বেশিক্ষণ টিভি দেখার ক্ষতিকর দিকগুলো জেনে নিন
প্রতিদিন অন্তত সাড়ে তিন ঘন্টার বেশি টেলিভিশন দেখলে বয়স্কদের স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে- একটি গবেষণায় এমনই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
সাড়ে তিন হাজার পূর্ণ বয়স্ক মানুষ- যাদের বয়স ৫০ এর বেশি, তাদের ওপর চালানো হয় গবেষণাটি। প্রতিবেদনে গবেষণা লব্ধ তথ্যগুলো তুলে ধরেছে বিবিসি বাংলা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ছয় বছর ধরে চালানো পরীক্ষায় দেখা গেছে যারা টেলিভিশন কম দেখে তাদের তুলনায় যারা বেশি সময় কাটায় টিভি দেখে, তাদের অন্তত দ্বিগুণ ভার্বাল মেমরি বা স্মৃতির যে অংশটি ভাষার সাথে জড়িত তা হ্রাস পেয়েছে।
এমনিতেই বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের স্মৃতিশক্তি বা মেমোরি দুর্বল হতে থাকে।
কিন্তু এই ব্যাপারটি আরো দ্রুত ঘটে যখন বেশি মাত্রায় টেলিভিশন দেখা হয়। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষণায় এমনটাই দেখা গেছে।
তবে গবেষকরা নিশ্চিত হতে পারেননি যে, টেলিভিশনই অধিক হারে স্মৃতি লোপ পাবার প্রধান কারণ।
তারা বলছেন যে, অনেক বেশি সময় টেলিভিশন দেখাটা মস্তিষ্কের জন্য আরো উত্তেজনাকর কাজ যেমন: পড়া বা শরীরচর্চা থেকে মানুষকে বিরত রাখে।
বৈজ্ঞানিক রিপোর্টে দেখা যায়, যারা দৈনিক সাড়ে তিন ঘন্টার বেশি সময় ধরে টেলিভিশন দেখেছেন, তাদের ক্ষেত্রে ৮% থেকে ১০% পর্যন্ত ভার্বাল মেমোরি হ্রাস পেয়েছে।
আর যাদের টেলিভিশন দেখার সময়সীমা এর চাইতে কম, তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের স্মৃতি হ্রাসের হার ৪% থেকে ৫%।
তবে সাবলীলভাবে ভাষা ব্যবহারে টেলিভিশন দেখার প্রভাবের কোনো প্রমাণ মেলেনি।
ইউসিএল ইন্সটিটিউট অব এপিডেমিওলজি এন্ড হেলথ কেয়ার-এর ড. ডেইজি ফ্যানকোর্ট বলছেন যে, টেলিভিশন দেখার সময়ে শিক্ষা এবং বিনোদনের ব্যবস্থা থাকতে পারে।
তার বক্তব্য, ‘সামগ্রিকভাবে পঞ্চাশোর্দ্ধ মানুষজনের টেলিভিশন দেখার পাশাপাশি অন্যান্য বিপরীতধর্মী কার্যকলাপের সামঞ্জস্য রাখা উচিৎ।’
ইংল্যান্ডে এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা একটি তালিকা থেকে ১০টি বিশেষ শব্দ কত ভালোভাবে মনে করতে পারে তারই পরীক্ষা নেয়া হয়।
একইসাথে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে প্রতিদিন তারা কতক্ষণ টেলিভিশন দেখেন। সেটা ২০০৮-০৯ থেকে ২০১৪-১৫ সালের মধ্যে।
গবেষণাটিতে স্মৃতি হ্রাসের অন্যান্য ব্যাখ্যাও গ্রহণ করা হয়।
জানতে চাওয়া হয় তাদের জীবন যাপন পদ্ধতি, বিভিন্ন আচরণ সম্পর্কে -যেমন কতটা সময় তারা বসে কাটায় বা কতটা শরীর চর্চা করে ইত্যাদি।
যদিও, গবেষণাটিতে অংশগ্রহণকারীরা টেলিভিশনে কীধরনের অনুষ্ঠান দেখেন তা জানতে চাওয়া হয়নি।
তবে, কিছু কিছু অনুষ্ঠান বা টেলিভিশনে দেখানো বিষয় মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা হ্রাসে প্রভাব ফেলে, এমনটা বলা হয়েছে।
‘বয়স্ক ব্যক্তিরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পছন্দ করেন ধারাবাহিক নাটক ধরনের অনুষ্ঠান, যা কিনা একধরনের চাপ সৃষ্টি করে। কেননা তারা ঐসব অনুষ্ঠানের চরিত্রের সাথে নিজেরা খুব বেশি একাত্ববোধ করে,’ বলছিলেন ইউসিএল এর প্রফেসর অ্যান্ড্রু স্টেপটো।
এ ধরনের পরিস্থিতি মস্তিষ্কের স্মৃতিধারণ ক্ষমতার ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যার কারণে স্মৃতিলোপ পেতে পারে, এমনটাই মনে করেন মি. স্টেপটো।
আতঙ্কিত হবার কিছু নেই
লন্ডন কিংস কলেজের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির প্রফেসর ডেম টিল উইকস মনে করেন যে, গবেষণার সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দিতে সহায়ক হতে পারেন একজন নিষ্ক্রিয় টিভি পর্যবেক্ষক।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি না এখনো এমন অনেক কিছুই আছে। যেমন আমরা জানি না যে কীধরনের অনুষ্ঠান দেখে স্মৃতি লোপ পেতে পারে, বা জানি না যে টিভি আমরা একা দেখছি কিনা বা টিভি গুগলবক্স-এর মতো প্রযুক্তির সাথে সংযুক্ত কিনা। আবার এও বলতে পারছি না যে আচরণের পরিবর্তন এনে স্মৃতিশক্তিকে বাড়িয়ে তোলা সম্ভব কিনা।’
প্রফেসর উইকস তাই মনে করেন যে, এই গবেষণাটি আমাদের স্ক্রিন টাইম বা বেশি সময় ধরে টিভি দেখার প্রতি সতর্ক করে দেয়।
তবে আতঙ্কিত হবার আগে এ নিয়ে আরো অনেক গবেষণার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেন তিনি। সেই সাথে টিভি দেখার সময়সীমাও আরো ভালো ভাবে পরিমাপ করার তাগিদ দেন।
ইউনিভার্সিটি অব সারের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির প্রভাষক ড. বব প্যাটন বলছেন, বয়স্ক ব্যক্তিদের অবশ্যই বেশি সময় ধরে টেলিভিশন দেখার ব্যাপারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
তার বক্তব্য, ‘সাধারণ ধারনা হলো টিভি আমাদের ব্রেনকে নষ্ট করছে না। তবে অবশ্যই পঞ্চাশের বেশি বয়স্কদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকমাত্রায় টিভি দেখা কিছু না কিছু পরিবর্তন আনছে।’