গত ১৪ মে দিবাগত রাত দুইটার দিকে ভোলায় উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নে রাঢ়ী বাড়িতে ঘুমের মধ্যে দুই বোন তানজিমা আক্তার ও মারজিয়া একসঙ্গে অ্যাসিড-দগ্ধ হয়। তানজিম ৭ জুলাই রাতে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যায়। অ্যাসিডে তানজিমের শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক চোখ, এক কান ও নাকের খানিকটা গলে যায়। আরেক চোখের অবস্থাও ভালো ছিল না। মুখ থেকে বুকের নিচ পর্যন্ত গভীরভাবে দগ্ধ হয়। চিকিৎসকেরা জানান, তানজিমের শ্বাসনালিসহ শরীরের ২৪ শতাংশ দগ্ধ হয়।
তানজিম ও মারজিয়াকে প্রথমে অ্যাসিড সারভাইভরস ফাউন্ডেশনে (এএসএফ) ভর্তি করা হয়। পরে তানজিমকে রাজধানীর সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া মারজিয়া এএসএফের অধীনেই চিকিৎসাধীন। বোনের মৃত্যুর পর মা-বাবার সঙ্গে সে ভোলা চলে যায়। অবস্থা কিছুটা ভালোর দিকে থাকায় চিকিৎসকেরাও আপাতত ছুটি দিয়েছেন।
তাদের বাবা মো. হেলাল বলেন, ‘মেয়ে (মারজিয়া) যেখানে যায়, ভয়ের মধ্যে থাকে। বাথরুমে গেলেও কারও সঙ্গে যাইতে হয়। একা থাকলেই কান্নাকাটি করে।’ তিনি জানান, মারজিয়ার চিকিৎসা এখনো শেষ হয়নি। তানজিমের দাফন-সংশ্লিষ্ট কাজ সারতে বাড়ি গিয়েছিলেন। আগামী সপ্তাহেই আবার এএসএফে মারজিয়াকে নিয়ে আসবেন।
মামলার বিষয়ে মো. হেলাল বলেন, সন্দেহভাজন আসামি মহব্বত হাওলাদার (১৯) কারাগারে আছেন। গত ২৬ মে ১৬৪ ধারায় পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে তিনি অ্যাসিড মারার কথা স্বীকার করেন। পুলিশ তাঁদের জানিয়েছে, তানজিমের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে মামলার চার্জশিট দেবে। তিনি মহব্বতের ফাঁসির দাবি জানান।
এএসএফ হাসপাতালের চিকিৎসক ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, মারজিয়ার শরীরের ১২ শতাংশ পুড়ে যায়। মাথায়, গলায় ও হাত দগ্ধ হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মারজিয়ার একটি অপারেশন হয়েছে। পোড়া স্থানে শরীরের অন্য স্থান থেকে চামড়া এনে লাগানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে মাথার পেছনের ক্ষতিগ্রস্ত অংশের চিকিৎসা করানো হবে।
তানজিমের পরিবার ও মামলার নথি থেকে জানা যায়, এসএসসি পাস তানজিমের সঙ্গে দুই মাস আগে মোবাইল ফোনে মহব্বত হাওলাদার (১৯) নামের এক তরুণের যোগাযোগ হয়। এরপর থেকে তিনি তানজিমের খোঁজখবর নিতেন। একপর্যায়ে কোন কলেজে ভর্তি হবে, তা নিয়ে মহব্বতের সঙ্গে তানজিমের দ্বন্দ্ব হয়। এরপর তানজিমের সঙ্গে অন্য কোনো ছেলের প্রেমের সম্পর্ক আছে—এমন সন্দেহে মহব্বত অ্যাসিড ছোড়েন বলে জানা যায়।