। এই স্থানে ঘুরতে যাওয়ার একমাত্র কারন হচ্ছে প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো ইতিহাস কে অনুভব করা। এছাড়া এর আশেপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বেশ সুন্দর।
লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি বরিশাল সদর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে।বরিশাল শহরের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলে শ্মশান মোড়। সেখান থেকে লাকুটিয়া বাবুরহাটে যাওয়ার জন্য অটো কিংবা মাহেন্দ্র পাওয়া যাবে যা সরাসরি নিয়ে যাবে জমিদার বাড়িতে। এই ছিল বরিশালে ঘুরতে যাওয়ার জায়গা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।