ফিয়াদ নওশাদ ইয়ামিন: একটা সময় ছিল, যখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরিচয়ই ছিল পাঁচ মহারথীর সঙ্গে জড়িয়ে। মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম—এই পঞ্চপাণ্ডবের হাত ধরেই টাইগাররা বিশ্ব ক্রিকেটের অঙ্গনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে শিখেছে। ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে ২০১৯ পর্যন্ত, তাদের লড়াই বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছে এক নতুন পরাশক্তিতে। ত্রিদেশীয় সিরিজ জয় থেকে শুরু করে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে নাস্তানাবুদ করার গল্প, সবকিছুর কেন্দ্রে ছিলেন এই পাঁচজন। তাদের হাত ধরেই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে পৌঁছানো, এশিয়া কাপে একাধিকবার ফাইনাল খেলা—সব অর্জনের সাক্ষী তারা। কিন্তু সময় থেমে থাকে না। একে একে বিদায় নিচ্ছেন সবাই, আর সেই সঙ্গে শেষ হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক গৌরবময় অধ্যায়।
প্রথম ধাক্কাটা আসে ২০২০ সালে, যখন মাশরাফি বিন মুর্তজা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান। এরপর ২০২৩ সালে বিশ্বকাপের আগে আচমকা অবসরের ঘোষণা দেন তামিম ইকবাল। দলের ওপেনিংয়ে যার ব্যাটিং মানেই ছিল নির্ভরতা, যার অভিজ্ঞতা ছিল যেকোনো বোলিং লাইনআপের জন্য আতঙ্ক, তার শূন্যতা পূরণ করা আজও কঠিন হয়ে আছে। এরপর ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শেষ হতেই অবসরের ঘোষণা দেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মুশফিক, যিনি একাধারে দলের ব্যাটিং স্তম্ভ ও উইকেটের পেছনে অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন, যার হাতে অসংখ্য ম্যাচ ঘুরে গেছে বাংলাদেশের পক্ষে। মাহমুদউল্লাহ, দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান, ২০১৫ সালে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করে নতুন ইতিহাস গড়েছিলেন। তাকে বলা হতো ‘সাইলেন্ট কিলার’—যিনি বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করে দিয়েছেন বারবার।
সবশেষে আসে সেই ঘোষণা, যা পঞ্চপাণ্ডবের যুগের সমাপ্তি টেনে দেয় চিরতরে। ২০২৪ সালের শেষের দিকে হঠাৎ এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার, এক দশকের বেশি সময় ধরে যিনি ছিলেন এই দলের প্রাণভ্রমর, যার পারফরম্যান্স বদলে দিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের মানচিত্র। বিশ্বকাপের এক আসরে ৫ উইকেট ও হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড, দেশের হয়ে প্রথম আইপিএল খেলার অভিজ্ঞতা, প্রতিপক্ষের ওপর ত্রাস সৃষ্টি করা অলরাউন্ড পারফরম্যান্স—সব মিলিয়ে তার অবসর যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক শূন্যতার জন্ম দেয়।
এখন প্রশ্ন একটাই—এই শূন্যতা পূরণ করবে কে? নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের প্রতিভা নিয়ে সন্দেহ নেই, কিন্তু তারা কি সেই গভীর আবেগ তৈরি করতে পারবে? তামিমের জায়গায় কি কোনো ওপেনার উঠে এসেছে? সাকিবের মতো অলরাউন্ডার কি আছে? মুশফিকের মতো নির্ভরযোগ্য কিপার-ব্যাটসম্যান কই? মাহমুদউল্লাহর মতো চাপের সময় ম্যাচ শেষ করে দেওয়ার মতো কেউ কি তৈরি হয়েছে? মাশরাফির মতো নেতা কি আবার আসবে?
Gen Z যারা পঞ্চপাণ্ডবের খেলা দেখে ক্রিকেট ভালোবেসেছে, তারা আজ দ্বিধান্বিত। নতুনরা পারফর্ম করছে, কিন্তু সেই ভালোবাসা এখনো গড়ে ওঠেনি। এক স্বর্ণযুগের পর শুরু হবে নতুন সময়, নাকি পঞ্চপাণ্ডবের বিদায়ের পর হারিয়ে যাবে টাইগাররা? সময়ই দেবে সেই উত্তর।
লেখক: তরুণ কলাম লেখক ও
শিক্ষার্থী, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ মিডিয়া কমিউনিকেশন এন্ড জার্নালিজম ডিপার্টমেন্ট