প্ল্যাটফর্মে শিক্ষিকাকে মার, বাঁচাল চার ছাত্রী

রেল প্ল্যাটফর্মে এক মহিলাকে ঘিরে ধরে মারছে একদল মহিলা। হাত মিলিয়েছে পুরুষেরাও। সঙ্গে গালিগালাজ। ভয়ে চিৎকার করছেন ওই মহিলা। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ঢাকুরিয়া স্টেশনের অন্য প্ল্যাটফর্ম থেকে এই দৃশ্য চোখে পড়ে চার কিশোরীর। ছুটে রেল লাইন পেরিয়ে তারা জড়িয়ে ধরে ওই মহিলাকে।

আক্রান্ত মহিলা যে ওই চার কিশোরীর স্কুলের শিক্ষিকা! প্রিয় দিদিমণিকে এ ভাবে মার খেতে দেখে ওরা দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি। তখন আক্রমণকারী পুরুষ ও মহিলার দল ঘুষি, চড় মারে ওই কিশোরীদেরও। তার পরেও ওই শিক্ষিকাকে ছাড়েনি তারা। তাঁকে ঘিরে রেখে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে তবে বাড়ি ফিরেছে বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুলের ওই ছাত্রীরা।

প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিশু শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে এ দিন ধুন্ধুমার হয় ওই স্কুলে। তার রেশ পড়ে ঢাকুরিয়া স্টেশনেও। বাড়ি ফেরার সময়েও একদল বহিরাগত ও অভিভাবকদের একাংশ ওই স্কুলের প্রাথমিকের শিক্ষিকা রূপা ভট্টাচার্যকে মারধর করে।

স্কুল না হওয়ায় সেই সময় গড়িয়ার বাড়িতে ফিরছিল দ্বাদশ শ্রেণির চার ছাত্রী— তনুশ্রী প্রসাদ, পৌলোমী সিংহ, অয়ন্তিকা প্রামাণিক ও ইন্দ্রাণী দাস। ট্রেনের জন্য তারা অপেক্ষা করছিল ঢাকুরিয়া স্টেশনে। তনুশ্রী বলে, ‘‘হঠাৎ দেখি, ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে স্কুলের রূপা মিসকে ঘিরে ধরে মারধর করছে পুরুষ-মহিলারা। সবাই মজা দেখছে। চোখের সামনে মিসকে ওভাবে দেখে মাথা ঠিক ছিল না। ২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে রেল লাইনে লাফ দিই সকলেই। তারপর লাইন টপকে প্ল্যাটফর্মে উঠে মিসকে জড়িয়ে ধরি। আমার ওপরে এলোপাথাড়ি ঘুসি পড়তে থাকে। তা-ও মিসকে ছাড়িনি।’’ পৌলমীর কথায়, ‘‘যা-ই ঘটুক, তাতে রূপা মিসের দোষ কী? মানুষকে এ ভাবে মারা যায়?’’

রূপাদেবী থাকেন সেলিমপুরে। এই খবর পৌঁছে যায় তাঁর বাড়িতে। দাদা বিশ্বতোষ ভট্টাচার্য স্কুলে যান। তিনি বলেন, ‘‘বোন জীবনের ২৫টা বছর ওই স্কুলকে দিয়েছে। শিশুদের ও প্রাণের থেকেও বেশি ভালবাসে। ওর শাড়ি ছিঁড়ে চশমা ভেঙে দিয়েছে। সব থেকে বেশি আঘাত লেগেছে ওর মনে। এটাই কি ওর প্রাপ্র্য?’’

আর স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে চার ছাত্রী বলছে, ‘‘মিস-রা আমাদের নীতি-নৈতিকতা শিখিয়েছেন। আর তাঁদেরই সঙ্গে যে অনৈতিক ও অন্যায় ঘটনা ঘটল, তাতে আমরা লজ্জিত।’’