কীভাবে এলো মহান মে দিবস?
মহান মে দিবস আজ। শ্রমিকের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে অধিকার আদায়ের গৌরবময় দিন। সারাবিশ্বেই দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হয়। দিবসটি প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে শ্রমিকদের রক্তঝরা আত্মত্যাগের ইতিহাস।
শ্রমিকদের শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটার স্বপ্ন দেখার দিন। বিশ্বজুড়ে শ্রমজীবী মানুষের অনুপ্রেরণার দিন। ১৩৩ বছর আগে ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা শ্রমের উপযুক্ত দাম এবং দৈনিক অনধিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে নামে। সে সময় আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। এতে হতাহত হন অনেক শ্রমিক। তাঁদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দৈনিক কাজের সময় আট ঘণ্টা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর পর থেকে বিশ্বজুড়ে দিনটি ‘মে দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
মে দিবসের প্রধান দাবি আট ঘণ্টা কাজ। ১৯১৯ সালের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও কনভেনশন অনুসারে বিশ্বের প্রায় সব দেশে আইন করে তা কার্যকর করে। বাংলাদেশও আইএলওর এই কনভেনশন অনুসমর্থন করে। কিন্তু বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে গেলেও শ্রমিক অধিকার এখনো অধরা। প্রবৃদ্ধি বাড়লেও শ্রমিকের আয়ের অংশ তারা পাচ্ছে না। ফলে বাড়ছে বৈষম্য। সবাইকে অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হয়। ১৩৩ বছর আগের আট কর্মঘণ্টার দাবি তাদের কাছে এখনো স্বপ্নের মতো।
দেশের প্রধান প্রধান শ্রম খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইনে মে দিবসের মানদণ্ড সমর্থন করা হলেও আদতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা মানার ক্ষেত্রে গড়িমসি করছে বছরের পর বছর। ফলে শ্রম আইনে আট ঘণ্টা কাজ, বিশ্রাম, ছুটি ও অন্য অধিকারগুলো এখনো অনেক শ্রমিকের কাছে ‘সোনার হরিণ’।
১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর শ্রমিকদের জীবনদান এবং আন্দোলনের স্বীকৃতি দিতে পহেলা মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। এর পরের বছর ১৮৯০ সাল থেকে পহেলা মে শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
এ ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংঘঠন মে দিবস পালন করে। দিবসটি উপলক্ষে এদিন দেশে সরকারি ছুটি থাকে। বন্ধ থাকে কল-কারখানা ও গাড়ির চাকা। এদিন শ্রমিকরা বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মে দিবসের র্যালিতে অংশ নেন।
মে দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, শ্রমমন্ত্রী এবং বিরোধীদল পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্টনিক মিডিয়াগুলোও মে দিবস উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করে থাকে।
বাংলাদেশে এখনও শ্রমিকরা তাদের প্রাপ্য মজুরি থেকে বঞ্চিত। দেশে এখনও মজুরি বৈষমের স্বীকার শ্রমিকরা। তাই মে দিবস শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, শ্রমিকদের যথাযোগ্য প্রাপ্য ও সুযোগ-সুবিধা দিলেই মে দিবসের স্বার্থকতা আসবে বলে শ্রমিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন।
মে দিবসের চেতনা ও দেশের শ্রমিক সমাজের প্রেক্ষাপটের কথা জানতে চাইলে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ১৩৩ বছর আগে আট ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবি করে আন্দোলন করা হলেও এখনো এটা আমাদের শ্রমিকদের কাছে অধরা। অনেকটা স্বপ্নের মতো।