কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। গেঁটেবাতসহ ব্যথাজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন তিনি। তাঁর বাঁ হাতটা বাঁকা হয়ে গেছে। হাত ঝিমঝিম করে। বাঁ কাঁধও নাড়াতে পারেন না। সংশ্লিষ্ট হাতটিও ওপরে তুলতে পারেন না, চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে বলে ফ্রোজেন শোল্ডার। ঘাড় ও কোমরে ব্যথা। বাঁ হিপ জয়েন্টে আর্থ্রাইটিস বেড়েছে।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে এমনটাই বলেছেন তাঁর চিকিৎসার জন্য গঠন করা বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক আবদুল জলিল চৌধুরী। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু করতে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) গতকাল সোমবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আবদুল জলিল চৌধুরী এসব তথ্য জানান। এ সময় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের চারজন সদস্যই উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক আবদুল জলিল বলেন, খালেদা জিয়া এত দিন ধরে যে ওষুধ খাচ্ছিলেন সেগুলোর ডোজ ঠিক ছিল না। তাঁর ওষুধের ডোজ কিছুটা পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। ৩০ বছর ধরে খালেদা জিয়া এই রোগে ভুগছেন। রোগটির নাম রিউমাটো আর্থ্রাইটিস। এই রোগ নিয়ন্ত্রণে না রাখার কারণে তাঁর শরীরে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর দুই হাঁটু আগে থেকে রিপ্লেস করা। সেখানে কিছুদিন আগে ফুলে গিয়েছিল। ওষুধ দিয়ে তা ঠিক করা হয়েছে।
ডা. জলিল বলেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) ২০ বছর ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছেন। ডায়াবেটিস কন্ট্রোলের জন্য তাঁকে ইনসুলিন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা নেননি। এখন ডায়াবেটিসের কী অবস্থা সেটি আমাদের দেখতে হবে। মাঝখানে তাঁর সুগার কমে হাইপো-ডায়াবেটিস হয়ে গিয়েছিল। তিনি ব্লাড প্রেসারের ওষুধ খাচ্ছেন। মাঝখানে কিছুদিন আগে তাঁর জ্বর হয়েছিল। তাঁর শরীরে সোডিয়াম কমে গিয়েছিল। ওষুধ দিয়ে সেটা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।’
মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সুষ্ঠু চিকিৎসায় যে উচ্চমাত্রার ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে তা করার আগে হার্ট, কিডনি, লাংসহ বেশ কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। কোনো ধরনের ইনফেকশন আছে কি না তা জানতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।’
খালেদা জিয়ার অসুখের বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ডা. জলিল বলেন, ‘এটি এক ধরনের বাত, গিঁটে গিঁটে ব্যথা হয়। এর চিকিৎসা না হলে ঘাড় ও কোমরে ব্যথা হয়। এর চিকিৎসা একটি চলমান প্রক্রিয়া। দুজন জুনিয়র চিকিৎসককে সার্বক্ষণিক খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাখা হয়েছে। তারা তাঁর হিস্ট্রি সংগ্রহ করছে। এটা চিকিৎসারই অংশ।’ ফিজিওথেরাপি দেওয়া হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ফিজিওথেরাপি শুরু করে দেব।’
মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ড. সৈয়দ আতিকুল হক বলেন, ‘গতকাল (রবিবার) রাত ১০টার সময় খালেদা জিয়াকে দেখেছি। উনার আর্থ্রাইটিসের কন্ট্রোল অসম্পূর্ণ। তাঁর ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে নেই। এ ধরনের রোগের চিকিৎসা শুরু করতে পূর্বপ্রস্তুতি প্রয়োজন রয়েছে। প্রস্তুতির জন্য দুই সপ্তাহ সময় প্রয়োজন হয়। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগে তাঁর রিপোর্ট দেখব। রিপোর্ট অনুকূলে থাকলে দুই সপ্তাহ পর তাঁর চিকিৎসা শুরু করতে পারব।’
অধ্যাপক জলিল চৌধুরী বলেন, ‘মেডিক্যাল বোর্ডের সবাই একসঙ্গে না দেখলেও কয়েকজন সদস্য খালেদা জিয়ার সঙ্গে পৃথকভাবে দেখা করেন। গতকাল (রবিবার) রাতে অধ্যাপক আতিকুল হক চৌধুরী তাঁর সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন। এ সময় খালেদা জিয়ার পছন্দের চিকিৎসক ডা. মামুনও ছিলেন।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক জলিল জানান, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা পড়েছেন। বোর্ড গঠনে হাইকোর্টের নির্দেশনার কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি বলেই তাঁদের ধারণা।
খালেদা জিয়াকে আদালতের নির্দেশে শনিবার বিকেলে কারাগার থেকে বিএসএমএমইউয়ে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে ৬১২ নম্বর কেবিনে রয়েছেন।