প্রেমে প্রত্যাখাত হয়ে কলেজছাত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

গাজীপুরে প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় ছুরিকাঘাতে এক কলেজছাত্রীকে হত্যা করেছে এক বখাটে। ওই ছাত্রী পরীক্ষা দিয়ে কলেজ থেকে বাসায় ফিরছিল। বুধবার দুপুরে প্রকাশ্যে কোনাবাড়ি কাঁচাবাজারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তার মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

স্থানীয়রা ঘাতক মোস্তাকিম রহমানকে (১৯) ছুরিসহ আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। সে মহানগরীর সালনার জালা মার্কেট এলাকার আবুল কালামের ছেলে। পরিবারের সাথে সে কোনাবাড়ির আমবাগ এলাকায় ভাড়া থাকত। স্থানীয় লিংকন কলেজের প্রথম বর্ষে ভর্তি হলেও আর পড়ালেখা করেনি। তাকেও আহত অবস্থায় পুলিশ হেফাজতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহত শারমিন আক্তার লিজা (১৭) কোনাবাড়ি ক্যামব্রিজ কলেজের প্রথম বর্ষের মানবিক বিভাগের ছাত্রী এবং কোনাবাড়ির আমবাগ ঈদগাহ মাঠ এলাকার গাড়িচালক শফিক আহাম্মদের একমাত্র মেয়ে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে বড় ছিল লিজা।

পুলিশ ও স্থানীয় ভাবে জানা গেছে, বুধবার দুপুর ১টায় বর্ষ উত্তীর্ণ পরীক্ষা শেষ হলে হেঁটে বাসায় ফিরছিল লিজা। কোনবাড়ি কাঁচাবাজারের মো. শামীমের আলুর আড়তের সামনে পৌঁছালে সামনে থেকে এসে মোস্তাকিম লিজার পথ রোধ করে দাঁড়ায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পকেট থেকে ছুরি বের করে লিজার বুকে আঘাত করে। লিজার চিৎকারে বাজারের ব্যবসায়ীরা ছুটে এসে তাসকিনকে আটক করে পিটুনি দিয়ে পুলিশে খবর দেয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে বিকেল ৪টার দিকে ঢাকার উত্তরার বাংলাদেশ আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক লিজাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী আলুর আড়তের মালিক ব্যবসায়ী মো. শামীম জানান, বেলা দেড়টার দিকে লিজা হেঁটে তার দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। তাসকিন সামনের দিক থেকে এসে লিজার পথ আটকে সামনা সামনি দাঁড়ায়। এ সময় মোস্তাকিম সাথে আরো দুই যুবক ছিল। চিৎকারে তাকিয়ে দেখেন লিজার বুকে ছুরি বিঁধে আছে। মোস্তাকিম ছুরির বাট ধরে টানাটানি করছে। ৫ মিনিটের মতো স্থির দাঁড়িয়ে লিজা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ দৃশ্য দেখে ব্যবসায়ীসহ পথচারীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তারা মোস্তাকিমকে আটক করে পিটুনি দেয়। এ ফাঁকে তাসকিনের দুই সহযোগী পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ আহত অবস্থায় তাকে তুলে নিয়ে যায়। লিজাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়।

লিজার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে একমাত্র মেয়ের মৃত্যুতে শোকে পাথর বাবা শফিক অচেতন অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছেন। প্রতিবেশীরা তাকে সুস্থ করার চেষ্টা করছে। তা তাছলিমা বেগম ও ভাই সাদিম আহমদ সুজন লিজাকে নিয়ে হাসপাতালে থাকায় তারাও বাড়িতে নেই।

মোবাইল ফোনে সুজন জানায়, কলেজে আসা-যাওয়ার পথে লিজাকে উত্ত্যক্ত করত মোস্তাকিন। প্রেম নিবেদন ও বিয়ের প্রস্তাব দিত। এ প্রস্তাবে লিজা রাজি না হওয়ায় তাকে বিভিন্ন হুমকি দিত। সম্প্রতি হুমকির পর লিজা চার-পাঁচ দিন ধরে কলেজে যায়নি। বিষয়টি মোস্তাকিনের মা’কে মোবাইল ফোনে জানানে হলে দুই দিন আগে মোস্তাকিন ও তার মা বিষয়টি নিয়ে আর কোনো সমস্যা করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং মা-বাবার কাছে ক্ষমা চায়।

কোনাবাড়ি থানার ওসি মো. এমদাদ হোসেন জানান, লিজার পরিবারের কেউ এ বিষয়ে এখনো অভিযোগ করেনি। ঘাতক মোস্তাকিমও উত্তেজিত জনতার পিটুনিতে গুরুতর আহত। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার মতো পরিস্থিতি নেই। তাই কেন সে এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা জানতে পারেননি। লিজার পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে খুনের কারণ জানার চেষ্টা করছেন। লিজার গলার নিচে বুকে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। রক্তমাখা ছুরিটিও উদ্ধার করে জব্দ করা হয়েছে।