গীতিস বিউটি পার্লারের স্বত্বাধিকারী গীতি বিল্লাহার পরামর্শ : ত্বক ও চুলের যত্নে নিমপাতা

 

ত্বক ও চুলের যত্নে নিমপাতা

ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ত্বক ও চুল তার স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে। এতে ত্বক শুষ্ক ও বিবর্ণ হয়ে যায়। নানা রকমের সমস্যা দেখা দেয় ত্বকে। আবার চুলের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। ঋতু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন ধরনের সমস্যা অনেকেরই ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ ধরনের সমস্যার মোকাবেলার জন্য নিমপাতার কোনো বিকল্প নেই। এসব ক্ষেত্রে নিমপাতা ব্যবহারের পদ্ধতি সম্পর্কে জানাচ্ছেন গীতিস বিউটি পার্লারের স্বত্বাধিকারী গীতি বিল্লাহ

নিমপাতা অ্যান্টিস্পেটিকের কাজ করে। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন সমস্যার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে এবং ব্যবহারে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। বিভিন্ন রোগ যেমন গুটিবসন্ত, অ্যালার্জি, ঘামাচি ও উকুন যাদের হয় নিমপাতা তাদের জন্য খুবই উপকারী। অনেক সময় অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার ফলে মাথার স্ক্যাল্পে গোটা হয়ে থাকে। এতে মাথার খুব অসুবিধা হয়ে থাকে। চুল আঁচড়ানোর সময় ব্যথা পাওয়া যায়। এসব মসস্যা খুব সহজেই সমাধান হয় এ নিমপাতা ব্যবহারের ফলে।

তবে বাহ্যিকভাবে ব্যবহারের আগে শরীরের ভেতরেও পরিষ্কার রাখতে হবে। নিমপাতা যেমন শরীরে ব্যবহার করা যায় তেমনিভাবে খাওয়াও যায়।

* কাঁচা হলুদের সঙ্গে কয়েকটি নিমপাতা ভালো করে পেস্ট তৈরি করে নিয়ে রোজ সকালে খালি পেটে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

* হলুদের রসের সঙ্গে নিমপাতার রস মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এতে ব্রণের সমস্যা কমে যাবে। এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। নিমের বড়ি শরীরের জন্য খুবই উপকারী। যাদের পেটে ঘা-আলসার সমস্যা থাকে তাদের জন্য নিমপাতা খুবই উপকারী। ডায়াবেটিক রোগীর জন্য নিমপাতার ভূমিকা অপরিসীম। নিমপাতা ভালো করে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে পেস্ট তৈরি করে গোল গোল বড়ি তৈরি করে রোদে শুকিয়ে নিয়ে কাচের বোয়ামে রেখে দিলে প্রতিদিন খেলে উপকার পাওয়া যাবে। এটা খাওয়ার আগেও খেতে পারেন অথবা খাবারের পরও খেতে পারেন। তবে ডায়বেটিস যদি খুব বেশি কমে যায় তাহলে খাওয়া বন্ধ করে দেবেন। এ ছাড়া নিমপাতার ভর্তাও খুবই উপকারী। নিমপাতা, লবণ ও রসুন দিয়ে পাটায় বেটে ভর্তা তৈরি করে গরম ভাতের সঙ্গে খেতে পারেন। এ ছাড়া নিমপাতা ডুবো তেলে ফ্রাই করেও খেতে পারেন। এটা কাচের বোতলে রেখে খেতে পারেন। নিমপাতা রোগ প্রতিরোধের সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ত্বকের যত্নেও নিমপাতার ভূমিকা অপরিসীম।

* নিমপাতা ফুটন্ত পানিতে ভালো করে জ্বাল করে ঠাণ্ডা করে বোতলে ভরে ফ্রিজে রাখুন। প্রতিদিন গোসলের সময় পানির সঙ্গে মিশিয়ে মাথায় ও সারা শরীরে ব্যবহারের ফলে মাথার খুশকিও চুলকানি কমে যাবে।

* সপ্তাহে একদিন নিমপাতা, হলুদ, অলিভওয়েল পরিমাণমতো মিশিয়ে নিয়ে পেস্ট তৈরি করে সারা শরীরে ম্যাসাজ করে গোসল করলে অ্যালার্জি চলে যাবে। এ ছাড়া ত্বকের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি পাবে। সানবার্নও কমে যাবে।

* নিমপাতা, তুলসীপাতা, পুদিনাপাতা ও মুলতানি মাটি ভালো করে পেস্ট তৈরি করে নিয়ে মুখে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন এতে ব্রণের দাগ চলে যাবে।

* শুকনো কাঁচা বেলের টুকরা, তুলসীপাতা, নিমপাতা, মেথি, এক চিমটি কর্পূর, কাঁচা হলুদ ও মুলতানি মাটি ভালো করে পেস্ট তৈরি করে সারা শরীর ও মুখে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে অনেক দিনের পুরনো দাগ চলে যাবে নিয়মিত ব্যবহারের ফলে। অ্যাালার্জি ও মেসতা কমে যাবে নিয়মিত ব্যবহারের ফলে।

* আকাক্সক্ষা (হারবাল দোকানে পাওয়া যায়), নিমপাতা, আমলকী মুলতানি মাটি, কমলার রসের সঙ্গে মিশিয়ে ভালো করে পেস্ট তৈরি করে নিয়ে ২০ মিনিট রেখে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে রোদে পোড়া দাগ কমে যাবে।

উকুননাশক হিসেবে নিমপাতার গুরুত্ব : যাদের উকুনের সমস্যা থাকে তারা যদি নিয়মিত নিমপাতা ব্যবহার করেন তবে উকুন কমে যাবে।

* নিমপাতা, পুদিনাপাতা ভালো করে পেস্ট করে নিয়ে পুরো চুলে ও স্ক্যাল্পে আধা ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। এতে উকুন চলে যাবে। পেস্টে যদি তেল মিক্সড না করেন তাহলে শ্যাম্পু করার দরকার নেই।

* নিমপাতা ও অল্প নেপথলিন অথবা কর্পূর মিশিয়ে চুলে আধা ঘণ্টা রেখে দিয়ে শ্যাম্পু করে নিলে উকুন চলে যাবে।

নিমপাতার গুণাগুণ বলে শেষ করা যাবে না। এর কোনো বিকল্প নেই। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই ব্যবহারের ফলে। এ ছাড়া ঘরের এক কোণে নিমপাতার ডাল ঝুলিয়ে রাখলে রোগ জীবাণু থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। চালের ড্রামে শুকনা নিমপাতা রেখে দিলে চালে পোকা ধরবে না। আলমারিতে শুকনো নিমপাতা রাখলে তেলাপোকা প্রবেশ করবে না এবং কাপড়ও নষ্ট হবে না পোকার কারণে।

 

ত্বক ও চুলের যত্নে নিমপাতা