রেড ভেলভেট কেক দেখলেই মনটা ভাল হয়ে যায়! কিন্তু সেই লাল রং আসে কী ভাবে? এখন সিন্থেটিক রং ব্যবহার করা হলেও রেড ভেলভেটের লাল রং আসলে বিটের রসের অবদান। প্রকৃতির উপাদানের মধ্যেই রয়েছে এমন সব উজ্জ্বল রঙের সম্ভার, যা শরীরের জন্য জরুরি। রোজের খাদ্যতালিকায় রঙের অন্তর্ভুক্তির নামই কালার কোডেড ডায়েট। রং-সমৃদ্ধ ফল আর আনাজে থাকে ভিটামিন, মিনারেল-সহ নানা গুণ। তা শরীরের নানা অঙ্গ সুস্থ রাখার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই কমলা, বেগুনি, লাল, হলুদ, সবুজ, এমনকি সাদা রঙের ফল-আনাজ খাওয়াও জরুরি।
কমলা: চারপাশে তাকালেই চোখে পড়ে নানা ধরনের কমলা রঙের ফল ও আনাজপাতি। যেমন কমলালেবু, গাজর, রাঙা আলু, কুমড়ো, পিচ, আম, বাটারনাট স্কোয়াশ। এ সবের মধ্যে থাকা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখে, ত্বকের ঔজ্জ্বল্যও বাড়ায়। কমলা রঙে এমন উপাদান থাকে যা শ্বাসনালী ও আর্থ্রাইটিসের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তাই পাতে রাঙা-আলু ভাতে, কুমড়োর তরকারি বা গাজরের স্যালাড রাখতে পারেন। ফল হিসেবে আম, কমলালেবু বা পিচ তো রয়েছেই।
লাল: টম্যাটো, লাল বেলপেপার, স্ট্রবেরি, বিট, রাস্পবেরি, ক্র্যানবেরি, চেরি— প্রকৃতি লাল রং ছড়িয়ে রেখেছে চারপাশে। এগুলিতে থাকে প্রচুর ভিটামিন এ এবং সি। সূর্যরশ্মি থেকে ত্বক রক্ষা করতে, হৃদ্রোগ কমাতে এদের জুড়ি মেলা ভার। এগুলি েখলে হাঁপানির সমস্যাও কমে। টম্যাটো এবং বিট কাঁচা, স্যালাডে ও তরকারিতে খেতেই পারেন। স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি, ক্র্যানবেরি প্রাতরাশে অল্প পরিমাণে রাখতে পারেন। ডায়েটিশিয়ান সুবর্ণা রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘বয়স বাড়লে অবশ্যই খাদ্যতালিকায় নানা ধরনের বেরি রাখা আবশ্যিক। এতে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে।’’
হলুদ: হলুদ রঙের জন্য অবশ্যই বেছে নিতে পারেন কলা, লেবু, ভুট্টা, আনারস, বেলপেপার। এতে থাকা ক্যারোটিনয়েড শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই বাড়ায় না, ত্বক ভাল রাখে ও বিশেষ কিছু ধরনের ক্যানসারের আশঙ্কাও কমায়। ঠান্ডা লাগলেই হঠাৎ করে কলা খাওয়া বন্ধ করে দেওয়ার ধারণাও ঠিক নয়। কলায় ভিটামিন ও মিনারেল থাকার কারণে তা খাওয়া উচিত। ফ্রুট স্যালাডের পাশাপাশি ডাল-তরকারি খান অবশ্যই।
সবুজ: প্রকৃতিতে সবুজের সমাহার প্রচুর। সবুজ শাকের মধ্যে পালং সবচেয়ে উপকারী।
এ ছাড়া লেটুস, শসা, ব্রকোলি, স্প্রাউট, বিনস, কড়াইশুঁটি এবং আঙুর, কিউয়ি জাতীয় ফল তো আছেই। সবুজ রঙে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম থাকে। তাই খাবারে এই রং থাকা মানে সার্বিক ভাবে শরীরকেই সুস্থ রাখা। সবুজ আনাজ দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, হৃদ্রোগের হার কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু বেশি রান্না করে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট না করে ফেলাই ভাল। অল্প তেলে সাঁতলে, উপকারিতা বজায় রেখেই খান, মত ডায়েটিশিয়ানের।
সাদা: খাদ্যতালিকায় আমরা সবচেয়ে বেশি রাখি সাদা রং। যেমন আলু। এ ছাড়াও আছে পেঁয়াজ। তবে লাল পেঁয়াজও উপকারী। সাদা রং পেতে পারেন রসুন, ফুলকপি, মাশরুমেও। সাদায় থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। আবার এগুলি খেলে রক্তে দূষণ কমে, হোয়াইট ব্লাড সেলের ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে। এমনকি কোষের আভ্যন্তরীণ সমস্যাও অনেকাংশে কমে। তাই মোটা হওয়ার ভয়ে আলু থেকে বঞ্চিত হবেন না। সিদ্ধ থেকে শুরু করে যে কোনও পদে ব্যবহার করুন।
পার্পল বা নীল: নীল রংও কিন্তু আনাজপাতি, ফল, বেরিতেই পাওয়া যায়। যেমন ব্ল্যাকবেরি, ব্লুবেরি, প্লাম, কালো আঙুরের কিশমিশ, কালো জাম, বেগুন, পার্পল ক্যাবেজ ইত্যাদি। নীল রঙে থাকা উপাদান লিভারের সমস্যা, রক্তচাপ কমায়, বার্ধক্য দূরে সরায়। আবার হৃদ্যন্ত্রের রোগ কমাতে, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। বেরি দিয়ে স্মুদি বানাতে পারেন। কালো জাম শুধু খেতে পারেন। আবার প্রাতরাশে ওট্সের সঙ্গে মিশিয়েও এগুলি খেতে পারেন। বেগুনের হরেক পদ তো সকলেরই জানা। আঙুর থেকে তৈরি ভাল ওয়াইনও খেতে পারেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ, যে কোনও ফল বা শাক খাওয়ার আগে ভাল করে ধুয়ে নেওয়া জরুরি। বিশেষ ক্ষেত্রে গরম জলে ভিজিয়েও রাখতে পারেন। অতিরিক্ত রান্না করলে পুষ্টিগুণ কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়। ফলে হজমের জন্য যতটা জরুরি, ততটুকুই রান্না করুন। এটাও মনে রাখা প্রয়োজন, কোনও বিশেষ সমস্যা থাকলেও তা প্রতিরোধের জন্য কোনও ফল বা আনাজই অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। কালার কোডেড ডায়েটের লক্ষ্যই হল খাবারে রঙের সাম্য বজায় রেখে সমস্ত রং যোগ করা, যা শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
তা হলে দেরি কিসের? রেকাবি হয়ে উঠুক ক্যানভাস। প্রকৃতির রঙে খাবারের পদ ধরা দিক রামধনু রূপে।