সৈকতের ফটোগ্রাফারদের ফাঁদ থেকে সাবধান!

অত্যাধুনিক লেন্সযুক্ত ডিএসএলআর ক্যামেরায় ছবি তুলতে কার না ভালো লাগে। আর সেই ছবি যদি হয় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে দাঁড়িয়ে, তাহলে তো কথাই নেই। ইট-পাথরের শহুরে জীবন থেকে বেরিয়ে কিছুটা স্বস্তি ও ক্লান্তি ঘোচাতে প্রতিদিন সমুদ্রে গা ভেজাতে ছুটে যান হাজার হাজার পর্যটক। আর সৈকতে এসব পর্যটকদের পদচারণকে কেন্দ্র করে জীবিকার চাকা ঘোরে অনেক ভ্রাম্যমাণ আলোকচিত্রীর। সৈকতে ভ্রমণপিয়াসি মানুষের ছবি তুলে জীবিকা নির্বাহ করেন এসব আলোকচিত্রী। তবে তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে পর্যটকদের হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যায় প্রায়ই।

বর্তমানে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে যেন আলোকচিত্রীর ছড়াছড়ি। পর্যটকদের দেখলেই ছবি তুলে দিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন তাঁরা। দেশের বিভিন্ন জেলা কিংবা অঞ্চল থেকে আসা পর্যটকেরাও চান সৈকতের আনন্দকে ফ্রেমবন্দী করতে। সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের যাঁদের কাছে ভালো স্মার্টফোন কিংবা ক্যামেরা নেই, তাঁরা এসব আলোকচিত্রীর মাধ্যমে নিজেদের ফ্রেমবন্দী করেন। সমুদ্রসৈকতে অবস্থানরত আলোকচিত্রীরা ছবি প্রতি পাঁচ টাকা নেন পর্যটকদের কাছ থেকে। সৈকতে পর্যটকদের ছবি তুলতে বাধ্য করার জন্য অভিনব কৌশলও ব্যবহার করেন তাঁদের অনেকে। দূর থেকে জুম লেন্স ব্যবহার করে অনুমতি ছাড়া ছবি তুলে পর্যটককে সেই ছবি দেখিয়ে আরও ছবি তুলতে আকৃষ্ট করেন তাঁরা।

অধিকাংশ সময় পর্যটকেরা সেই ছবি দেখে আকৃষ্ট হয়ে আরও ছবি তুলতে বলেন আলোকচিত্রীকে। দেখা যায়, পর্যটক ১০টি ছবি তোলার কথা বললেও আলোকচিত্রী ইচ্ছা করে অনেক ছবি তুলে বসেন। প্রায় পর্যটক এত বেশি ছবি নিতে অপারগ হলে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এসব আলোকচিত্রী। এভাবে আলোকচিত্রীদের প্রতারণার ফলে অনেক পরিবার সৈকতে প্রায় বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হয়। বিশেষ করে তরুণ-তরুণী পর্যটকদের ফাঁদে ফেলতে মুখিয়ে থাকে এই আলোকচিত্রী সিন্ডিকেট। ছবি তোলার পর অতিরিক্ত ছবি নিতে না চাইলে অনেক ক্ষেত্রে নানা হুমকিও দেওয়া হয়।

অনেকে অজান্তেই প্রতিদিন আলোকচিত্রীদের ফাঁদে পড়ছেন। পরিবার, স্বামী-স্ত্রী, বন্ধু-বান্ধব, তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে অনেকে সৈকতে গোসল করতে নামেন। এই সুযোগে সৈকতে বিশেষ করে তরুণীদের গোসলের দৃশ্য অনুমতি ছাড়া তুলে ফেলেন অনেক আলোকচিত্রী। বিভিন্ন যুগল ছবি কিংবা সৈকতে অবস্থানরত তরুণীদের আনন্দের মুহূর্ত ফ্রেমবন্দী করে নেন। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও সেসব ছবি ব্যবহার করা হয় বলে অনেক আলোকচিত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে।

প্রতারণা ও অপরাধ ঠেকাতে সৈকতের আলোকচিত্রীদের ডেটাবেইসের আওতায় আনা হলেও থামছে না পর্যটক হয়রানি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও আলোকচিত্রীদের অপরাধ ঠেকাতে প্রশাসনের নেই কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ। তাই সৈকতে আলোকচিত্রীদের ফাঁদ থেকে পর্যটকদের সুরক্ষা দিতে প্রশাসন কর্তৃক যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

এদের নিয়ে শিহাব উদ্দিন ফেসবুকে লিখেছেন 

এমন অবস্থার শিকার আমিও হয়েছিলাম। কিন্তু আমি উল্টো তাদের মাফ চাইতে বাধ্য করছি।
কয়েকটা ছবি তুলবো এমনটাই ভাবছিলাম কিন্তু ও ১০ মিনিটে ২০০ টার বেশি ছবি তুলে টাকা দাবি করছে। আমি বললাম এত ছবি নিবো না। কয়েকটা নিয়ে বাকি গুলা ডিলেট করতে। ডিলেটও করে না। কি একটা বাজে অবস্থা। পাশে আমার স্ত্রি। চিন্তা করলাম সোজা কথায় হবে না। এক টানে ক্যামেরাটা নিয়ে কলার চেপে ধরলাম। স্লা…পুত, চল পুলিশের কাছে….। ব্যাস চারপাশ থেকে তার আরো কলিগরা হাজির মীমাংসার জন্য। পরে ছবি ডিলেট করে তাকে ছাড়িয়ে নেয়। শুরুতে আমি ওর একটা ছবি আমার ফোনে তুলে নেই। আমি ওর ছবি ডিলেট করে দিবো এই শর্তে ও আমাদের ছবি ডিলেট করতে রাজি হয়। ব্যাস অনাকাঙ্খিত এই ঘটনার এভাবে সমাধান হলো। জায়গা মত ফাপরবাজি করতে পারলে ওনেক কিছু থেকে বাচা যায়।
ইশরাত জাহান 
এরা যে কতটা জঘন্য। এদের জন্য মূলত পর্যটক এরিয়াগুলো রিস্কি হয়ে পড়ে। ফুসলিয়ে কোনো মতে একবার আপনাকে রাজি করতে পারলে এরা আপনার কিডনি বেচার টাকা মেরে দিবে। এত বড় অমানুষ এগুলো।
আরো আছে খাবারের দোকান গুলো। তারপর আছে লোকাল ট্রান্সপোর্ট গুলো। চট্টগ্রাম সীবিচের পরিবেশ তো অসম্ভব রকমের ডেঞ্জারাস। আমার তো জন্তু জানোয়ারকেও এত ভয় লাগেনা এদের যত ভয় লাগে।
এইসব জায়গায় যারা নতুন আসবেন তাদের জন্য সতর্ক বার্তা কখনো ওখানে দাম জিজ্ঞেস না করে খাবেন না, কখনো ভুলেও এদের কথায় ছবি তুলতে যাবেন না। একবার গেলে কাপড় ছাড়া ফেরত আসতে হবে।
নাজমুল লিখেছেন
এরা আসলেই ছবি তোলার পরে সবাইকে এক ধরনের ব্লাকমেইল করে দেখা যায় একি স্টাইলের ছবি অনেক গুলা তুলে আপনি যদি তার সাথে মিটিয়ে নেন ২০ টা ছবি তুলে দিবেন সে ১০০ টা ছবি কখন তুলে ফেলবে আপনি বুঝতেই পারবেন না। পরে ১০০ টা ছবির টাকা দাবি করে করে। আর যারা কাপল পিক তুলে তাদের তো কোন কথায় নেই যে কয় টাকা তারা দাবি করে না দিয়ে দিলে বিপদ
ফাতেমা
সমস্যা গুলো সমাধান না করলে আমাদের দেশ খুব দ্রুত পর্যটক হারাবে।কারন ঘুরতে যায় মানুষ আনন্দের জন্য হয়রানি হতে না।সব যায়গায় ধান্দাবাজ।সাথে আমাদের কেউ সচেতন হতে হবে।অনেকেই তো টাকার জোর দেখায়।তাদের জন্যই মুলত এসব সমস্যা বাড়ে
সোহাগ
১০/২০ ছবির বেশি কেউ নিতে চায় না কিন্তু তারা ৫০/৬০/১০০+ ছবি তুলে বলে সব নিতে হবে! আবার বেছে নিতে চাইলে দিতে চায় না।না নিতে চাইলে বা ডিলেট করে দিতে বললেও পুরা টাকা না দেওয়া পর্যন্ত ডিলেট করে না। এখানে আলোকচিত্রীদের মধ্যে বড় ধরনের সিন্ডিকেট বিদ্যমান। সেন্টমার্টিনেও সেইম অবস্থা!
সজীব লিখেছেন
এরা সংঘবদ্ধ! যেখানে ৪০ টা ছবি হয়না সেখানে ৪০০০ টা ছবি তুলে ফেলে কয়েক মিনিটে। পরে টাকা না দিলে আশেওাশের আর কটা কে ডাকে। ছবি তোলার আগে পা পর্যন্তধরার উপক্রম হয় পরে ওদর প্রতি মায়া দেখিয়ে ছবি তগলেন তো পরে বুঝবেন ওদের আসল রুপ, খুব বাজে ভাবে ব্লাকমেইল করে এরা একরকম ছিনতাই করার মত।
সুফিয়ান
এরা অনেক বাটপারি করে, এক ক্লিকে অনেক ছবি তুলে, আবার কখনো একই ছবি কপি করে অনেকগুলা বানিয়ে দেয়৷ এদেরকে এখনই প্রশাসনের আওতায় আনা হোক।

আরিফুল ইসলাম তামিম

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম।

কক্সবাজার