ইলমের ফজিলত ও গুরুত্ব

ইসলাম শব্দের অর্থ হচ্ছে আনুগত্য ও আত্মসমর্পণ। প্রতিটি মুসলিম আনুগত্য করবে, কীভাবে আনুগত্য করবে এবং কী কী কাজ থেকে বিরত থাকবে তা জানার জন্য ইলম বা জ্ঞানের প্রয়োজন। এ জন্যই আল্লাহপাক নবুওয়াতের সূচনাতেই সর্বপ্রথম যে আয়াতগুলো হেরা গুহায় নাজিল করেন, তাতে ইলমের গুরুত্ব প্রকাশ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন- ১. (হে নবী), তোমার রবের নামে। যিনি সৃষ্টি করেছেন। ২. জমাটবাঁধা রক্তের দলা থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। ৩. পড়ো, এবং তোমার রব বড় মেহেরবান। ৪. যিনি কলমের সাহায্যে জ্ঞান শিখিয়েছেন। (সুরা আলাক, আয়াত ১-৪)

এই আয়াতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- ক. মহান আল্লাহপাকের সর্বপ্রথম নির্দেশ হচ্ছে ‘পড়ো’। খ. কলমের সাহায্যে তিনি মানবজাতিকে জ্ঞানদান করেছেন। এই আয়াতের প্রথম আদেশ থেকেই ইলমের ফজিলত সুস্পষ্ট। অন্য একটি আয়াতে আল্লাহপাক আরো ইরশাদ করেছেন- বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান? (সুরা জুমার, আয়াত : ৯) অন্য আয়াতে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে ঈমান এনেছে এবং যাদের জ্ঞানদান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদায় উন্নত করবেন। (সুরা মুজাদালা, আয়াত : ১১)

 

নবী করিম (সা.)-কে কিতাব ও হিকমত দানের মাধ্যমে তাঁকে যে মহান মর্যাদা দান করা হয়েছিল, সে প্রসঙ্গে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন- আল্লাহ আপনার প্রতি কিতাব ও হিকমত অবতীর্ণ করেছেন এবং আপনি যা জানতেন না তা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন। (সুরা নিসা, আয়াত : ১১৩) ইলম (জ্ঞান) অন্বেষণ প্রতিটি মুসলমানের ওপর ফরজ। আল্লাহর প্রিয়পাত্র হতে হলে অবশ্যই ইলম অর্জন করে তাঁর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির বিষয়গুলো জেনে সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। আর এ উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি জ্ঞানান্বেষণ করতে থাকবে, আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা যে কত বেশি, নিম্নবর্ণিত হাদিসটি তার প্রমাণ।

হজরত আবুদ্ দারদা (রা.) বর্ণনা করেন- আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ইলম অন্বেষণের লক্ষ্যে পথ চলে, আল্লাহপাক তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেবেন। তালিবে ইল্ম (শিক্ষার্থী)-এর কাজে সন্তুষ্ট হয়ে ফিরিশতাগণ তাদের জন্য পর বিছিয়ে দেন। আর আলিমের জন্য আসমান-জমিনের সবকিছু ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। এমনকি পানির মাছও। আবিদ ব্যক্তির তুলনায় আলিমের মর্যাদা ঠিক সেরূপ, যেমনটি পূর্ণিমার চাঁদের মর্যাদা অন্য সব নক্ষত্রের তুলনায়। আলিমগণ হচ্ছেন নবীগণের ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী। আর নবীগণ কাউকে দিনার ও দিরহামের উত্তরাধিকারী করে যাননি। তাঁরা উত্তরাধিকারী করেন ইলমের। যে ব্যক্তি তা অর্জন করল, সে প্রভূত কল্যাণ লাভ করল।