বিশ্বাস হচ্ছে না! মাস খানেক আগে একটি অনলাইন নিলামে প্রায় ১৪ লক্ষ মার্কিন ডলার দর উঠেছিল একটি কবুতরের। ওই দামে কবুতরটি কিনে নেন এক চিনা নাগরিক। ভাবছেন একটি কবুতরের এত দাম! এই কবুতরটির এমন বিপুল দাম হওয়ার পিছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ। এটি একটি বেলজিয়ামের কবুতর। মহামূল্য এই পায়রাটির নাম আর্মান্দো। এটি রেসিং হোমার প্রজাতীর কবুতর। এই জাতীয় কবুতরের দিক নির্ণয় করার ক্ষমতা অসাধারণ! সঠিক দিন চিনে মাইলের পর মাইল অনায়াসে পাড়ি দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এই রেসিং হোমার-এর।
রেসিং হোমার
তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, নিখুঁত অনুমান ক্ষমতার জন্য বিগত প্রায় ২৫০-৩০০ বছর ধরে রেসিং-হোমার প্রজাতীর পায়রার যথেষ্ট কদর রয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। উনবিংশ শতাব্দীতে বেলজিয়াম এবং ইংল্যান্ডের বিভিন্ন এলাকায় এই প্রজাতীর কবুতর প্রতিপালন এবং ওড়ানোর প্রতিযোগিতার চল ছিল। পরে তা ক্রমশ ইউরোপের অন্যান্য দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও কবুতর প্রতিপালনের চল শতাব্দী প্রাচীন। রেসিং হোমার প্রজাতীর পায়রা প্রতিপালনে বেলজিয়াম অন্যতম হলেও এর আকাশ ছোঁয়া দর বরাবর দিয়ে এসেছে চিন। চিনে ধনী বিত্তবান থেকে মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত— সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যেই পায়রা প্রতিপালনের চল রয়েছে। তাছাড়া, শরৎ আর বসন্তকালে চিনে রাজকীয় আয়োজনে পায়রা ওড়ানো প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন হাজার হাজার মানুষ। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্যই এত দাম দিয়ে এই পায়রাটি কেনা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
রেসার বা রেসিং হোমার বিশেষ ভাবে ব্রিড করা কবুতর যা কিনা রেসিং এর জন্যে উদ্ভাবন করা হয়েছে । এর বিশেষ ক্ষমতা হল এর “হোমিং অ্যাবিলিটি” বা বাড়ি চিনে ফিরে আসার দক্ষতা । তাছাড়া প্রচন্ড শক্তিশালী এই কবুতর ঘন্টার পর ঘন্টা বিশ্রাম না নিয়েই উড়তে পারে । বাড়ি ফেরার আগ পর্যন্ত কোথাও থামেও না ।
রেসিং হোমার বা রেসার কবুতর সর্বপ্রথম বেলজিয়াম এবং ইংল্যান্ডে উদ্ভাবন করা হয় ১৯ শতকের দিকে । এরা বহুধরনের কবুতরের ক্রস ব্রিডিং এর মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়েছে । মূলত এদেরকে – স্মেরলে (smerle ) , ফ্রেঞ্চ কুমুলেট ( French cumulet ) , ইংলিশ ক্যারিয়ার (English carrier ) , ড্রাগুন (Dragoon ) এবং হর্সম্যান (Horseman ) ক্রসের মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়েছে । হাই-ফ্লাইং ফ্রেঞ্চ কুমুলেট থেকে এরা অনেকক্ষন উড়ার দক্ষতা এবং ইংলিশ ক্যারিয়ার থেকে এরা বাড়ি চিনে ফিরে আসার দক্ষতা লাভ করেছে ।
বর্তমানে রেসার নিয়ে বহু দেশে গবেষনা করা হয় । অনেক কবুতর ব্রিডার এই রেসার এর উড়বার ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যে গবেষনা করে যাচ্ছেন । বহু ধরনের রঙের রেসার ও উদ্ভাবন করা হয়েছে । বেলজিয়াম , নেদারল্যান্ড , ইংল্যান্ড , চীন এবং অস্ট্রেলিয়ার বহু কবুতর ব্রিডার এ কাজে নিরন্তর শ্রম এবং মেধা ব্যায় করে যাচ্ছেন ।
তবে বাংলাদেশে মূলত – ব্লু-বার , ব্লু-বারলেস , ব্লু-চেকার , ব্ল্যাক , ব্ল্যাক-চেকার , হোয়াইট , রেড-বার , রেড-বারলেস , রেড-চেকার এবং গ্রিজেল রঙের রেসার দেখা যায় ।
রেসার এর উড়বার ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যে আমাদের দেশে অনেকে রেসার এর সাথে জালালী বা রক পিজিয়ন , হাই-ফ্লাইয়ার এর সাথে ক্রস দেন । যদি ক্রসের বাচ্চা রেসার এর মত দেখতে হয় , তাহলে অবশ্যই একে রেসার বলা যাবে । কারন রেসার নিজেই অনেকগুলো জাতের ক্রস । আসলে বেশীরভাগ ফ্যান্সী কবুতরই অনেক কিছুর ক্রস থেকে উদ্ভাবন করা হয়েছে । ন্যাশনাল পিজিয়ন অ্যাসোসিয়েশন (NPA ) , যেটা কিনা আমেরিকায় অবস্থিত যদি কোন জাতের কবুতরকে স্বীকৃতি দেয় , তাহলেই সেই জাত ফ্যান্সী বা রেসার বা হাই-ফ্লাইয়ার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে যায় । সাধারনত গ্রিজেল রঙের রেসার গুলো সাদা-কালো রঙের হাই-ফ্লাইয়ার এর সাথে রেসার এর ক্রস দিয়েই তৈরী হয়েছিলো ।
Post Views: 9,531