হাঁস-মুরগির খামার ও পরিবেশ : তাপমাত্রা নিয়ে করণীয়

আগে হাঁস-মুরগির খামার করা হতো খোলা চত্বরে। আজ পালন করা হচ্ছে ঘেরার মধ্যে অল্প জায়গায় অথবা খাঁচায় গাদাখানিক হাঁস-মুরগি ঢুকিয়ে। ফলে হাঁস-মুরগির সহজাত স্বভাবের পরিবর্তন হতে বাধ্য। সুতরাং এই পরিবেশে বাইরে তাপমাত্রার অল্প পরিবর্তনে হাঁস-মুরগির অবশ্য কিছু অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা স্বাভাবিক। আগে ঘরোয়া পদ্ধতিতে হাঁস-মুরগি পালনের ক্ষেত্রে বা বড় আকারে খামার করার ক্ষেত্রেও অত্যাধিক যত্নের ফলে বছরে খুব বেশি হলে একটি হাঁস মুরগি 250 টি ডিম দিত। গায়ে-গতরে বাড়তো খুব জোর দেড় কেজি। আজকাল উন্নত জাতের দোয়া আসালা মুরগি বছরে 300 থেকে 330 টি ডিম ডিম দিচ্ছে। সাত সপ্তাহে বাড়ছে প্রায় 2 কেজি। সুতরাং মুরগির দেহে বিশেষণ প্রক্রিয়ায় অবশ্যই কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। না হলে এত সংখ্যায় ডিম এবং মাংস উৎপাদন করা সম্ভব নয়।

এই কারণে খামারিদের অবশ্যই এমন কিছু করা দরকার যাতে মুরগি তাপমাত্রা চাপ সহ্য করে তার উৎপাদনের অগ্রগতি বজায় রাখে।

গরমকালে খামারিরা তাপমাত্রার চাপের জন্য ঝামেলায় পড়ে। এখন তাপমাত্রা চাপ বলতে কি বুঝানো হচ্ছে সেটা জানা দরকার।

তাপমাত্রার চাপ বলতে বোঝানো হচ্ছে বাইরের আবহাওয়ার অবস্থা এবং যে অবস্থায় মুরগিরা তাদের দেহের পরিকাঠামোয় দেহের তাপ ধরে রাখতে পারে না। দেহের তাপ ধরে রাখার ব্যাপারটা আজ নতুন সমস্যা। নতুন নতুন দেশ-বিদেশের হাঁস-মুরগি আসছে। খুব বেশি সংখ্যায় তারা ডিম দিচ্ছে।

সাত সপ্তাহে দেড় থেকে দুই কেজি মাংসের জোগান দিতে পারছে। হাঁস মুরগি পালনে তাপমাত্রার প্রভাব সাধারণত 15 ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে 27 ডিগ্রি সেলসিয়াস হবে যদি হাঁস মুরগি থেকে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন আশা করা যায়। এই তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি দরকার চার সপ্তাহের বড় বাচ্চা মুরগি দের জন্য। অবশ্য তাপমাত্রার ওপর কিছুটা প্রভাব বিস্তার করে বায়ু চলাচল ব্যবস্থা বাতাসের আদ্রতা এবং খামার ঘরে মুরগির ঘনত্ব। এখন বাচ্চা মুরগি দের উপর তাপমাত্রার চাপ কি অবস্থার সৃষ্টি করে সেটা জানা দরকার।

1। ধীরে ধীরে মুরগীদের যদি প্রচন্ড বা প্রচন্ড রকম গরম আবহাওয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে লক্ষ করা যায় মুরগিরা কিছুতেই হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তন সহ্য করতে পারে না।

2। মুরগি কখনো গরম কখনো ঠান্ডা আবহাওয়া সহ্য করতে পারে।

3। কম বয়সের মুরগিরা বেশি বয়সের মুরগিদের চেয়ে বেশি গরম সহ্য করতে পারে।

4। ভারী মুরগিরা হালকা মুরগীদের চেয়ে কম গরম সহ্য করতে পারে।

5। মোরগ্রাম সাধারণত মুরগীদের চেয়ে বেশি গরমে কাবু হয়ে পড়ে।

6। একনাগাড়ে 32 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় যদি দিন-রাত সব সময় থাকে তবে মুরগির থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ কমে যায়। তখন মুরগির বিশেষণ প্রক্রিয়ার অবনমন ঘটে। ফলে দেহের বৃদ্ধির ঘাটতি ঘটে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

7। যদি তাপমাত্রা 21 ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে 32 ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার কাছে উঠে যায় তাহলে মুরগির ডিম উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাবে। কারণ তখন মুরগি খাবে কম। যদি তাপমাত্রা 38 ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায় এই সংযোগ আর্দ্রতা 50 শতাংশ বেশি হয় তবে ব্রয়লার মুরগির মৃত্যুর হার অনেক বেশি হবে।

হাঁস-মুরগির ঘরের তাপমাত্রা

27 ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে 30 ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে খাওয়া কিছুটা কমে যায়। 27 ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে 32 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকলে খাওয়া আরও কমে যাবে। তখন মুরগি পানি বেশি খাবে। গরমের জন্য বসে থাকার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাপমাত্রা 32 ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে 35 ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মুরগির খাবার ইচ্ছা আরও ভীষণ কমে যাবে। ডিম পাড়া মুরগি গরমের জন্য বসে যেতে পারে। কিন্তু ব্রয়লার মুরগি খুব কমই বসবে। মুরগির ডিম উৎপাদন ডিমের আকার এবং খোসার বিন্যাস ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাপমাত্রা 32 ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে 38 ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠে গেলে মুরগির বসে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। এবং মুরগি কে বাঁচাতে হলে নানা ধরনের আপৎকালীন ব্যবস্থা নিতে হবে। 38 ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে তাপমাত্রা উঠে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আপৎকালীন ব্যবস্থা নিতে হবে।

হাঁস-মুরগির জন্য আর্দ্রতা

তাপমাত্রা চাপ মারাত্মক আকার নিতে পারে যদি তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতা বেশি হয়। বেশি সংখ্যায় মুরগি এবং মুক্ত বায়ুচলাচল ব্যবস্থার অভাব থাকলে মুরগীদের পালক ছাড়া বা পালক ওঠার সম্ভাবনা দেখা যায়। সুতরাং তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে নিম্ন আপেক্ষিক আদ্রতা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে যখন বাইরে তাপমাত্রা 30 ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে। 30 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ছাড়িয়ে গেলে মুরগি বসে যাবে এবং মৃত্যুর হার বেড়ে যাবে। ব্যাপারটা আরো সাংঘাতিক দাঁড়াবে যদি 38 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা দীর্ঘদিন ধরে মুরগীদের উত্যক্ত করে।

https://www.youtube.com/watch?v=v8m_Xlgtmus