আমরা সাধারণত কোনো খাবার রান্না করার আগে সেটি ধুয়ে নেই, যাতে করে খাবার ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণু থেকে মুক্ত থাকে।
তবে ধোয়ার ফলে সব খাবারের ব্যাকটেরিয়া দূর হয় না বরং কিছু কিছু খাবারের ব্যাকটেরিয়া আরো বেশি ছড়িয়ে পড়ে। এমন ৬টি খাবার সম্পর্কে জেনে নিন, যেগুলো রান্নার আগে ধোয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে এখন থেকে একবার হলেও ভেবে দেখতে হবে।
মুরগির মাংস ও মাছ
মুরগির মাংস রান্নার আগে বেসিনে ভালোভাবে ধুয়ে নেন? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে এই অভ্যাস আজই ত্যাগ করুন। মুরগির কাঁচা মাংস ধুয়ে নিলে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বা প্যাথোজেন তো দূর হয়ই না বরং মাংসের সমগ্র পৃষ্ঠ ও অভ্যন্তরে এবং ছিটে আসা পানি থেকে মানব শরীরেও বিস্তার ঘটতে পারে। নিউ ইয়র্কের সিওসেট হাসপাতালের পুষ্টি ও খাদ্য সেবা বিভাগের পরিচালক এরিক সিডেন বলেন, ‘বেসিনে কাঁচা মুরগির মাংস ধোয়ার ফলে আপনি ব্যাকটেরিয়াকে আপনার রান্নাঘরের সম্ভাব্য সবখানে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। মাংস ধোয়ার সময় পানি ছিটিয়ে বা গড়িয়ে পরে রান্নাঘরের পরিষ্কার স্থানেও ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে।’
মুরগির কাঁচা মাংস থেকে যদি ব্যাকটেরিয়াকে প্রকৃত অর্থে দূর করতে চান, তাহলে এটি না ধুয়ে রান্না করুন। এই নিয়ম শুধু মুরগির মাংস নয়, মাছ ও অন্যান্য কাঁচা মাংসের ক্ষেত্রেও মেনে চলুন।
লাল মাংস
মুরগি মাংসের মতো লাল মাংসও (যেমন গরুর মাংস, ভেড়ার মাংস) রান্না করার আগে পানিতে ধুয়ে নেওয়া উচিৎ নয়। লাল মাংস পানিতে ধোয়ার ফলে এর মধ্যে পানি প্রবেশ করে খাবারের স্বাদকে নষ্ট করে দেয়। সিডেন বলেন, ‘ধোয়ার সময় মাংসে পানি মিশে যায় যেটা পরবর্তীতে রান্না করার সময় বাষ্পের তৈরি করে এবং মাংসের স্বাদকে নষ্ট করে দেয়।’ তবে যদি আপনি এই অভ্যাসকে দূর করতে না পারেন, তাহলে মাংস ধোয়ার পর পরিষ্কার কাগজ দিয়ে মুছে নিতে পারেন, যাতে করে মাংসের ভেতরে থাকা পানিকে কাগজ শুষে নিয়ে আদ্রতা কমাতে পারে। মাংস ধোয়ার পর ভালোভাবে বেসিন ও তার আশপাশ পরিষ্কার রাখুন।
মাংসকে মেরিনেট করার ক্ষেত্রে ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচারের পরামর্শ হচ্ছে, মসলা মাখানো মাংস ফ্রিজে রেখে দিন এবং লক্ষ্য রাখুন মাংস থেকে যেন কোনো তরল বের না হয়। কারণ এটি থেকে ফুড পয়জনিংয়ের সৃষ্টি হয়।
পূর্বে ধোয়া সবজি ও সালাদ
আপনি যদি নিশ্চিত থাকেন যে, সবজি বা সালাদ ধুয়ে তা প্যাকেটজাত করা হয়েছে, তাহলে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে কেনা এ ধরনের প্যাকেটজাত সবজি বা সালাদ পুনরায় ধোয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এতে করে যেমন পানির অপচয় রোধ হবে, তেমনি সময় বাঁচবে। যে সময় আপনি ধোয়ার পেছনে ব্যয় করবেন, সেই সময়ে আপনি অন্য কোনো খাবার রান্না করতে পারবেন। তাই এ ধরনের সবজিকে না ধুয়ে সরাসরি সালাদ হিসেবে ব্যবহার করুন অথবা রান্না করুন।
মাশরুম
মাংসের মতো মাশরুম পানিতে ধোয়ার ফলে স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। তবে পানিতে ধোয়ার ফলে মাশরুম ক্ষতিকর কিছু ছড়ায় না। সিডেন বলেন, ‘অধিকাংশ শেফ আপনাকে মাশরুম পরিষ্কার করার জন্য কখনোই পানিতে ভিজিয়ে রাখতে বা ধোয়ার জন্য বলবে না। বরং তারা পেপার টাওয়েল দিয়ে মাশরুম ভালোভাবে মুছে নিতে বলবে।’ মাশরুম পানি বেশি শোষণ করে থাকে, তাই পানিতে ধুয়ে নিলে এটি আদ্র ও রাবারের মতো হয়ে যাবে। ফলে সেই মাশরুম থেকে তৈরি খাবারের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাবে।
ডিম
বেশিরভাগ মানুষ ডিম সেদ্ধ করার আগে তা ধুয়ে নেন না। যদিও অনেকে মনে করেন, সেদ্ধ করার আগে ডিম ধুয়ে নেওয়া উচিৎ। কোন পরিবেশে মুরগি ডিম পারছে, তা জানা না থাকার কারণে। যুক্তরাষ্ট্রে পরিষ্কার ডিম বাজারজাত করা হয়, তাই ধোয়ার প্রয়োজন পড়ে না। আমাদের দেশে যদি নিশ্চিত থাকেন, পরিষ্কার ডিম কিনছেন তাহলে ধুয়ে সেদ্ধ করার প্রয়োজন নেই। বরঞ্চ রান্নার ক্ষেত্রে ডিমের ভেতরে থাকা সালমোনেলা ও অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া থেকে খাদ্য বিষাক্ততা প্রতিরোধ করতে ডিম ভালোভাবে সেদ্ধ করতে ভুলবেন না।
পাস্তা
অনেকে পাস্তা সেদ্ধ করার পর পানিতে ধুয়ে নেন। কিন্তু সুস্বাদু এই খাবারটি রান্না করার ক্ষেত্রে এটি অনেক বড় একটি ভুল। কারণ পাস্তা সেদ্ধ করার পানিতে ধোয়ার ফলে এর মধ্যে থাকা স্টার্চ বা শ্বেতসার পানির সঙ্গে বের হয়ে যায়। এতে করে পাস্তার স্বাদ যেমন নষ্ট হয়ে যায়, তেমনি খাবারের পুষ্টিগুণও কমে যায়। যদি আপনি পাস্তাকে পরিষ্কার করতে চান, তাহলে সেটা সেদ্ধ করার আগে করতে হবে। এতে করে পাস্তার স্বাদ অটুট থাকবে।