মঙ্গলের ভেতর একটি কঠিন অভ্যন্তরীণ কেন্দ্র (সলিড ইনার কোর) রয়েছে, যা মূলত লোহা, নিকেল ও অন্যান্য হালকা উপাদান দিয়ে গঠিত। এর সঙ্গে মিল রয়েছে পৃথিবীর। চীন ও একদল আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী সম্প্রতি এমনটা আবিষ্কার করেছেন। বুধবার নেচার জার্নালে এ গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে।
মঙ্গলে সংঘটিত ভূকম্পন তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে এমনটা জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। মঙ্গলের চৌম্বকক্ষেত্রের বিবর্তন বোঝার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এ আবিষ্কার।
চীনের আনহুই প্রদেশের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অব চায়না-এর সুন তাওইয়ুয়ান ও মাও চুর নেতৃত্বে একটি গবেষকদল আন্তর্জাতিক সহকর্মীদের সঙ্গে নাসার ইনসাইট ল্যান্ডার থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করেন। তারা ২৩টি তুলনামূলকভাবে সিগন্যালযুক্ত ভূকম্পন তথ্য ব্যবহার করে অ্যারে অ্যানালাইসিস পদ্ধতিতে মঙ্গলের কেন্দ্র দিয়ে যাওয়া ভূকম্পন-তরঙ্গ শনাক্ত করেন।
নেচার-এ প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়, মঙ্গলের কেন্দ্রে পৃথিবীর মতো স্তরবিন্যাস রয়েছে। বাইরে তরল কেন্দ্র এবং তার গভীরে একটি কঠিন কেন্দ্র আছে, যেখানে ভূকম্পীয় তরঙ্গের গতি বেশি।
গবেষণা অনুযায়ী, মঙ্গলের কঠিন কেন্দ্রের ব্যাসার্ধ প্রায় ৬০০ কিলোমিটার, যা গ্রহটির মোট ব্যাসার্ধের পাঁচ ভাগের এক ভাগ। পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কেন্দ্রের অনুপাতও প্রায় একই।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মঙ্গলের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের তরঙ্গ-গতিতে প্রায় ৩০ শতাংশ পার্থক্য আছে। ঘনত্বে আছে প্রায় ৭ শতাংশ পার্থক্য। পাশাপাশি কেন্দ্রের উপাদানে শুধু লোহা-নিকেল নয়—সালফার আছে ১২–১৬ শতাংশ, অক্সিজেন ৬.৭–৯ শতাংশ এবং কার্বন আছে ৩.৮ শতাংশ।
গবেষকরা বলছেন, এই আবিষ্কারের ফলে শুধু মঙ্গলের চৌম্বকক্ষেত্র কেন আগে সক্রিয় ছিল এবং এখন কেন নিষ্ক্রিয়, সে সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ সূত্র দিয়েছে। পাশাপাশি এটি পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহের ভেতরকার বিবর্তনের তুলনায় সহায়ক হবে।
গবেষণায় ব্যবহৃত মার্শান সিসমোলজি পদ্ধতি ভবিষ্যতের মহাকাশ অনুসন্ধান, বিশেষ করে চাঁদের অভ্যন্তরীণ গঠন গবেষণায়ও কার্যকর হতে পারে।
সূত্র: সিএমজি বাংলা