পৃথিবীতে আছে এক বিশাল আয়না। ৪০৮৬ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে ছড়ানো এটি। নিউইয়র্ক সিটির চেয়ে যা কিনা আট গুণ বড়।
বলিভিয়ার সালার দে ইউনি। মূলত পুরো এলাকাটাই একটা লবণের স্তর। এতে যখন পানি থাকে না তখন এটি অজস্র ছয়কোণা স্ফটিকে ভর্তি থাকে। পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যাওয়ার কারণেই তৈরি হয় এমন স্ফটিক। বিশ্বের বৃহত্তম লবণাক্ত সমতল ভূমি এ সালার দে ইউনির একটি অংশে মাঝেমধ্যে পানির স্তর জমে। আর তখনই তৈরি হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় আয়না। আকারে যা ৮০ বর্গমাইলের কম না।
প্রাকৃতিক আয়নাটা যখন তৈরি হয়, তখনই এখানে বাড়ে পর্যটকের আনাগোনা। সুবিশাল আকাশ, মেঘমালা ও দূরের পাহাড়ের পরিষ্কার প্রতিফলন দেখাটা যেন এনে দেয় এক পরাবাস্তব অভিজ্ঞতা।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১ হাজার ৯৯৫ ফুট উঁচুতে এ লবণ লেক। এটি এতটাই স্বচ্ছ ও বিশাল যে, কক্ষপথ থেকে এটি পরিষ্কার দেখা যায়। নাসা তো এ লেকের দিকে স্যাটেলাইট তাক করে সেগুলোর গতিপথ ঠিকঠাক করে নেয়। এমনকি চাঁদে গিয়ে নিল আর্মস্ট্রংও দেখেছিলেন এ লেক। তিনি এটাকে নাকি বড় একটা হিমশৈল ভেবে ভুল করেছিলেন।
যেভাবে তৈরি হলো Salar de Uyuni
৩০-৪০ হাজার বছর আগে বলিভিয়ার এ অংশ দিয়ে বয়ে যেত প্রাগৈতিহাসিক মিনচিন লেক। যখন ওটা শুকিয়ে যেতে লাগল তখন এখানে পড়তে শুরু করল লবণের আস্তর। তৈরি হলো দুটো লবণের মরুভূমি ও দুটো লেক। বর্ষার মৌসুমে পাশের দুটো লেকের পানি বাড়লেই লবণের মরুভূমিতে পানির একটা মিহি স্তর তৈরি হয়। আর তখনই মনে হয় যেন আকাশ-মেঘ সব এসে পৃথিবীতে মিশে গেছে।
ভ্রম
এখানকার মূল বিষয়টা শুধু স্বচ্ছ প্রতিফলনই নয়। সুবিশাল সমতল ভূমি হওয়ার কারণে এখানে দৃষ্টিসীমায় আর কিছু পড়ে না। এতে করে এক ধরনের ভ্রম তৈরি হয়, নিজে আকাশে না মাটিতে আছে, সেটা বুঝতে পারে না ভ্রমণচারীর মগজ। কেউ আবার ছবি তুলতে তুলতেই হয়রান। হাত দুটো ছড়িয়ে পোজ দিয়ে দাঁড়ালেই মনে হবে বরফে স্কেটিং করছে। কেউ আবার চিৎ হয়ে এমনভাবে শোয়, দেখে মনে হবে মেঘের ওপর বিছানা পেতেছে। মূলত এসব ভ্রমের লোভেই সালার দে ইউনিতে প্রতিদিন শ’দুয়েক গাড়িতে করে ছুটে আসে হাজারো পর্যটক।