ফেসবুকে পরিচয়ে প্রেম, পরে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় অন্তরঙ্গের ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এমন পরিস্থিতির শিকার হয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন দিশারী বিশ্বাস মীম (১৬) নামে এক স্কুলছাত্রী। এই নির্মম ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সোমবার মানিকগঞ্জে সিঙ্গাইর উপজেলার ছোট কালিয়াকৈর গ্রামে। নিহত মীম ওই গ্রামের মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস টুলুর মেয়ে ও স্থানীয় কালিয়াকৈর খান উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী। আর লম্পট প্রেমিক মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নালড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে কলেজছাত্র আলাউদ্দিন। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বছর খানিক আগে দিশারী বিশ্বাস মীম ও কলেজছাত্র আলাউদ্দিনের ফেসবুকে পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে আলাউদ্দিন ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার ও ইমো নাম্বারে মীমের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে দেখা সাক্ষাতের ফাঁকে কৌশলে দু’জনের অন্তরঙ্গ ছবি তুলে আলাউদ্দিন। এরই মধ্যে মীমকে প্রথমে অনৈতিক কাজ পরে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। আলাউদ্দিনের মতিগতি ও কুমতলব বুঝতে পেরে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় মীম। পরে দিশারীকে বিয়ের জন্য চাঁপ দিতে থাকে আলাউদ্দিন। এতে রাজি না হওয়ায় দু’জনের অন্তরঙ্গের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
উপায়ন্তর না পেয়ে বিষয়টি তার পরিবারকে জানায় মীম। ঘটনাটি আলাউদ্দিনের মা-বাবাকে জানিয়ে দেয় মীমের পরিবার। এতে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে সে। গত রবিবার আলাউদ্দিন তার ফেসবুক আইডি অলেখা কাব্য থেকে তাঁদের দু’জনের বেশ কয়েকটি আপত্তিকর ছবি পোস্ট করে। এতে মীম লাজলজ্জা ও আত্মসম্মানের ভয়ে গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় নিহত মীমের পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।
খবর পেয়ে সিঙ্গাইর থানার উপ-পরির্শক (এসআই) শাহাদাৎ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে স্কুলছাত্রী মীমের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ঘটনার পর থেকে ভন্ড প্রেমিক আলাউদ্দিন পলাতক রয়েছে।
দুই ভাই এক বোনের মধ্যে দিশারী বিশ্বাস মীম সবার বড়। একমাত্র কন্যা সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তার মা-বাবা। তারা এ ঘটনার জন্য আলাউদ্দিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সিঙ্গাইর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মতিয়ার রহমান মিঞা জানান, খবর পেয়ে স্কুলছাত্রী দিশারী বিশ্বাস মীমের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কলেজছাত্র আলাউদ্দিনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।