মেরুর দুর্গম প্রান্তে গবেষণা অভিযান পরিচালনার জন্য বিশেষভাবে নকশা করা হয়েছে চীনের আইসব্রেকার জাহাজ সুয়েলং ১ ও সুয়েলং ২। জাহাজগুলোর কাঠামো যেমন উন্নত, তেমনি আছে অত্যাধুনিক অনবোর্ড হার্ডওয়্যার। আগের যেকোনো গবেষণা জাহাজের চেয়ে সুয়েলং এক কথায় সেরা। সমুদ্রে এক মাসেরও বেশি সময় পার করার পর সম্প্রতি সুয়েলং ১ ও সুয়েলং ২ পৌঁছেছে অ্যান্টার্কটিকার বরফের রাজ্যে।
আধুনিক মেরু অভিযানের জন্যই নকশা করা হয়েছে চীনের গবেষণা আইসব্রেকার জাহাজ ‘সুয়েলং ২’। আগের চেয়ে উন্নত কাঠামোর পাশাপাশি এ জাহাজে আছে অত্যাধুনিক সব সরঞ্জাম। এটি এমন সব বৈজ্ঞানিক কাজ করতে সক্ষম যা আগের কোনো গবেষণা জাহাজে করা সম্ভব ছিল না।
সমুদ্রযাত্রার এক মাসেরও বেশি সময় পর, ‘সুয়েলং’ এবং ‘সুয়েলং ২’ অ্যান্টার্কটিকার বরফরাজ্যে পৌঁছেছে।
এখন ‘সুয়েলং ২’ একই সঙ্গে বরফ ভাঙার কাজ করছে এবং ‘সুয়েলং’-কে চীনের দ্বিতীয় স্থায়ী গবেষণা কেন্দ্র ‘চোংশান স্টেশন’-এর নির্ধারিত আনলোডিং এলাকায় যাওয়ার পথ দেখাচ্ছে।
এ দুটি আইসব্রেকার গত নভেম্বরে চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের রাজধানী কুয়াংচৌ থেকে যাত্রা শুরু করে। সাত মাস চলবে অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে জাহাজ দুটির গবেষণা।
‘সুয়েলং ২’ তৈরি করা হয়েছে আধুনিক মেরু অভিযানের নানা প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে। এর সামনে যে সাদা মাস্তুল রয়েছে, ওটা দেখতে সাধারণ মনে হলেও গবেষণায় এর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
মাস্তুলটি সমুদ্র ও বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং মিথেনের আদান-প্রদানের মাত্রা পরিমাপ করে। এটি বায়ুমণ্ডলের গতিবিধি সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয় এবং জলবায়ুর পূর্বাভাসেও সহায়তা করে।
জাহাজটির নিচের অংশ বা যাকে বলে কিল, সেটা দেখতে অনেকটা বাক্সের মতো।
সুয়েলং ২-এর ক্যাপ্টেন সিয়াও চিমিন জানালেন, ‘সরল ভাষায় বলতে গেলে, জাহাজের নিচে প্রায় ৬০ সেন্টিমিটারের একটি কাঠামো স্থাপন করা হয়েছে। এটি বরফশীতল পানিতে চলাচলের সময় পানির নিচের সেন্সর ও প্রোবগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং বরফের সাথে সংঘর্ষের ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়া, এই কিলের নকশাটি জাহাজের গতির ফলে সৃষ্ট বুদবুদগুলোর প্রভাবও কমায়। এতে সেন্সর ও প্রোব থেকে সঠিক ডেটা পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।’
সুয়েলং-২ এর পেছনের অংশে ৬০০ বর্গমিটারের একটি খোলা ডেক রয়েছে। এখানে আছে নানা ধরনের ক্রেন। এটি বিভিন্ন সরঞ্জাম সংরক্ষণ এবং জাল দিয়ে নমুনা তোলার কাজে ব্যবহৃত হয়।
ডেকে আছে আটটি কনটেইনার স্লট। এ কনটেইনারগুলোকে ভ্রাম্যমাণ গবেষণাগার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
জাহাজের ডানপাশে রয়েছে বৈজ্ঞানিক কার্যক্রমের জন্য কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, যেখানে উইঞ্চ এবং পানির নিচে থাকা যন্ত্রপাতি পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করা হয়।
আইসব্রেকারটিতে আরও ৫৮০ বর্গমিটারের বেশি গবেষণার স্থান আছে। এখানে আছে একটি ওয়েট ল্যাব, একটি ড্রাই ল্যাব এবং একটি নিম্ন তাপমাত্রার গবেষণাগার। গবেষকরা নমুনা নিয়ে ফিরে আসার পরপরই এসব গবেষণাগারে প্রাথমিক বিশ্লেষণ ও প্রক্রিয়াকরণের কাজ শুরু হয়।
সুয়েলং-এর গবেষক পেই চিয়াহাও জানালেন, ওয়েট ল্যাব বা জলীয় গবেষণাগারটি জৈবিক ও রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য। এখানে আছে ইনকিউবেটর শেকার, এতে বরফ থেকে পাওয়া অণুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায়। আছে বিশেষ গবেষণা ওভেন এবং নির্দিষ্ট তাপমাত্রার ইনকিউবেটর। এ ছাড়া এখানে একটি ক্লিন বেঞ্চ রয়েছে, যা অণুজীববিজ্ঞান গবেষণায় ব্যবহৃত হয়।
সূত্র: সিএমজি