১০টি কবুতরের রোগ ও সেগুলোর প্রতিকার

কবুতর একটি সংবেদনশীল পাখি। সহজেই জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। তাই কবুতরের রোগ হলে অতি সতর্কতার সাথে সঠিকভাবে যত্ন নেওয়া উচিত। তা না হলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা আছে। কবুতরের রোগ সমূহ ও এর প্রতিকার নিম্নরূপ:

এক নজরে ১০টি কবুতরের রোগ

১. ঠান্ডাজনিত রোগ (Colds): কবুতরের মানুষের মত ঠান্ডাজনিত রোগ হয়ে থাকে। সাধারনতঃ ভেজা বাসস্থান বা ভেজা আবহাওয়াজনিত কারণে (অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম) ঠান্ডাজনিত রোগ হয়ে থাকে। এসময় কবুতরের নাক দিয়ে তরল পদার্থ নিঃসৃত হয়।
চিকিৎসা: এক্সপেকটোরেন্ট (Expectorant) জাতীয় সিরাপ খাওয়ালে সহজেই ঠান্ডাজনিত রোগ ভাল হয়ে যায়।
২. ডাইরিয়া (Diarrhoea): কবুতরের ডাইরিয়াজনিত রোগ সাধারনতঃ অম্লদূর্গন্ধযুক্ত, মল্ডি (Moldy) এবং অপরিনিত শস্য-দানা খেয়ে ডাইরিয়া দেখা দেয়।
চিকিৎসা: ডাইরিয়া হলে ওরস্যালাইন-এন জাতীয় খাবার স্যালাইন খেতে দিতে হবে। তবে সবধরনের শস্য দানা খাওয়া প্রতিদিনের খাদ্যে একেবারে বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। খাদ্যের শস্যদানা এবং ধান, গম প্রভৃতি শস্যদানা কবুতরের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভাল।
৩. গোয়িং লাইট (Going light): এই রোগে কবুতরের চামড়ার রং কাল হয়ে যায় যা দেখতে গরুর মাংসের মত। এ সময় কবুতর খুব অসুস্থ দেখতে লাগে এবং প্রায়শই ডাইরিয়ায় আক্রান্ত হয়। যেহেতু এ সময় ডাইরিয়ায় আক্রান্ত হয় তাই অন্যান্য রোগ এ সময় কবুতরকে আক্রান্ত করতে পারে।
চিকিৎসা: খাদ্যে ওরস্যালাইন এবং কুসুম কুসুম গরম দুধ ও রুটি কিছুক্ষণ পরপর দেওয়া যেতে পারে।
৪. ক্যাংকার (Canker): এটি একটি প্রোটোজোয়াজনিত রোগ যা সাধারনতঃ বয়স্ক কবুতরের দেখা যায়। মুখে বা গলায় (Throat) যদি হলুদাভ সাদা বস্তু (Substance) দেখা যায় তবে সহজেই এই রোগের সনাক্ত করা যায়।
চিকিৎসা: প্রোটোজোয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে এমন এন্টিপ্রোটোজোয়াল (Antiprotozoal) ঔষধ ক্যাংকার এ সেবন করা যেতে পারে।
৫. রোপ (Roup): শীতকালে যদি বিছানা ভেজা থাকে তবে প্রায়শঃই রোপ(Roup) নামের কবুতরের রোগ দেখা যায়। এ রোগের লক্ষণ নিউমোনিয়া বা ঠান্ডাজনিত রোগের লক্ষণের মত। নাক দিয়ে শ্লেষ্মাজাতীয় পদার্থ বের হয়।
চিকিৎসা: অসুস্থ কবুতরকে তার বাসস্থান থেকে সরিয়ে নিয়ে বাসস্থান, খাবার পাত্র পানির পাত্র সহ সব যন্ত্রপাতি জীবাণূনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা উচিত।
৬. নিউমোনিয়া: যদি গলার মধ্যে বিশেষ করে থ্রট (Throat) এ কোন ধরনের গুটি দেখা যায় বা কফ জাতীয় কোন পদার্থ দেখা যায় এবং নাকের ছিদ্রে শ্লেষ্মাজাতীয় কোন পদার্থ দেখা যায় এবং যদি কবুতর এর শ্বাসকষ্ট দেখা যায় তবে বুঝতে হবে যে কবুতরটি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এ সময় গা অনেক গরম হয় এবং কবুতরটি খুবই অসুস্থ দেখা যায়।
চিকিৎসা: এ সময় তাকে শুষ্ক বিছানাসহ গরম খাবার প্রদান করা উচিত।
৭. এগ বাইন্ডিং (Egg binding): কোন কোন সময় কবুতর এর ডিম পারতে কষ্ট হয়। সাধারনতঃ কোন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত রোগ হলে বা খাদ্যে সুষম পুষ্টি সঠিকভাবে না পেলে এগ্ বাইন্ডিং রোগে আত্রান্ত হয়।
চিকিৎসা: এ সময় পায়ুপথ গরম পানি দিয়ে ধৌত করে বা পায়ুপথে অলিভ ওয়েল লাগায়ে সহজেই ডিম বের করে আনা যেতে পারে।
৮. ম্যালেরিয়া: ম্যালেরিয়া সাধারনতঃ এক ধরনের প্রোটোজোয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই জীবানু রক্তের লোহিত কনিকাকে ধ্বংস করে। ফলে কবুতরটি আস্তে আস্তে শুকিয়ে যায়। হাটতে পারে না এমনকি দৃষ্টির অস্পষ্টতা লক্ষ্য করা যায়। ঘাড় বাঁকিয়ে চলাফেরা করে।
চিকিৎসা: এন্টি ম্যালেরিয়া জাতীয় ঔষধ যেমন- মেলানোসাইড দ্বারা সহজেই চিকিৎসা করা যেতে পারে। তাছাড়া এই রোগ থেকে মুক্ত রাখতে হলে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য ও পানি সরবরাহ করতে হবে। যে খাঁচায় পাখিকে রাখা হয় সে সব খাচা নিয়মিত জীবানুনাশক দিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
৯. কক্সিডিওসিস (Coccidiosis): কক্সিডিওসিস রোগটি কবুতরের রোগ হিসেবে খুব সাধারণ। এটি একটি প্রোটোজোয়াজনিত রোগ। কম বয়সী কবুতর এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। কবুতরের রোগ টি হলে পায়খানার সাথে রক্ত বা সাদাচুনা দেখা দেয়। এ রোগে কবুতর ঠিকমত দাড়িয়ে থাকতে পারে না, ওজন হ্রাস পায় এবং কম খাদ্য খায়। এ রোগে আক্রান্ত হলে কবুতর তাড়াতাড়ি মারা যায়।
চিকিৎসা: এ রোগ থেকে বাঁচাতে আগে থেকেই প্রিভেনটিভ ডোজে কক্সিডিওসিস এর ঔষধ থাওয়ানো উচিত।
১০. পিজিয়ন পক্স (Pigeon Pox): এটি একটি ভাইরাসজনিত কবুতরের রোগ যা চামড়া ও মিউকাস মেমব্রেনকে আক্রান্ত করে।
চিকিৎসা: পিজিয়ন পক্স ভ্যাক্সিন দিতে হবে। যা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে।
কবুতরকবুতর পালনকবুতরের চিকিৎসাকবুতরের দামকবুতরের রোগ