পচা পেঁয়াজ ফেলে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রির আশায় বাড়তি পেঁয়াজ আমদানি করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সেই পেঁয়াজ এখন আমদানিকারকদের গলার কাঁটা। বিভিন্ন দেশ থেকে অতিরিক্ত পেঁয়াজ আমদানি করে বাড়তি লাভের আশায় মজুদ করা হয়। কিন্তু দেশের বাজারে এখন দাম কমে গেছে। ফলে কম দামেই সেই পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। নষ্ট হয়ে যাওয়ায় শত টন পেঁয়াজ ফেলে দিতে হচ্ছে খালে কিংবা ভাগাড়ে।
দাম বাড়ার আশায় কোনো কোনো আমদানিকারক বন্দর থেকে সময়মতো খালাস না করায় নষ্ট হয়ে গেছে টনের টন পেঁয়াজ। নির্দিষ্ট সময়ে বিক্রি করতে না পারায় পেঁয়াজে চারা গজিয়েছে। দু-তিন দিনের ব্যবধানে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আমদানি করা পেঁয়াজের একটি বড় অংশ। ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের বহু আড়তে এখন নষ্ট পেঁয়াজের স্তূপ। প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫৫ টাকায় কেনা পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মাত্র ১০ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এতে বড় ক্ষতির মুখে পড়ার কথা বলছেন তারা।

চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র জানায়, ৪৭৮টি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত দুই লাখ ছয় হাজার ৭৮৮ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। ২৮ অক্টোবর থেকে দেশে পেঁয়াজ আসতে শুরু করে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৩৮৯ টন পেঁয়াজ আসে। বন্দরে আরও সাত হাজার টন পেঁয়াজ খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। জানা গেছে, পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার, মিসরসহ অন্যান্য দেশ থেকে এবার পেঁয়াজ আমদানি হয়। পেঁয়াজের মান নিম্নমানের। অবিক্রীত পেঁয়াজ গুদামে পড়ে থাকায় বিক্রির অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে। নষ্ট হওয়া পেঁয়াজের অধিকাংশই বাধ্য হয়ে তাই ফেলে দেওয়া হচ্ছে নালা, নর্দমা ও ভাগাড়ে। সামান্য কিছু পেঁয়াজ বিক্রি হলেও তার দাম উঠছে প্রতি কেজি পাঁচ থেকে ১০ টাকা। অথচ এসব পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে মানভেদে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫৫ টাকায়।

সংশ্নিষ্টদের মতে, পেঁয়াজের সংকট সামাল দিতে সরকার উদারভাবে আমদানির অনুমোদন দেয়। ব্যবসায়ীরাও অতি মুনাফার আশায় আমদানি করে পুরো খাতুনগঞ্জ বাজার ভরে ফেলেন। টানা কয়েক দিন এমন অবস্থা চলমান থাকায় মজুদ থাকা পেঁয়াজের একটি বড় অংশই নষ্ট হয়ে যায়। এতে বাড়তি লাভের আশায় মজুদ করে রাখা আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা পড়ছেন বিপাকে। খাতুনগঞ্জের আড়তে পেঁয়াজের এমন শোচনীয় অবস্থা থেকে অতি মুনাফালোভি ব্যবসায়ীদের শিক্ষা নেওয়ার কথা বলছেন ক্যাবসহ সচেতন নাগরিকরা।
খাতুনগঞ্জে সরেজমিন ঘুরে প্রায় প্রতিটি আড়তের সামনে নষ্ট পেঁয়াজের স্তূপ চোখে পড়ে। এ সময় অনেককে নাকে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। নষ্ট পেঁয়াজ আশপাশের খাল, নালা কিংবা ভাগাড়ে ফেলে দিতেও দেখা যায়।

খাতুনগঞ্জের মধ্যভাগের পেঁয়াজ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স গোপাল বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী বলাই কুমার পোদ্দার সমকালকে বলেন, ‘বাজারে একেবারে বেচাকেনা নেই। তার মধ্যে মাত্র দু-এক দিনের মধ্যে আমদানি করা পেঁয়াজে দেখা দিচ্ছে শিকড়-বাকড়। মিসর, পাকিস্তান ও মিয়ানমার থেকে আনা পেঁয়াজ বেশি নষ্ট হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে টনের টন পেঁয়াজ খালে কিংবা ভাগাড়ে ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, বাজারের প্রতিটি আড়তে এখন বাড়তি পেঁয়াজ মজুদ থাকলেও বিক্রি নেই। বাজারে চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি হওয়ায় অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হচ্ছে। এতে বড় ক্ষতির মুখে পড়ছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে খাতুনগঞ্জে একাধিক অভিযান পরিচালনা করা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক বলেন, করোনার এমন সময়েও ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে বেশি লাভ করতে চেয়েছিল। যার অনেক প্রমাণও আমরা পেয়েছি। বেশি লোভে পড়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। বাড়তি টাকায় বিক্রি করে অতি মুনাফার লোভে তাদের কপাল পুড়েছে। এ থেকে তাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।

ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর হুহু করে দাম বাড়িয়ে ক্রেতার পকেট কাটার মহোৎসবে মেতে ওঠেন খাতুনগঞ্জের অসাধু ব্যবসায়ীরা। এবারও বাড়তি মুনাফার লোভে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করেছিল অসাধুরা। কিন্তু সেটি তাদের জন্য অভিশাপ হয়ে এসেছে। নষ্ট পেঁয়াজ ফেলে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের অনেক বড় শিক্ষা হয়েছে।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, গ্যাঁজ বের হয়ে ও পানি ঝরে অনেক পেঁয়াজ পচে গেছে। তার ওপর ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধও। পচা পেঁয়াজ ফেলতেও টাকা লাগছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পর বাড়তি মুনাফার আশায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাড়তি পেঁয়াজ আমদানি করা হয়।