সম্প্রতি রাজধানীর রামপুরায় তল্লাশিচৌকিতে এক নারীকে হয়রানির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গোটা দেশে বেশ সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে অনস্ক্রিনে কটূক্তি করে নারী অবমাননার যে চিত্র উঠে এসেছে তার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে ৭১ টিভি’র টকশো আয়োজনে মাসুদ কামাল (সিনিয়র নিউজ এডিটর, বাংলাভিশন) এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা সবকিছু রাজনীতিকরণ করে ফেলেছি, ফলে যিনি ঘটিয়েছেন তিনি যদি আ:লীগের হন তবে আ:লীগপন্থী সকলেই তার পক্ষে ঝাপিয়ে পড়েন আর যদি বিএনপি কিংবা বিরোধীদলীয় হয় তাহলে আর মাত্রা থাকে না। কিন্তু কেউই প্রকৃত ঘটনা কী জানতে বা যাচাই করতে চান না। অপরদিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় যেকোনো অপরাধের প্রবণতা বাড়তে থাকে। প্রকাশ্য বিচার না হলে অপরাধের ভয় থাকে না। যেমন, রামপুরার ঘটনায় সেই ৫ পুলিশ সদস্যের কী হলো, আদৌ তাদেরকে কোনো শাস্তির আওতায় নেয়া হয়েছে কিনা জনগণ জানতে না পারলে অন্য পুলিশ সদস্যদের মধ্যে জবাবদিহিতা তৈরি হবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য মতে, দেশে মাদকের পরেই সবচেয়ে বেশি অপরাধ ঘটে শিশু ও নারী নির্যাতনের। ব্র্যাকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গড়ে প্রতি মাসে ৬২৪টি, প্রতিদিন ২০টি এবং প্রতি জেলায় ১১টি নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এসব নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও পারিবারিক, সামাজিক ও মামলার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অধিকাংশ নারী আইনি পদক্ষেপে যেতে চান না। নারী নির্যাতনের ২৮% ঘটনার কোনো মামলা হয় না। বাংলাদেশে প্রতি সপ্তাহে ৫ জনেরও বেশি শিশু হত্যার শিকার হয়। ধর্ষিত হয় প্রায় একই সংখ্যক শিশু। গত ৪ বছরে ১ হাজার ৮৫টি শিশু হত্যা, ১ হাজার শিশু ধর্ষণ এবং প্রায় ৫০০ শিশু অপহরণের শিকার হয়েছে।
সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের গবেষণায় জানা যায়, বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইম অভিযোগের ৫২ শতাংশ করেছেন নারীরা। অভিযুক্ত নারীদের ৭৪ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছর, আর ২৫ শতাংশ নারী মনে করেন অভিযোগ করে কোনো কাজ হয় না ।
হেনস্থার শিকার প্রসঙ্গে মাসুদা ভাট্টি বলেন, এটা একটা মনস্তাত্ত্বকি ব্যাপার। রাষ্ট্র আইন দিয়ে কিছু দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে, শাস্তি দিতে পারে। কিন্তু নিরাময়ের জন্য সামাজিক আন্দোলনই প্রকৃত পদক্ষেপ। নারীর অবমাননা প্রতিরোধে নারী সমাজের গণজাগরণ তৈরি ও একইসাথে আইনের যথাযথ প্রয়োগ দরকার।
এ প্রসঙ্গে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, সাইবার ক্রাইম কমিয়ে আনার জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করা হয়েছে। আশাকরি এখন স্যোসাল মিডিয়াতে নারী হেনস্থার অবসান ঘটবে। এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটে কোনো নারী অবমাননার শিকার হলে তার অভিযোগের ভিত্তিতে অপরাধী প্রমাণিত হলে পুলিশ আদালতে পেশ করবে। পরে আদালত তা যাচাই বাছাই করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তি অবশ্যই পাবে।