ভুল ধারণা ১ : নবজাতকের যত্নে তেল মাখানো পুরোনো নিয়ম
নবজাতককে তেল মাখানো অনেক বছর ধরেই আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। কিন্তু তাই বলে পুরোনো আচার বলে তেল মাখানোকে বাতিল করে দেয়ার উপায় নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, তেল মাখানো নবজাতকের যত্নে অনেক উপকারী একটা পদ্ধতি। হালকা তেল দিয়ে শিশুর শরীর মেসেজ করে দিলে শিশুর শরীরে রক্ত চলাচল ভালো হয় ও এটা শিশুর ঘুমের জন্য অনেক উপকারী।
ভুল ধারণা ২ : দাঁত ওঠার সময় নবজাতকের জ্বর হয়
একজন শিশুর দাঁত উঠা একটা স্বাভাবিক শরীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়া। সাধারণত ৬ মাস থেকে ২৪ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর দাঁত উঠতে পারে। কিন্তু অনেকেই মনে করেন এই সময়টায় শিশুর দাঁত উঠার ফলে জ্বর হবার সম্ভাবনা থাকে। এই ধারণা একেবারেই ভুল। দাঁত উঠার সাথে এই জ্বরের কোন সম্পর্ক নেই। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার ফলে বিভিন্ন কারণে জ্বর হয়। তাই শিশুর জ্বর হলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে ও প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ভুল ধারণা ৩ : শিশুকে অনেকক্ষণ কোলে রাখলে শিশু বিরক্ত হয়
নবজাতকের যোগাযোগের ভাষা হচ্ছে কান্না। একটু বয়স হলে সে তার চাহিদা কান্নার পাশাপাশি ইশারায়ও বোঝাতে চায়। সেজন্য অনেক সময় শিশুর কোন প্রয়োজনে সে কাঁদতে পারে। এবং সেটা মায়ের কোলে থাকার সময়েও। তার মানে যে শিশু কোলে থেকে বিরক্ত হয়ে কাঁদছে এমন কিন্তু না। শিশু কাঁদলে কেন কাঁদছে সেটা বোঝার চেষ্টা করতে হবে ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
ভুল ধারণা ৪ : শিশুর চোখে কাজল ও সুরমা দেয়া স্বাস্থ্যকর ও নান্দনিক
নবজাতকের চোখে কাজল অথবা সুরমা ব্যবহার আমাদের দেশে অনেক পুরোনো রীতি। অনেকের ধারণা সুরমা অথবা কাজল ব্যবহারে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। শিশুর চোখ ও ত্বক অনেক স্পর্শকাতর হওয়ায় শিশুর চোখে যেকোন ধরণের প্রসাধনী ব্যবহার করা ক্ষতিকর। সুরমা ও কাজল ব্যবহার করলে শিশুর চোখে ও ত্বকে ইনফেকশন হতে পারে। এবং এটা শিশুর অ্যালার্জি হওয়ারও কারন।
ভুল ধারণা ৫
শিশুর ত্বকে অতিরিক্ত পাউডার ব্যবহার উপকারী
আমাদের দেশে শিশুর ত্বকে পাউডার মাখা একটা অতি সাধারণ বিষয়। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে সেটা যেন অতিরিক্ত না হয়ে যায়। শিশুর জন্মের প্রথম কয়েক সপ্তাহ পাউডার মাখা যাবে না। এতে শিশুর শরীরের প্রাকৃতিক তেলের স্তর নষ্ট হয়ে যায়। শিশুর জন্য আলাদা বেবি পাউডার আছে, সীমিত পরিমাণে তা মাখা যেতে পারে। কিন্তু শিশুকে বড়দের ঘামাচি পাউডার মাখা যাবেই না। শিশুর গলায় ও মুখে পাউডার মাখলে নিশ্বাসের সাথে নাকে গিয়ে শিশুর শ্বাস কষ্ট হতে পারে। গরমে ঘেমে গেলে ত্বক স্যাঁতস্যাঁতে না হওয়ার জন্য শরীর ভালোভাবে মুছে খুবই সীমিত পরিমাণে পাউডার মাখা যাবে।
ভুল ধারণা ৬ : বোতলজাত দুধ শিশুর জন্য অনেক উপকারী
শিশু জন্মের প্রথম ৬ মাস শিশুর জন্য মায়ের দুধই একমাত্র উৎকৃষ্ট খাদ্য, এতে কোন সন্দেহ নাই। এই সময়টাতে শিশুর সকল ধরণের চাহিদা মায়ের দুধই পূরণ করতে পারে। কিন্তু কোন ধরণের সমস্যার জন্য যদি কখনো কখনো মা বুকের দুধ খাওয়াতে অপারগ হয় কেবল তখই শিশুকে বোতলজাত দুধ খাওয়ানো যাবে। সেক্ষেত্রেও ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। বুকের দুধের পাশাপাশি বোতলজাত দুধ শিশুকে না খাওয়ানোই উত্তম।
ভুল ধারণা ৭ : নবজাতককে ঘরের বাইরে নেয়া যাবে না
এই ধারণা কম বেশি আমাদের অনেকের মাঝেই আছে। বিশেষ করে গ্রামে এই ধারণা প্রবল। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে নবজাতককে ঘরের বাইরে ফ্রেশ বাতাসের সান্নিধ্যে নেয়া জরুরী। এতে নবজাতকের রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা বাড়ে। তাছাড়া বিশেষজ্ঞরা নবজাতককে সূর্য্যের মিষ্টি আলোয় দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যদি আবহাওয়া খুবই খারাপ ধরণের না হয়, তাহলে নবজাতকে বাইরে নেয়া যেতে পারে।
ভুল ধারণা ৮ : নবজাতককে বেশি করে পানি খাওয়াতে হবে
জন্মের প্রথম ৬ মাস নবজাতকের সকল ধরণের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য মায়ের বুকের দুধই যথেষ্ট। এই সময়ে কোন বাড়তি খাবারই নবজাতকের জন্য উপকারী না। অন্তত প্রথম ৪ মাস মায়ের বুকের দুধ ছাড়া শিশুকে কোন কিছুই দেয়া ঠিক নয়। শিশুর পানির চাহিদাও বুকের দুধ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পূরণ হয়ে যায়।
ভুল ধারণা ৯ : জন্মের পর শিশুর দৃষ্টিশক্তি থাকে না
জন্মের পর পর নবজাতক চোখে দেখে না, এটা একটা অদ্ভুত ধরণের ভুল ধারণা। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, জন্মের সাথে সাথেই শিশু চোখে দেখতে পায়। হয়তো দৃষ্টিটা ঝাঁপসা কিংবা স্পষ্ট থাকে না। কিন্তু শিশু জন্মের পর থেকেই দেখতে পায়।
ভুল ধারণা ১০ : জন্মের সাথে সাথেই নবজাতকের প্রতি মায়ের টান অনুভূত হবে
একজন মানুষের কাছে সন্তান অবশ্যই অনেক আকাঙ্ক্ষিত। কিন্তু কখনো জন্মের পর সন্তানের প্রতি মায়ের টান নাও আসতে পারে। জন্মের পর সন্তানের প্রতি মায়ের টান না থাকাটা অস্বাভাবিক হলেও চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটার ব্যাখ্যা রয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান এটার নাম দিয়েছে পোস্টপার্টাম ডিসঅর্ডার। প্রসূতিকালিন কিছু হরমোনাল জটিলতার কারণে এমনটা হয়। যদি কারো ক্ষেত্রে এমন অভিজ্ঞতা হয়, তবে বিচলিত না হয়ে ধৈর্য্য ধরতে হবে। সময়ের সাথে সাথে এ সমস্যা কেটে যায়।
https://youtu.be/AoO_iZhlnGs