আত্মহত্যা : জীবনের সমাধান মিলবে?

ইসলাম নৈরাশ্যকে হারাম ঘোষণা করেছে। মানব সাধ্যতীত এমন কোনো বিষয় মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়নি মহান স্রষ্টা আল্লাহর পক্ষ থেকে। একমাত্র সাধনার মাধ্যমে অর্জিত হবে মানুষের সফলতা। আত্মহত্যা মানেই হলো আল্লাহর এ অতিবাস্তব আমোঘ বিধানকে অস্বীকার করা। এ অপরাধ মানুষকে সম্ভাবনার সব দুয়ার বন্ধ করে দেয়। মানুষকে এ পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে সাধনা করে অর্জনের জন্য। আত্মহত্যা এ উদ্দেশ্যের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক।
সামাজিক বেড়াজালে পড়ে মানুষ না বুঝে নিজে নিজেকে হত্যা করে থাকে। ইসলামে যেমন নিরপরাধ মানুষ হত্যা নিষিদ্ধ, আত্মহত্যাও তেমন নিষিদ্ধ। মানুষ নিজের প্রাণের মালিক নিজে নয়। প্রত্যেক প্রাণের মালিক মহান রাব্বুল আলামিন। তিনিই জীবন ও মৃত্যু দান করেন। তিনি সব মানুষের জানের নিরাপত্তা দিয়েছেন।

আত্মহত্যার কারণ

 

আত্মহত্যার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। যেমন, মানসিক রোগ, শারীরিক রোগ, আঘাতের যন্ত্রণা, জুয়া খেলা বা নেশা পান, অভিভাবকের ধমকি ও গালি, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ঝগড়া, প্রেমে ব্যর্থ, বিভিন্ন পেরেশানী ইত্যাদি। এভাবে বিভিন্ন কারণে, বিভিন্ন উপায়ে মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে। কখনো অস্ত্র দিয়ে নিজেকে আঘাত করে, কখনো ফ্যানে বা ছাদে বা অন্য কোনো কিছুর ওপর লটকে ফাঁস দিয়ে, বিষপান করে, গাড়ি বা রেলের চাকায় ফেলে, ঘুমের ওষুধ খেয়ে, ছাদের ওপর থেকে লাফ দিয়ে, আত্মঘাতি বোমা শরীরে বেঁধে হামলা করার মাধ্যমে, গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে ও ছুরিকাঘাতে আত্মহত্যা করে।

আত্মহত্যার বিধান
ভুলে আত্মহত্যার শাস্তি হবে না। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে যদি আত্মহত্যা করে, তখন তা হারাম ও তার শাস্তি জাহান্নাম। পরকালে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে।
মহান আল্ল¬াহ ইরশাদ করেন, আর যে কেউ স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি হবে জাহান্নাম। তন্মধ্যে সে সদা অবস্থান করবে এবং আল্ল¬াহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ ও তাকে অভিশপ্ত করেন। তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। (সুরা : নিসা, আয়াত : ৯৩) এ আয়াতে আত্মহত্যার বিষয়ও রয়েছে।
বাহরুর রায়েকে এসেছে, ফতওয়ায়ে কাজিখানে কিতাবুল ওয়াকফে আছে, দুই ব্যক্তির মধ্যে একজন নিজেকে হত্যা করেছে। আর দ্বিতীয়জন অন্যকে হত্যা করেছে, তখন যে নিজেকে হত্যা করেছে, তার পাপ বেশি হবে। (বাহরুর রায়েক, খন্ড ২, পৃ. ২১৫)। কেননা অন্যকে হত্যা করলে আপসের মাধ্যমে তাওবা করার সুযোগ থাকে; কিন্তু আত্মহত্যাকারীর জন্য তাওবার কোনো পথ থাকে না।

আত্মহত্যার শাস্তি

আত্মহত্যাকারী নিজেকে যে উপায়ে হত্যা করবে, তাকে সেভাবে জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, সে জাহান্নামে লাফ দিতে থাকবে স্থায়ীভাবে। আর যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে স্থায়ীভাবে থাকবে। আর যে ব্যক্তি নিজেকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করবে, জাহান্নামে সেই ছুরি তার হাতে থাকবে। তা দিয়ে সে তার পেটে আঘাত করবে, তাতে সে স্থায়ীভাবে থাকবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭৭৮)

পরিশেষে বলা যায়, আত্মহত্যা পরকালে জাহান্নামের কারণ। অন্যকে হত্যা করার চেয়ে নিজেকে হত্যা করার শাস্তি বেশি। তাই ইসলামে আত্মহত্যার কোনো পথ নেই।