ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষক দম্পতির বিরুদ্ধে শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। তারা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী এবং তার স্ত্রী ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক সুতপা ভট্টাচার্য।
অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবহিত। ওই শিক্ষক কেন এ ধরনের কাজ করেছেন, তা দেখা হচ্ছে। শিশুটি এখন নিরাপদে আছে। আমাদের তত্ত্বাবধানে তাকে রেখেছি।’ আনিতার সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, দেখা করা যাবে না। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেখছে।’
তবে অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী ও সহকারী অধ্যাপক সুতপা ভট্টাচার্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গোবিন্দ চক্রবর্তী আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীলদলের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে।
গোবিন্দ চক্রবর্তী ও সুতপা ভট্টাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি বাসায় থাকেন। তাদের হাতে নির্যাতনের শিকার শিশুটির নাম আনিতা। তার গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড় জেলায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আনিতা কয়েক বছর ধরে গোবিন্দ চক্রবর্তী ও সুতপা ভট্টাচার্য দম্পতির বাসায় কাজ করতো। তাকে বিভিন্ন সময় এই দুই শিক্ষক নির্যাতন করতেন। আনিতাকে ঠিকমতো খাবার দেওয়া হতো না। বাসায় আটকে রাখা হতো। একপর্যায়ে গত মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) সে বাসা থেকে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ আনিতাকে পাশের উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়েরে ভেতর থেকে উদ্ধার করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আনিতাকে যখন মারধর করা হতো, আমরা এর প্রতিবাদও করেছি। আনিতার নাম নিয়েও তাদের আপত্তি ছিল। কাজের মেয়ের নাম কেন এত আধুনিক হবে! এটা নিয়ে তারা ওই শিশুকে খোটা দিতেন। তাকে তিন বেলা খেতে না দিয়ে একবেলা খেতে দিতেন। শিশুটিকে দেখলেই আপনারা বুঝতে পারবেন!’ শিশু গৃহকর্মী
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ‘গত মঙ্গলবার ওই স্যারের কোয়ার্টারে পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এসেছিলেন। তারা কোর্য়াটারের মধ্যে এ বিষয়ে একটি মিটিং করেছে।’
আনিতা এখন উদয়ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক উম্মে সালেমা বেগমের বাসায় আছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে উম্মে সালেমা বেগম ফোন দেওয়া হলে বলেন, ‘আমি ফোনে কিছু বলতে পারবো না।’ শিশু গৃহকর্মী
তবে গোবিন্দ চক্রবর্তী অভিযোগ অস্বীকার করে এই প্রতিবেদকের ফোন কেটে দেন। পরে তাকে একাধিকবার ফোন দিলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
অভিযোগের বিষয়ে তার স্ত্রী সুতপা ভট্টাচার্যের কাছে জানতে চাইলে তিনিও অভিযোগ অস্বীকার করে তাড়াহুড়ো করে ফোন কেটে দেন। পরে তাকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। শিশু গৃহকর্মী
নীলদলের পরিচালনা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আমি এমন একটি ঘটনার কথা শুনেছি। তবে তারা যদি এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়ে সুবিচার নিশ্চিত করা।’