কবুতরের সালমোনেলা রোগের চিকিৎসা কী

কবুতরের সালমোনেলা রোগ হলে যা করতে হবে তা নিয়ে আজকের আলাচনা। যারা কবুতর পালন করে তাদের বড় মাথাব্যথার নাম কবুতরের সালমোনেলা রোগ। কবুতরের এ রোগ হয়েই থাকে।

সালমোনেলা বা প্যারাটাইফয়েড রোগ হচ্ছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। এই ব্যাকটেরিয়া সাধারণ পরিবেশে প্রায় ১ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে।

কবুতরের সালমোনেলা রোগ কে মাদারস রোগও বলা হয়। রোগটি কবুতরের বাকি রোগের ৮০% উপসর্গ যুক্ত থাকে।

কবুতরের সালমোনেলা রোগ বেশিরভাগ সময় সুপ্ত থাকে।

কবুতরের সালমোনেলা রোগের কারণ

  • কবুতর যখন ময়লা খাবার ও দূষিত পানি খায় তখন সালমোনেলা হতে পারে।
  • আবার আক্রান্ত কবুতর থেকেও এই রোগের ব্যাকটেরিয়া ছড়াতে পারে।
  • একটি কবুতরের সালমোনেলা হলে লফট-এর বাকি কবুতরেরও সালমোনেলায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • বন্য কবুতরের সঙ্গে মেলামেশার মাধ্যমে হতে পারে।
  • মানুষের জুতার নিচের অংশে থাকা ধুলো কবুতরের ভেতরে ‍ঢুকলে হতে পারে।
  • ইঁদুরের মাধ্যমে কবুতরের সালমোনেলা রোগ হতে পারে।
  • আবহাওয়া খুব ঘন ঘন পরিবর্তন হলে ও হতে পারে

 

কবুতরের সালমোনেলা রোগের লক্ষণ

  • কবুতর সবুজ রঙের আঠা আঠা চুনা পায়খানা করবে। কবুতর সবুজ ও চুনাযুক্ত পাতলা পায়খানা করবে। পায়খানায় অন্যরকম দুর্গন্ধ থাকতে পারে।
  • দ্বিতীয় ধাপে কবুতর সবুজ পায়খানার পাশাপাশি খাওয়া বন্ধ করে দিতে পারে। সেই সঙ্গে কবুতরের বমি হবে। আবার কবুতরের পায়খানা পায়ুপথে লেগে থাকতে পারে।
  • কবুতরের এক কোণে চুপচাপ বসে ঝিমাবে।
  • তৃতীয় ধাপে কবুতরের পা ও পাখা প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারে এবং কয়েকবার বমি করে সেদিনই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কবুতর মারা যেতে পারে।

কবুতরের সালমোনেলা রোগের চিকিৎসা

প্রথমে নিজেকে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। ব্যবহার করুন হেক্সিসল বা অন্য কোনও হ্যান্ড স্যানিটাইজার। এরপর আক্রান্ত কবুতরকে আলাদা করে রাখুন।

 

সালমোনেলার চিকিৎসা ১:  রোগের প্রকোপ বেশি হলে ভেটেনারি মেডিসিন (ইরোকট পাউডার) আক্রান্ত কবুতরকে ১ গ্রামের ৪ ভাগের একভাগ বা ২ চিমটি পরিমাণ ৫ মিলিলিটার পানিতে মিশিয়ে দিনে ৩ বার দিন।

বাচ্চা কবুতর হলে ১ চিমটি দিতে হবে।

প্রতিকারের ক্ষেত্রে ১ গ্রাম ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩ থেকে ৫ দিন খাওয়াবেন।

ওষুধটি দেওয়ার আধা ঘণ্টা পর রাইস স্যালাইন দিতে হবে। স্যালাইন দিতে হবে ৫ মিলি পানিতে। সালমোনেলা হলে কবুতরকে শক্ত খাবার খাওয়াবেন না। কারণ, এ রোগে কবুতরের হজমশক্তি কমে যায়। বমি করে দুর্বলও হয়ে যায় পাখি। তাই সুজি, বার্লি, বা বয়লার ফিড দিতে পারেন। এসব খাবার ৫ সি সি থেকে ১৫ সি সি পর্যন্ত দিনে ২ বার দিতে পারেন।

 

সালমোনেলার চিকিৎসা ২: হোমিও বাপ্তাসিয়া ৩০ এক সিসি এক লিটার পানিতে মিশিয়ে পরিবেশন করুন।

সঙ্গে ১ লিটার পানিতে ২ চা চামচ রসুন বাটা মিশিয়ে কবুতরকে খেতে দিন। এভাবে মাসে ১-২ বার।

লেবুর রস পানিতে মিশিয়েও মাসে ১-২ দিন খেতে দিন। সেই সঙ্গে ভিটামিন কে, বি ও ডি কমপ্লেক্স দিতে হবে মাসে ২-৩ দিন।

 

কবুতরের সালমোনেলা প্রতিরোধে কী করবেন

কবুতরের সালমোনেলা রোগ প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্তের মাধ্যমে চিকিৎসা করতে হয়। নয়তো ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে।

একবার কবুতরের সালমোনেলা হলে অন্য সব রোগের উপসর্গও দেখা দিতে পারে। তাই এই রোগ থেকে লফট কে মুক্ত রাখার জন্য আগেই ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

  1. অনেকভাবেই কবুতরের সালমোনেলা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর হলো আনফিল্টারড আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার। যদি সপ্তাহে ২ দিন ১ লিটার পানিতে ৫ মিলি আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে সেই পানি কবুতরকে খেতে দেওয়া হয় তবে সালমোনেলায় আক্রান্ত হবার চান্স কম।
  2. সামান্য পটাশ মেশানো পানিতে কবুতরের খাবার ধুয়ে তারপর খেতে দিন। অথবা কবুতরের খাবার কিছুক্ষণ গরম করে নিন।
  3. কবুতরকে পরিষ্কার পানি বা সম্ভব হলে ফিল্টার পানি পান করান।
  4. ইঁদুর ও তেলাপোকা যেন লফটে না থাকে খেয়াল রাখুন।
  5. আপনার খামার সপ্তাহে ১-২ দিন পরিষ্কার করুন।
  6. খাদ্য ও পানির পাত্র নিয়মিত ধুতে হবে। অনেকদিন ব্যবহার করলে পাত্রে পাতলা ঝিল্লি পড়ে। যা সালমোনেলার অন্যতম কারণ।

 

কবুতর পালনের আধুনিক কলাকৌশল

১০টি কবুতরের রোগ ও সেগুলোর প্রতিকার

কবুতরকৃষিখামার