বাবার সঙ্গে কয়েকটি অনুষ্ঠানে আপনাকে গিটার বাজাতে দেখেছি। বুধবার বাজালেন বাবা ছাড়াই। ভবিষ্যতে কি বাবার গড়ে তোলা ব্যান্ড এলআরবিতে লিড গিটারিস্ট হিসেবে পাওয়া যাবে?
অনেকেরই প্রশ্ন এটা। গত কয়েক দিনে বহু মানুষ আমার কাছে এই কথাটি জানতে চেয়েছেন। আমি এলআরবিতে লিড গিটারিস্ট হিসেবে যোগ দিচ্ছি কি না? সত্যি কথা বলব, ওসব নিয়ে এখনো কিছুই ভাবিনি। বাবা হারানোর শোক থেকে আমরা এখনো বের হতে পারছি না। শুধু আমরা নই, ব্যান্ডের সদস্যদেরও এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। আরও ৪০ দিন যাক, সমানে আর কিছুদিন সময় যাক, এরপর হয়তো সবাই মিলে বসে ভাবতেও পারি।
আপনাদের সঙ্গে পারিবারিক আলোচনায় বা অন্য কোনো সময়ে এলআরবি নিয়ে আইয়ুব বাচ্চু কোনো কিছু বলেছিল?
ওভাবে তেমন কিছু বলেননি। যে কয়েকটা অনুষ্ঠানে বাবার সঙ্গে আমি পারফর্ম করেছি, সেটা নিয়ে শুধু আমাদের মধ্যে কথা হতো। এলআরবি নিয়ে ভাবনা বাবা নিজের মধ্যেই রেখেছিলেন, আমাদের ওসব নিয়ে ভাবতে খুব একটা দিতেন না। বাবার যুক্তি ছিল একটাই, সবকিছুর আগে আমাদের পড়াশোনা, এরপর বাকি সব।
গিটার বাজানো ছাড়াও আপনার বাবা গান লেখা, সুর করা ও সংগীত পরিচালনার কাজ করতেন। আপনাকে কি শুধু গিটার বাজানোই শিখিয়েছেন?
ইনস্ট্রুমেন্ট ওয়াইজ, বাবা আমাকে গিটারই শিখিয়েছিলেন। মিউজিক প্রডিউস করার ব্যাপারে আমিই বাবাকে বলেছিলাম, এটা আমি নিজে থেকে শিখে নেব। গিটার ছাড়া কখনো বাবার কাছ থেকে অন্য কোনো শিক্ষা নিইনি। আমার নিজেও অবশ্য গিটার প্লেয়িং নিয়ে আগ্রহ ছিল বেশি।
বাবার সঙ্গে কয়েকটা মঞ্চে পারফর্ম করেছেন। কিন্তু যখন আপনার গানের ব্যাপার নিয়ে বাবার সঙ্গে কথা বলতাম, তিনি বরাবরই এড়িয়ে যেতেন। এটা কী কারণে বলে মনে করেন? আপনাদের কখনো কি বলেছিল?
তিন বছর আগে আমি বাবার সঙ্গে মঞ্চে প্রথম পারফর্ম করি বামবার (বাংলাদেশ ব্যান্ড মিউজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন) অনুষ্ঠানে। এরপর কয়েকবার চ্যানেল আইয়ের ব্যান্ড ফেস্টে বাবার সঙ্গে পারফর্ম করি। ২০১৪ সালে বাবার সঙ্গে আরও কয়েকটা অনুষ্ঠানে বাজিয়েছি। টেলিভিশন অনুষ্ঠানেও অংশ নিয়েছিলাম। বাবা আসলে সংগীতের সঙ্গে নিজে থেকে যুক্ত করতে চাননি। এটার কী কারণ, সেটা বাবাই ভালো বলতে পারতেন। তবে এটাও ঠিক, ছোটবেলা আমাদের নিজেদেরও মনোযোগ ছিল পড়ালেখায়। গান নিয়ে অতটা ক্রেজি কোনো মনোভাব ছিল না। বাবা যখন চাইতেন তখন বাবার সঙ্গে বাজাতাম। তবে এটাও ঠিক, বাবার কারণেই সংগীতের প্রতি আমাদের ভালোবাসা তৈরি হয়।
চট্টগ্রাম শহরে জন্ম নেওয়া আইয়ুব বাচ্চু বাংলাদেশের হয়ে বিশ্ব জয় করেছেন। সেই শহর থেকে বাবাকে ছাড়া মঞ্চে ওঠার ব্যাপারটা কেমন ছিল?
আমার জীবনে এমন সময় এত জলদি আসবে কখনোই ভাবিনি। এই কষ্ট বোঝাতে পারব না। প্রথম যখন মঞ্চে উঠলাম, ভাবলাম বাবা পাশে আছেন। হঠাৎ তখন টের পেলাম বাবা পাশে নেই! চট্টগ্রামের দর্শক-শ্রোতারা বাবাকে মনে করে আমাদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে গানগুলো গাইলেন। পুরো স্টেডিয়ামে যে আওয়াজ হলো, মনে হচ্ছিল, বাবা ওপর থেকে দেখছেন। আসলে, আমারও তা–ই মনে হচ্ছিল। এই দৃশ্য দেখে আমি শক্তি পাচ্ছিলাম গিটার বাজাতে।
কানাডার কোথায় পড়াশোনা করছেন? পড়াশোনা শেষে জীবন নিয়ে কী পরিকল্পনা করেছেন?
কানাডার ভ্যাঙ্কুবার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় পরিসংখ্যান বিষয়ে স্নাতক পড়ছি। বাংলাদেশে মাস্টারমাইন্ড থেকে এ লেভেল, সাউথ ব্রিজ থেকে ও-লেভেল করেছি। পরিসংখ্যান বিষয়ে যেহেতু পড়ছি, ভবিষ্যতে এ–সম্পর্কিত কিছু করার চিন্তাভাবনা আছে। অন্য কিছু যদিও করি, তা এখন বলা মুশকিল। গান তো আমার হাতে আছে। নিজের মতো গিটার তো প্রতিদিন বাজাই।
আপনার বাবার অনেকগুলো গিটার। এগুলো নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে আপনার পরিবারের?
এসব নিয়ে ভাবার সময় আমাদের এখনো আসেনি। আরও কিছুদিন যাক, এরপর ভাবা যাবে।