সামার টিউলিপ চাষ করে ও বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল মুনাফা

সামার টিউলিপ চাষ করে ও বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল মুনাফা

মূলত থাইল্যান্ডে দেখতে পাওয়া যায় এই ফুল। একে সিয়াম টিউলিপ বলা হয়ে থাকে। সাদা, লাল, গোলাপি, সবুজ নানা রঙের হয়। মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাধারণত এই ফুল ফোটে। নভেম্বর নাগাদ গাছ শুকিয়ে যায়। তবে মাটির নীচে কন্দ থেকে যায়। পরের বছর ওই কন্দ থেকে আবার গাছ হয়। সারা বছর ফুল পেতে গ্রিন হাউস বা শেডনেটে চাষ করতে হবে।

অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করতে হবে জমিতে। মার্চ মাসে কন্দ লাগাতে হবে। সামার টিউলিপ বা সিয়াম টিউলিপের গাছ হলুদ গাছের মতো দেখতে হয়। এরা হলুদ গোত্রেরই গাছ। ফুল দেখতে টিউলিপের মতো এবং গরমে ফুল ফোটে বলে একে সামার টিউলিপ বলা হয়ে থাকে। হলুদের মতোই কন্দ থেকে চারা তৈরি হয়। একটি গাছে কমপক্ষে ৬টি তেউড় হয়। প্রতিটি তেউড়ে ১টি করে ফুল হয়ে থাকে। তিন-চারটি পাতা বের হওয়ার পরই ফুল চলে আসে। খোলা জমির পরিবর্তে পলিহাউসে চাষ করলে ফুলের সাইজ ও রং ভালো হয়। জমিতে বেড তৈরি করে কন্দ লাগাতে হবে। ১ মিটার চওড়া বেডে তিনটি সারি করা হয়ে থাকে। খড় দিয়ে মালঞ্চিং করে দিতে পারলে ভালো। ড্রিপ ইরিগেশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সামার টিউলিপের ২ ধরনের প্রজাতি রয়েছে। একটি প্রজাতির গাছ আকারে বড় এবং ঝাঁকালো। এই প্রজাতির গাছগুলি ২ ফুট দূরত্বে লাগাতে হয়।

 

পাতা সরু প্রজাতির গাছগুলি ১ ফুট দূরত্বে লাগাতে হবে। সামার টিউলিপ চাষে সার হিসেবে মূলত ১০: ২৬:২৬ ব্যবহার করা যেতে পারে। অনুখাদ্য হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে ম্যাগনেশিয়াম সালফেট। ফুলের ডাঁটি বড় না হলে কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে উপযুক্ত দাম পাওয়া যায় না বাজারে। সেক্ষেত্রে গাছে জিব্বারেলিক অ্যাসিড প্রয়োগ করলে ফুলের ডাঁটি বড় হয়ে যায়। জমিতে যেন কোনওভাবেই জল না জমে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। গোড়ায় জল জমলে গাছ মরে যায়। ল্যাদাপোকার আক্রমণ হয়ে থাকে। এই পোকা ফুল ও গাছের পাতা খেয়ে নেয়। ল্যাদাপোকা দমনে বাজার চলতি কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে গাছের পাতা ও ফুল পচে যায়। প্রতিরোধে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। সামার টিউলিপ চাষের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে মদনমোহনবাবু বলেন, থাইল্যান্ডে গিয়ে তিনি প্রথম এই ফুল সেখানকার বাজারে বিক্রি হতে দেখেন। ফুলটি দেখে তাঁর খুবই ভালো লাগে। ওই ফুল নিয়ে আসেন তিনি। তার থেকে টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে চারা তৈরি করেন। ক্রমেই চারার সংখ্যা বাড়তে থাকে। আর কিছুদিন পর থেকেই ফুল ফুটতে শুরু করবে।

মরশুম শুরু হলেই প্রতিদিন ১০ হাজার ফুল তোলেন তিনি। এর বেশিরভাগটাই রপ্তানি হয়ে যায়। ঘর সাজানোর জন্য সামার টিউলিপ ফুলের খুবই ভালো চাহিদা থাকায়, বানিজ্যিকভাবে এই ফুল চাষ বিশেষভাবে লাভজনক বলে মনে করছেন উদ্যানপালন বিশেষজ্ঞরা। তবে যেহেতু এই ফুলের কন্দ নার্সারিতে কিনতে পাওয়া যায় না, ফলে তা সংগ্রহ করাটাই প্রথম কাজ হবে কৃষকের। সামার টিউলিপের পাশাপাশি বর্ধমানের রায়না ১ ব্লকের জামনা গ্রামে প্রায় ৬ একর জমিতে চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চাষ করছেন মদনমোহন দাঁ। তাঁর কাছে চন্দ্রমল্লিকার অন্তত ৩২ ধরনের প্রজাতি রয়েছে। ফুল উৎপাদনের পাশাপাশি তিনি চারা তৈরি করেন। উদ্যানপালন নিয়ে গবেষণা করা মদনমোহনবাবু জানিয়েছেন, কৃষি নিয়ে পড়াশোনা করে যে শুধু চাকরি করতে হবে, এই ধারণা বদলাতে তিনি নিজে চাষ শুরু করেন। তাঁর দাবি, বাজারের চাহিদা বুঝে সঠিকভাবে ফুলচাষ করতে পারলে প্রচুর লাভের সুযোগ রয়েছে।

টিউলিপ চাষ