ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ইএনটি বিভাগের প্রধান ডা. এ এফ মহিউদ্দিন খানের পরামর্শ : কানের পর্দা ফেটে গেলে করণীয়

কানের পর্দা ফেটে গেলে

কানের পর্দা ফেটে গেলে কানে ব্যথা, মাথা ঘোরা, শোঁ শোঁ শব্দ করা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। এ সময় গুরুত্ব না দিলে পরিণতিতে হতে পারে বধিরতা। লিখেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এ এফ মহিউদ্দিন খান

বিভিন্ন কারণে কানের পর্দা ফেটে যেতে বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যেমন—

 

❏  কানের কোনো অসুখ যেমন—মধ্যকর্ণে ক্রনিক সাপোরেটিভ অটাইটিস মিডিয়া হলে।

❏  কোনো কিছু দিয়ে কান খোঁচালে। যেমন—কটন বাড।

❏  কানে কোনো কিছু ঢুকলে এবং অদক্ষ হাতে তা বের করলে।

❏  দুর্ঘটনা বা আঘাত লাগলে।

❏  হঠাৎ কানে বাতাসের চাপ বেড়ে গেলে। যেমন—থাপ্পড় মারা, বোমা বিস্ফোরণ, অতি উচ্চ শব্দ ইত্যাদি।

❏  সাঁতার কাটার সময় পানির বাড়তি চাপের কারণে পর্দায় চাপ পড়লে।

❏  অন্য অপারেশনের সময় কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হলে।

❏  যাদের কানের পর্দা আগে থেকেই দুর্বল বা ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের ক্ষেত্রে নাক চেপে কানে বাতাস দিয়ে চাপ দিলে।

 

উপসর্গ

❏  প্রথমে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, যা পরবর্তী সময়ে কমে আসে।

❏  কান দিয়ে রক্ত পড়া, কম শোনা

❏  মাথা ঘোরানো বা ভার্টিগো

❏  কানে শোঁ শোঁ বা ভোঁ ভোঁ শব্দ (টিনিটাস) হওয়া।

 

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

অটোস্কোপের মাধ্যমে খালি চোখেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কানের পর্দা ফেটে গেছে কি না তা নির্ণয় করা যায়। এ ছাড়া কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষারও প্রয়োজন হতে পারে। এর মধ্যে আছে কানের ভেতর থেকে বের হওয়া তরলের কালচার পরীক্ষা, টিউনিং ফর্ক ইভাল্যুয়েশন, টিমপ্যানোমেট্রি। এগুলো থেকেও যথাযথ রোগ নির্ণয় না করা গেলে অডিওলজি টেস্ট করা হয়।

 

চিকিৎসা

কানের পর্দা ফেটে গেলে একজন নাক-কান-গলা রোগ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। নিজে নিজে কানের ড্রপ ব্যবহার করা উচিত নয়। এ ছাড়া কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত।

❏  কানে কোনোভাবেই যেন পানি না ঢোকে—এ জন্য গোসলের সময় কানে তুলা বা ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করা।

❏  সাঁতার না কাটা

❏  উড়োজাহাজে ভ্রমণ এড়িয়ে চলা

❏  উচ্চ শব্দে গান না শোনা, হেড ফোন ব্যবহার না করা

❏  কানে যাতে ইনফেকশন না হয়, এ জন্য কোনো অসুবিধা দেখামাত্র চিকিৎসা করা

❏  কান না খোঁচানো

❏  নিজে নিজে কোনো ওষুধ দেওয়া থেকে বিরত থাকা

❏  কানে কোনো কিছু গেলে বা আটকে থাকলে নিজে তা বের করার চেষ্টা না করা।

যদি তিন মাসের মধ্যেও ক্ষতিগ্রস্ত পর্দা ঠিক না হয়, সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে অপারেশনের মাধ্যমে কানের পর্দা ঠিক করা যায়।

 

জটিলতা

যথাসময়ে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার চিকিৎসা না হলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে। এ ছাড়া মধ্যকর্ণে ঘন ঘন ইনফেকশন হয়ে স্থায়ীভাবে শ্রবণশক্তি বিলোপ হতে পারে ও মধ্যকর্ণে সিস্ট (কোলেস্টিটোমা) হতে পারে।

https://www.youtube.com/watch?v=wfEPaBfx6p4&t=1s

 

কানের পর্দা