মিয়ানমারের পক্ষে চীনের তদবির

বৈশ্বিক জবাবদিহি থেকে মিয়ানমারকে শুধু আগলে রাখা নয়, দেশটির ওপর চাপ কমাতেও জাতিসংঘে তদবির করছে চীন। রাষ্ট্রটির যুক্তি, মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হবে না। বরং বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে এ সংকটের সমাধান হওয়া উচিত।

পশ্চিমা একটি সূত্র জানায়, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত সান গোসিয়াং গত বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য ছাড়াও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের অবস্থান তুলে ধরেছেন। এর আগে তিনি মিয়ানমার সফর করেন।

জানা গেছে, সান গোসিয়াং রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের অবস্থানকে গঠনমূলক দাবি করে বাকিদেরও তা অনুসরণের অনুরোধ জানান। চীনের ওই প্রতিনিধি জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেও এ অবস্থান তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনা উৎসাহিত করার ওপর জোর দেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, গত মাসে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে মিয়ানমার ইস্যুতে প্রস্তাব গৃহীত হওয়া এবং চলতি এপ্রিল মাসে নিরাপত্তা পরিষদসহ বিভিন্ন ফোরামে রোহিঙ্গা ইস্যু ওঠার সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে চীন এই উদ্যোগ নিয়েছে। মানবাধিকার পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত গুরুতর অপরাধগুলোর তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণে গঠিত কাঠামোকে দ্রুত কাজ শুরুর আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের কৌঁসুলির দপ্তর রোহিঙ্গাদের গণবাস্তুচ্যুতির প্রাক-অনুসন্ধান শুরু করেছে।

এদিকে নিউ ইয়র্কের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, চলতি এপ্রিল মাসে নিরাপত্তা পরিষদের আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচিতে মিয়ানমার বা রোহিঙ্গা ইস্যু নেই। তবে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের ব্রিফিং, সংঘাতকালীন নারীর ওপর যৌন সহিংসতাসহ বিভিন্ন আলোচনা ও বিতর্কে রোহিঙ্গা ইস্যু আসতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর গ্লোবাল পলিসির পরিচালক ও ‘রোহিঙ্গা : ইনসাইড দ্য মিয়ানমার জেনোসাইড’ গ্রন্থের লেখক ড. আজিম ইব্রাহিম গত সপ্তাহে সিবিএস নেটওয়ার্কের সানফ্রান্সিসকো রেডিও সার্ভিসে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের কোনো আগ্রহ নেই। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতোও মিয়ানমারে কিছু অবশিষ্ট নেই।

ইউএস আর্মি ওয়ার কলেজের ওই গবেষক জানান, প্রায় দুই বছর আগে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করার সময়ই তাদের গ্রামগুলো মাটিতে মিশিয়ে ফেলেছে। এরপর বুলডোজার দিয়ে সমান করে রোহিঙ্গাদের জমি অন্যদের দিয়ে দিয়েছে। সেগুলো এখন রাখাইন বৌদ্ধরা চাষাবাদ করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, মিয়ানমার প্রায় দুই বছর ধরে আলাপ-আলোচনা, চুক্তি এবং সেটি বাস্তবায়নে কথাবার্তা বলে কার্যত সময়ক্ষেপণ করেছে। এতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে বসবাস শুরু করতে পেরেছে। অন্যদিকে মিয়ানমারও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিশানা নিশ্চিহ্ন করার কাজ করেছে। রোহিঙ্গারা যাতে আর না ফিরে সে জন্য সীমান্তে মিয়ানমার মাইন পুঁতেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. আজিম ইব্রাহিম বলেন, চীন চাইলেই মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করতে পারে। কারণ মিয়ানমারের ওপর চীনের প্রভাব অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। কিন্তু চীন কখনো মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করবে না বলেই মনে হয়। চীন অবশ্যই মিয়ানমারকে হাতে রাখতে চাইবে। কারণ সেখানে তার দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত স্বার্থ আছে। তিনি বলেন, ‘চীন রোহিঙ্গাদের ভাগ্য নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নয়। এ কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিয়ানমারের যেকোনো ধরনের জবাবদিহির উদ্যোগে চীন সুস্পষ্ট একটি বাধা।’

এদিকে বাংলাদেশে জরুরি সফর করছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গনার। সফরের শুরুতেই তিনি গতকাল রবিবার কক্সবাজারে গেছেন

রোহিঙ্গা