রোমান্টিক উপন্যাস (ফ্যান্টাসি থ্রিলার) ”কৃ” (পর্ব-৩)
রোমান্টিক ফ্যান্টাসি থ্রিলার উপন্যাস- কৃ (পর্ব-২)
রোমান্টিক ফ্যান্টাসি থ্রিলার উপন্যাস- কৃ (পর্ব-১)
ধ্রুব নীল
৩
আমাকে ছেড়ে বিছানার এক প্রান্তে বসে পা দোলাতে শুরু করলো কৃ। একটা কথাও বলছে না। বোঝাতে চাইছে, তোমার সমস্যা তুমি সামলাও।
আমি সমস্যা সামলাতে দরজার ছোট্ট ফুটোয় উঁকি দিলাম। স্থবির হয়ে গেল পুরো শরীর।
‘দেখেছো তো, এবার খোলো! আমি তো চোর-ডাকাত না। তোমার বউ রেশমা।’
কী-হোলে চোখ রাখলে ওপাশ থেকে বোঝা যায়। সুতরাং দেরি করলেই ঝামেলা। আমার মগজটা নিজের মতো করে ব্যাখ্যা ভাবতে শুরু করে দিয়েছে। কৃ নামের একটা মেয়ে বিপদে পড়ে আশ্রয় নিয়েছে। কয়েকজন লোক তার পিছু নিয়েছিল। পরে আমাদের বাসায় আশ্রয়…।
‘সব রাস্তা বন্ধ। একটা মাছি ঢোকারও জায়গা নাই। আধা ঘণ্টা গরমের মধ্যে বসা। পরে শুনি গাড়ি আর যাবে না।’
হড়বড় করে কথা বলতে বলতে ফ্রিজের দিকে এগিয়ে গেল রেশমা। পানি খেলো। আমি বোবার মতো তাকিয়ে আছি। এখুনি বেডরুমে ঢুকবে রেশমা। কৃ কি তার কোনো ক্ষমতা কাজে লাগাবে?রেশমা বেডরুমে ঢুকতেই আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম। এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড করে সময় দেখছি। সময় আসলে দেখা যায় না। অনুভবও করা যায় না। সময়কে বুঝতে না পেরেই মনে হয় মানুষ ঘড়ি আবিষ্কার করেছে। না হয় বড় গণ্ডগোল লেগে যেত।
রেশমা বের হলো দশ মিনিট পর। সাজগোজ করতে যত দেরি হয়, তার ঠিক উল্টোটা ঘটে সাজ ছাড়ার সময়। আজ আর সেসব নিয়ে মাথা ঘামালাম না। পিঠ বেয়ে চিড়চিড় করে একটা শীতল স্রোত নেমে গেল।
‘কই, তোমার অনলাইন অর্ডার করলে না? রান্না তো করিনি।’
আমার কিছু বলার আগেই কলিং বেল বেজে উঠল। এবার উঁকি দিল রেশমা। ‘ওহ’ বলে আমার দিকে তাকাল।
‘তোমার অর্ডার এসেছে।’
আমি মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে।
‘কী অর্ডার করেছো? যাও নিয়ে আসো।’
‘মনে হয় চাইনিজ খাবার। দেখি।’
খাবারের প্যাকেট দেখে বিভ্রান্তির মাত্রা বেড়ে গেল। চাইনিজ খাবার আসেনি। এসেছে দুই প্যাকেট বিরিয়ানি। রেশমার প্রিয় খাবার!
শোবার ঘরে ঢুকলাম। কৃ নেই। হতাশ হলাম খানিকটা। ভাবলাম তাকে জিজ্ঞেস করবো এসবের মানে কী। সে কি জানতো রেশমা ফিরে আসবে? আমাকে ভয় দেখাতে সে বাসায় এসেছিল? অদ্ভুত এক হাঁফ ছাড়া ও অসহায় অনুভূতি ছেঁকে ধরতে শুরু করেছে।
আমার পাশে বসলো রেশমা। প্যাকেট খুলে খাওয়া শুরু করেছে। আমাকেও সাধলো। একটা প্যাকেট হাতে নিলাম। প্যাকেট হাতে নিয়ে বসে আছি।রোমান্টিক উপন্যাস
রাত আটটা পর্যন্ত ঘুমিয়েই কাটিয়েছি। রেশমা রান্নাঘরে। বিকেলে ঘুম গাঢ় হলে মন খারাপ থাকে খুব। আমার মন একটু বেশিই খারাপ হলো। আমার পরিবারে বলতে গেলে কেউ নেই। শৈশব তারুণ্যের সব ঘটনা যেন অতীতের চেয়েও দূরে সরে গেছে। কৃ কি পারবে আমার সব ফিরিয়ে আনতে? নাকি সে শুধু আমার ফেলে আসা প্রেমটাই দিয়ে গেল এক ঝলক।
‘ডাটা দিয়ে চিংড়ি করলাম। আজ আর কিছু পারবো না।’
‘আমি পরে খাবো। তুমি খেয়ে নাও।’
‘আমি খাব না। বিরিয়ানি খেয়ে গ্যাস বেড়েছে মনে হচ্ছে। তুমি খাওয়া শেষে দয়া করে একটু গুছিয়ে রেখো। আমার আর শরীর চলছে না। পারলে মশারিটা টাঙিয়ে দাও।’
আমি মশারিটা টাঙিয়ে দিলাম। মন বিষণœ থাকলে কোনো একটা কাজ করলে সেটা কমে। আমি মশারি টাঙিয়ে মন ভালো করার চেষ্টা করলাম। অথবা আমার মনের কোণে ঘাপটি মেরে থাকা ইচ্ছেটা হলো, রেশমা যেন তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে।রোমান্টিক উপন্যাস
রাত এগারোটা পর্যন্ত টানা লিখে গেলাম। মিসড কল পেয়েই ছুটে গেলাম বারান্দায়। ছাদে অন্ধকার। অর্ধেক চাঁদের আলো। কাউকে দেখলাম না।
‘আমি এখানে।’
কেঁপে উঠলাম ভয়ে। লজ্জাও পেলাম। বারান্দাতেই এক কোণে চেয়ারে বসে আছে কৃ। পরনে আগের নীল শাড়িটাই।
‘ওহ।’
কৃর চেহারায় অভিমান।
‘খুব তো সময় কাটালে। বিরিয়ানিও খেলে, আবার ডাটা-চিংড়ির ঝোলও। ঘুমিয়েছো নাক ডেকে।’
আবারো অপরাধবোধ ছেঁকে ধরলো আমাকে। এবার আর অত চিন্তা করলাম না। কৃর পাশে রাখা চেয়ারে বসে পড়লাম। ওর হাত ধরতে ইচ্ছে হলো। দমিয়ে রাখলাম ইচ্ছেটা। ও বুঝুক। আমিও কষ্ট পাচ্ছি। কিন্তু কৃকে দেখে মনে হচ্ছে না..।
‘আমি জানি তুমি স্বার্থপর নও। তোমার সবই জানি। তবে আর জানবো না। সব জেনে ফেললে কোনো মজা নেই।’
কথা ঠিক। সব জানা হয়ে গেলে রহস্য কোথায়।
‘কৃ তুমি ভাত খাবে? নিয়ে আসি?’
‘যাও নিয়ে আসো। কিছু বলে দেব না তোমাকে। দেখি তুমি কী করো।’
আমার মাথার ভেতর ঢুকে আর বলে দিতে হলো না। আমি জানি কৃ কী চায়। ভাত আর ডাটা-চিংড়ির তরকারি নিয়ে এলাম। ওভেনে গরমও করে নিলাম। তারপর বারান্দায় এসে হাত বাড়িয়ে ধরলাম কৃর মুখে। আমার হাতেই খেল পুরোটা।
‘তোমার বউ তো ভালোই রান্না করে।’
‘হুম। সব পারে ও। আরেকদিন চাইনিজ করতে বলবো।’
‘তুমি তো দেখছি মানুষ ভালো না। বউ রান্না করে দেবে, আর সেটা প্রেমিকাকে খাওয়াবে?’
‘আমার বউ আমার প্রেমিকা কে বলল। সে আমাকে সহ্যই করতে পারে না।’
‘কারণ সে জানে তুমি তাকে ভালোটালো বাসো না।’
‘হতে পারে।’
‘এসব হতে পারে টতে পারে বললে তো হবে না। এটাই সত্যি।’
‘আর কী কী সত্যি জানো তুমি?’
‘খুব বেশি জানি না। তোমাকে আমার ভালো লেগেছে বছরখানেক হলো।’
‘কেন? তুমি তো কৃ। আমাকে ভালো…।’
ধপ করে জ্বলে উঠল যেন চোখজোড়া।
‘ওটা আমার ইচ্ছে! আমি তোমাকে ভালোবাসবো, তাতে তোমার কী! এর সঙ্গে তোমার বিয়ে করাকরিরও সম্পর্ক নেই! তবে তোমার বিয়ে করাটা ঠিক হয়নি।’
‘কে জানে, ভুল তো মানুষই করে। কৃরা ভুল করে না?’
‘নাহ, অত ভুলশুদ্ধ বিচার করার সময় নেই আমার।’
এবার মনে হলো একটুখানি হাসতে দেখলাম কৃকে। চাঁদের আলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলেছে তার মুখ থেকে ঠিকরে আসা আলো। তবে দৃষ্টিটা আবার আকাশের দিকে ফিরিয়ে নিতেই মনে হলো কোথায় যেন হারিয়ে যেতে লাগল কাজলচোখের মেয়েটা।
‘আমাকে নিয়ে তোমার সংসার করতে ইচ্ছে করছে না?’
‘করছে এখন। পরে নাও করতে পারে।’
‘চলো শুরু করে দেই। বউকে জানাও। ওকে শুধু শুধু আটকে রাখার দরকার কী।’
আমিও কৃর মতো আকাশে তাকিয়ে একটা কিছু খোঁজার চেষ্টা করছি। উত্তর দিলাম না।
‘নাহ, তোমাকে ভয় দেখানো কঠিন। তুমি মোটেও সাধাসিধে না। মগজে মগজে শয়তানি।’
‘তুমি তো আমার মগজ পড়ে ফেলেছো। কিছু বাকি নাই।’
এবার কৃ মুখে কিছু বলল না। হাসল। অদ্ভুত মায়াময় সেই হাসি। আমি আকাশ থেকে চোখ ফেরাতে বাধ্য হলাম।
কৃ আবার তাকাল আমার চোখে। টলটলে চোখ। সেই ভয়ানক আটকে ফেলার মতো দৃষ্টি। আমার ভেতর জেদ চেপে গেল। ধরা দেব না ঠিক করলাম। লুকোচুরি খেলতে শুরু করে দিল মনটা।রোমান্টিক উপন্যাস
কৃ নাছোড়বান্দা। চ্যালেঞ্জ পেতেই তার চোখজোড়া ঝিলিক দিয়ে উঠল। রহস্যময় হাসিটা হয়ে গেল দুষ্টুমি হাসি। তারপর পা গুটিয়ে আমার দিয়ে ঝুঁকে এসে তাকাল চোখের ভেতরে। কখনো কোনো মাদক টানেনি আমাকে। তবে পরিষ্কার বুঝতে পারছি মাদকাসক্তের মগজের দখল কিভাবে চলে যায় মাদকের হাতে, ধীরে ধীরে। আমার আসক্তি বাড়ছে হু হু করে। আমি আমার ভেতর নেই আর। আমার কিংবা কৃর ঠোঁট, যেকোনো একটা এগিয়ে আসতে শুরু করলো আরেকটির দিকে। চুমু খাওয়ার সময়ই কৃ ফিসফিস করে কী যেন বলল। ওর নিজের ভাষায়। শুনতে মন্ত্রের মতো মনে হলো। এরপর পরিষ্কার বাংলায় বলল, ‘চলো উড়ে যাই।’
‘চলো!’
এরপর যা ঘটল তা অদ্ভুত ঘটনার সীমা ছাড়িয়ে গেল। আমি ধীরে ধীরে ডুবে যেতে লাগলাম কৃর মাঝে। কৃ তার বাঁধন আরো শক্ত করলো। বারান্দার গ্রিল গলে বেরিয়ে গেলাম দুজন। শূন্যে ভাসছি আমি!(চলবে)
লেখকের অটোগ্রাফসহ মাত্র ২০০ টাকায় ‘কৃ’ এর হার্ডকপি পেতে এই পেইজে ইনবক্স করুন বা কল করুন ০১৪০৭৩৬৫০৭২