কলকাতার খবর : লাভ সুনিশ্চিত করতে আলু চাষের এলাকা কমানোই ভালো

কলকাতার খবর : গত মরশুমে খেত খেত থেকে আলুর দর ভালো পেলেও এই মরশুমে চাষিদের সতর্ক থাকতে হবে। ব্যাপক আলু চাষের এলাকা না কমালে লাভজনক দাম পাওয়ার কোনও নিশ্চয়তা নেই। এই আসল সত্যটা বুঝতে হবে। আর সে কারণেই আলু চাষের এলাকা কমিয়ে সরষে, গম বা সবজি চাষের দিকে চাষিরা ঝুঁকতে পারেন। কেন না চাষের খরচ যেভাবে বাড়ছে তাতে মাঠে ৪০০ টাকা বস্তা দরে আলু বিক্রি করতে না পারলে চাষিদের চাষ করে লাভ নেই। আবার দাম চড়লে যেভাবে ভিন্‌ রাজ্যে পাঠানোর ব্যাপারে সরকার কড়াকড়ি করে তাতে আলু বিক্রি করার ঝুঁকি নিতে পারেন না ব্যবসায়ীরা। ফলন কম হলে প্রথম থেকেই আলুর দাম কিছুটা হলেও উপরের দিকে থাকবে। তখন ক্রেতা থেকে সরকার সকলেই বাস্তব অবস্থাটা বুঝতে পারবেন।
আলুর দাম কত হবে তা উৎপাদনের উপর নির্ভর করে। ধানের মতো সহায়ক মূল্য না থাকায় মাঠ থেকে ওঠার সময় আলুর দাম কত হবে তার কোনও ঠিকঠিকানা থাকে না। আবহাওয়া চাষের পক্ষে অনুকূল হলে আলুর ভালো ফলন হয়। আর বেশি ফল মানেই অবিক্রি। অথচ চাষের ভরা সময়ে চাষিকে সার ও বীজ কিনতে হয় নির্দিষ্ট দামেই। কখনও বাজারছাড়া দরেও কিনতে হয়। বীজ কিনতে হয় পাঞ্জাবের ব্যবসায়ীদের ঠিক করে দেওয়া দামেই। শুধু তাই নয়, এসব বীজের গুণমান নিয়েও অনেক প্রশ্ন থেকে যায়। অনেক সময় চাষিরা এই বীজে চাষ করে ভালো ফলনও পান না। তারপর অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, কুয়াশার মতো প্রাকৃতিক ঝামেলা তো রয়েছেই। ক’বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে, রাজ্যে শীত তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছে। আলু গাছে দেখা দিচ্ছে ছত্রাক রোগ ধসা। আর ধসা মানেই বেসামাল অবস্থা। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এই রোগ। তাতেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায় না। উত্তরপ্রদেশে পাঞ্জাবে আলু মার খেলেও আমাদের রাজ্যের চাষিরা যে ভালা পয়সা পাবেন তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। কারণ আলুর দাম বেশি হলেও সরকারি নিয়ন্ত্রণের খড়্গ নেমে আসবে। কিন্তু চাষিরা লোকসান খেলে তাঁকে কেউ দেখার নেই। সরকারি কর্তারা তখন ফাটা রেকর্ডের মতো একটা কথাই বাজিয়ে চলেন আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। আমরা বাইরে আলু পাঠানোর চেষ্টা করছি।
এই পরিস্থিতিতে হিসাব করে এবার আলু চাষে নামা দরকার। কারণ আমাদের রাজ্যে যে পরিমাণ আলু উৎপন্ন হয় তার অর্ধেকের মতো রাজ্যবাসীর খেতে লাগে। বাকিটা বাইরে পাঠাতে হয়। কতটা যাবে, কোন কোন রাজ্য নেবে সেটাও নির্ভর করে উত্তরপ্রদেশের উপর। সেখানে আলু বেশি হলে প্রয়োজনে তারা এ রাজ্যের হিমঘরে আলু ঢুকিয়ে দিতে পারে। ১০০ দিনের কাজের দৌলতে একজন খেতমজুরকে পুরো মজুরি দিয়ে ঘণ্টা তিনেকের বেশি কাজ পাওয়া যায় না। আলুর লাভজনক দর পেলে কিছুটা লাভ পাওয়া সম্ভব। আর এই দাম আলু চাষের এলাকা বাড়লে বা বেশি ফলন হলে কোনওভাবেই সম্ভব নয়। তাই সকলেই যদি কিছুটা করে আলু চাষ কমিয়ে বিকল্প চাষের দিকে ঝোঁকেন তাহলই সেটা সম্ভব।