বাজেটে চাই চলচ্চিত্রের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ

মুমূর্ষু চলচ্চিত্রশিল্পকে বাঁচাতে উদ্‌গ্রীব সংশ্লিষ্টরা। সবাই চান, জাতীয় বাজেটে এ খাতের জন্য কিছু বরাদ্দ ও বছরব্যাপী সরকারের নজরদারি বাড়ুক। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট পণ্যকর কমুক। সরকার নিজেই বিনিয়োগ করুক সিনেমায়। নিজে আয় করুক, চলচ্চিত্রকর্মী ও শিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখুক। মনোযোগ না দিলে শিল্প যেমন সৃষ্টি করা যায় না, তেমনি যথাযথ প্রণোদনা ও দেখভাল না করলে সিনেমার মতো বড় শিল্পমাধ্যম বাঁচানো যাবে না।

এফডিসির জন্য বরাদ্দ দরকার
ভালো অবস্থায় নেই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)। কর্মীদের বেতন দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। টাকার অভাবে চাকরি ছেড়ে যাওয়া এবং অবসরে যাওয়া কর্মীদের পেনশনের টাকা দিতে পারছে না তারা। থোক বরাদ্দ না পেলে শিগগির এই দায় থেকে মুক্ত হতে পারবে না প্রতিষ্ঠানটি। তা ছাড়া স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতেও সরকারের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা নিতে হবে এই প্রতিষ্ঠানকে। নয়তো এখনকার মতো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির সদ্য বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন বলেন, ‘এফডিসির অবস্থা এখন ততটা ভালো নয়। বিএফডিসি কমপ্লেক্সের কাজ শেষ হতে আরও পাঁচ বছর লাগবে। তখন হয়তো আমাদের আয় বাড়বে।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘আমাদের দাবি, সরকারি ব্যবস্থাপনায় এফডিসি যেন বছরে কমপক্ষে ১০টি ছবি নির্মাণ করে। নিজস্ব যন্ত্র ও ফ্লোর ব্যবহার করলে সরকারের এতে ব্যয় হবে ৫০ শতাংশ অর্থ। ছবি নির্মাণের ব্যয় যদি ১ কোটি টাকা হয়, সরকারের লাগবে ৫০ লাখ টাকা।’

অনুদানের জন্য যে অর্থ দেওয়া হয়, সেই অর্থে সিনেমা তৈরি সম্ভব নয়। অনুদান পাওয়া বেশির ভাগ নির্মাতাই ছোটেন সহপ্রযোজকের খোঁজে। বাজেটে অনুদানের অঙ্কটি বাড়ানোর ব্যাপারে ভাবনার অবকাশ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনুদান পাওয়া একজন পরিচালক বলেন, এ টাকায় সিনেমা হয় না। অনুদানের এই অর্থ বাড়ানো দরকার। পরিচালককে যদি বাড়তি অর্থের জন্য ছোটাছুটি করতে হয়, তাহলে সিনেমা তৈরি থেকে মনোযোগ সরে যায়।
চলচ্চিত্র অনুদান প্রদান কমিটির সদস্য মামুনুর রশীদ বলেন, ‘অনুদানের জন্য পরিচালকদের যাতে অন্য কোথাও যেতে না হয়, সে জন্য এর পরিমাণ এক কোটি টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। ৩৫ লাখ থেকে এখন এটি ৬০ লাখ করা হয়েছে।’

করের চাপ কমাতে হবে
সিনেমা হলের অবস্থা ভালো নয়। বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও নির্ধারিত ৫০টি প্রেক্ষাগৃহে ডিজিটাল প্রজেক্টর দিতে পারেনি সরকার। এমনকি হল সংস্কারের জন্য যে সহযোগিতা দেওয়ার কথা ছিল, সেটার কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘সিনেমা বাঁচাতে হলে আগে হল বাঁচাতে হবে। ভালো ছবি চালাতে দরকার টুকে মেশিন, ভালো সাউন্ড সিস্টেম। হলের পরিবেশ ফেরাতে দরকার এয়ারকন্ডিশন, বসার ভালো আসন। সরকার যদি এ পণ্যগুলোর ওপর কর কমিয়ে দেয় বা করের চাপ একটু শিথিল করে, সেটা আমাদের সিনেমার জন্য ভালো হবে। অথবা এগুলোকে একটা প্যাকেজের মধ্যে এনে সহজ শর্তে ঋণ দিলে সিনেমা হলগুলো আবার বেঁচে উঠতে পারে।’ তিনি মনে করেন, একক পর্দার প্রেক্ষাগৃহগুলো মধ্যবিত্ত ও দরিদ্রদের জন্য। এ প্রেক্ষাগৃহগুলো না থাকলে পোশাকশ্রমিকসহ স্বল্প আয়ের মানুষদের সিনেমা দেখার জায়গা থাকবে না।
এ ছাড়া টিকিটের ওপর থেকে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার দাবিও জানিয়েছেন কেউ কেউ।

নতুন মাল্টিপ্লেক্স চাই
পরিচালক সমিতির সভাপতি গুলজার বলেন, ‘সিনেমা বাঁচাতে প্রচুর সিনেমা হল দরকার। মাল্টিপ্লেক্স দরকার। আমাদের দাবি, সরকারি খরচে মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণ ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় সেসব পরিচালনা করা হোক। ৬৪ জেলায় বঙ্গবন্ধু চলচ্চিত্র কেন্দ্র স্থাপন করা হোক। আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর আগেই যেন এসবের উদ্যোগ নেওয়া হয়, সরকারের কাছে সেই আবেদন করছি। সেসব চলচ্চিত্র কেন্দ্রে ফুডকোর্ট, ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প পণ্যের স্টল থাকতে পারে, যাতে সরকার সেসবের পরিচালনার ব্যয় তুলে আনতে পারে। এ কাজের জন্য বাজেটে যেন বরাদ্দ রাখা হয়।’