তওবা ও ইস্তেগফারের ফজিলত

ইস্তেগফার’ এর অভিধানিক অর্থ হলো ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর শরীয়তের পরিভাষায় ইস্তেগফার বলা হয় সুনির্ধারিত কিছু শব্দের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট নিয়মে বিশেষ শর্তানুযায়ী আল্লাহ তায়ালার নিকট নিজের অপরাধের ক্ষমা প্রার্থনা করা।

মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য ‘একমাত্র আল্লাহ তাআলার ইবাদত।’ তথা আল্লাহ তাআলার দেওয়া পালনীয় বিধানগুলো যথাযথভাবে পালন করা এবং বর্জণীয় বিষয়গুলোকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করা। কিন্তু মানুষ নফসের ধোঁকা ও শয়তানের খপ্পরে পড়ে তা লঙ্খন করে বসে। মহান আল্লাহর বিরুদ্ধেচরণ করে। সঙ্গে সঙ্গে নিজের এই অন্যায় ও অপরাধকে খুব ছোট ও কারনসঙ্গত বলে নিজেকে প্রবোধ দেয়। অথচ এটা মুমিনের জীবন ধ্বংসের অন্যতম কারণ। মুমিন বান্দাকে সর্বদা নিজের পাপের ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে। এমনকি মহান আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামতের বিপরীতে নিজের ইবাদতের দুর্বলতাকেও পাপ হিসেবে গণ্য করে সর্বদা সকাতরে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতে হবে। সকল প্রকার পাপকে অত্যন্ত ভয়াবহ এবং নিজের ধ্বংসের কারণ মনে করে তা মুক্তি কামনা করতে হবে। এই পাপবোধ নিজেকে সংকুচিত করার জন্য নয়। বরং আল্লাহর নিকট ক্ষমা চেয়ে নিজেকে ভারমুক্ত পাপমুক্ত পবিত্র ও আল্লাহর নৈকট্যের পথে এগিয়ে নেওয়া জন্য।

হাদীসের এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাউদ (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তি তার পাপকে খুব বড় করে দেখে। যেন সে পাহাড়ের নিচে বসে আছেন। ভয় পাচ্ছে যে কোনো সময় পাহাড়টি ভেঙ্গে তার মাথার ওপর পড়ে যাবে। পক্ষান্তরে পাপী মানুষ তার পাপকে খুবই হালকাভাবে দেখে। যেন একটি উড়ন্ত মাছি তার নাকের জগায় বসেছে। হাত নাড়ালেই উড়ে যাবে।’

আল্লাহর তায়ালা বলেন ‘আর যে কোনো মন্দ কাজ করবে অথবা নিজের নফসের প্রতি জুলুম করবে। অতপর আল্লাহ তায়ালার নিকট ইস্তেগফার ও ক্ষমা প্রার্থনা করবে। তাহলে সে আল্লাহ তাআলাকে ক্ষমাশীল ও করুনাময় পাবে।’ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন। (সুরা নিসা : ৪/১১০)। অন্য আয়াতে বলেন ‘আর যারা কখনো আশ্লীল কাজ করে ফেলে কিংবা কোনো মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের উপর জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা পদর্শন করে না এবং জেনে শোনে তাই করতে থাকে না। তাদেরই জন্য প্রতিদান হলো তাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাত। যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে প্রসবণ। যেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। যারা কাজ করে তাদের জন্য কতইনা চমৎকার প্রতিদান (সুরা আল ইমরান : ৩/১৩৫-১৩৬)

সঠিক তওবার জন্য শর্ত ৩টি। ১. অতীত গোনাহের জন্য অনুপতপ্ত হওয়া। ২. উপস্থিত গোনাহ ওই মুহূর্ত থেকেই পরিহার করা। ৩. ভবিষ্যতে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার দৃঢ় সংকল্প করা। সঙ্গে সঙ্গে বান্দার হকের সঙ্গে যেসব গোনাহের সম্পর্ক সেগুলো বান্দার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেওয়া কিংবা হক পরিশোধ করে দেওয়া।