মাশরাফি-সাকিবকে টপকে মুস্তাফিজ
চার বছর আগে তো এ সবই ছিল বাংলাদেশের। পঞ্চপাণ্ডব ছিলেন। মাশরাফি বিন মর্তুজার অধিনায়কত্ব ছিল। সাফল্যের পথটাও খুঁজে পাওয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সে পথ পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে হলে যে একজন মুস্তাফিজুর রহমান প্রয়োজন— তিনিই শুধু ছিলেন না।
বাঁহাতি এই বিস্ময়ের আবির্ভাব তাই বদলে দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেটকে। শত রঙের ক্যানভাস উদ্ভাসিত হয় হাজার রঙে। বিশেষত ওয়ানডে ফরম্যাটে, একের পর এক সাফল্যচূড়া জয় করতে শুরু করে দল। গত বিশ্বকাপের পর এ দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তির নাম মুস্তাফিজ—এমনটা বলায় খুব কি তাই বাড়াবাড়ি?
এক বিশ্বকাপ থেকে আরেক বিশ্বকাপের পথপরিক্রমায় ক্রমশ ধারালো হয়েছে বাংলাদেশ। সাফল্যের সোনালি হরিণ ৫০ ওভারের ফরম্যাটে হয়ে উঠছে যেন পোষা হরিণ। তাতে তুল্যমূল্য বিচারে ব্যাটসম্যানদের অবদানই হয়তো বেশি। তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদ উল্লাহরা এ সময়ে নিজেদের মানদণ্ড নিয়ে গেছেন উঁচু থেকে আরো উঁচুতে। পাশাপাশি বোলারদের অবদানও অনস্বীকার্য। মুস্তাফিজের পাশাপাশি মাশরাফি, সাকিব, রুবেল হোসেনদের মতো পরীক্ষিত পারফরমাররা যেমন আলো ছড়িয়েছেন; তেমনি মেহেদী হাসান মিরাজের মতো নবীনও হয়ে উঠেছেন অপরিহার্য।
মুস্তাফিজের অভিষেক ২০১৫ বিশ্বকাপের ঠিক পর পর। আর তা কেমন চোখ-ধাঁধানো! পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে খেলেন শুধু। আর ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডের পথচলা শুরু। প্রথম ম্যাচে পাঁচ উইকেটে; পরেরটিতে ছয় শিকার; সিরিজে ১৩টি। উল্কার মতো আবির্ভাবে সবাইকে চমকে দেন মুস্তাফিজ। ইনজুরি, অস্ত্রোপচার, ক্রিকেট থেকে নির্বাসন তাঁর অনেক সময় কেড়ে নিয়েছে বটে। তবে এই কাটার মাস্টার যে বিশেষ প্রতিভা, তা নিয়ে কখনো সংশয় জাগেনি মুহূর্তের জন্য। ৪৩ ওয়ানডেতে ২১.৭১ গড়ে ৭৭ উইকেটের পরিসংখ্যান এই পেসারের পক্ষে কথা বলছে। আর এর মধ্যে যে ২৩টি ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ী দলের অংশ মুস্তাফিজ, সেখানেই তাঁর ৫৪ শিকার। ১৫.৩৩ গড়, ৪.১৮ ইকোনমি আর ২২ স্ট্রাইকরেটও চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো। ম্যাচে তাঁর পাঁচ উইকেট তিনবার; সেরা ভারতের বিপক্ষে অভিষেক সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৪৩ রানে ৬ উইকেট।
মুস্তাফিজ-মাশরাফির পর সাকিব। এ চার বছরে ৪৮ ওয়ানডেতে ৫৭ শিকার নিয়ে। ৩৪.২৬ গড়, ৪.৮৭ ইকোনমি এ বাঁহাতি স্পিনারের। আর জয়ী দলের অংশ হিসেবে ২৪ ম্যাচে ৩৬ উইকেট সাকিবের। এর মধ্যে ২০১৫ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪৭ রানে পাঁচজনকে আউট করার কীর্তিও রয়েছে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি সাকিবের সেরা বোলিং; এখন পর্যন্ত ইনিংসে একমাত্র পাঁচ শিকারের উদাহরণ। এ ছাড়া ক্যারিয়ারের বাকি যে আটবার ইনিংসে চার উইকেট নিয়েছেন, তার মধ্যে দুটি এই চার বছরে।
বাংলাদেশের বোলিং লাইনে আরেক ভরসা রুবেল হোসেন। গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয়ে তাঁর ওই দুটি বল তো ক্রিকেট রূপকথার চিরন্তন অংশ। দুই বিশ্বকাপের মাঝে ৩৭ ওয়ানডেতে ৩৩.০৬ গড়ে ৪৫ উইকেট এ পেসারের। ম্যাচের চার উইকেটও নিয়েছেন দুইবার। তবে এ সময়ে জয়ী দলের অংশ ম্যাচগুলোয় রুবেলের পারফরম্যান্স বেশ বিবর্ণ। ১৯ ম্যাচে মোটে ২৩ উইকেট; কোনো খেলায় দুই উইকেটের বেশি নিতে পারেননি।
এঁদের বাইরে বিশ্বকাপ একাদশে বোলার বলতে দুই পেসার আবু জায়েদ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। প্রথমজন ওয়ানডে অভিষেকের অপেক্ষায়; পরেরজন ১০ ম্যাচে নিজের অমন কোনো সামর্থ্যের স্বাক্ষর রাখতে পারেননি। বাংলাদেশের আশার আকাশের ঘুড়িগুলোতে তাই লেখা থাকবে মুস্তাফিজ-মাশরাফি-সাকিব-রুবেলদের নামই।
https://www.youtube.com/watch?v=Geg0SPadJxM&feature=youtu.be&fbclid=IwAR0bKejnj4JLF8j7w7rkMLsQulyEQxsaSoOMTr_xhVavGTyvgkhZ64C3z4w