সরকারি চাকুরেদের আরো সুবিধা

আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর গত ১০ বছরে সরকারি চাকরিজীবীদের নানা সুবিধা দিয়ে এসেছে। এ তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন হতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য বীমা। এ ক্ষেত্রে সরকারের সাড়ে ১৩ লাখ কর্মচারীর জন্য ‘গোষ্ঠী মেয়াদি বীমা’ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ১৫ বছরের মেয়াদি এ বীমার প্রিমিয়াম নেওয়া হবে চিকিৎসা ভাতা থেকে। অর্থাৎ মূল বেতনে কোনো চাপ পড়বে না। হাসপাতালের যাবতীয় খরচ এর আওতাভুক্ত থাকবে। আর গর্ভবতী মায়েদের দেওয়া হবে বিশেষ সুবিধা।

সরকারি চাকরিজীবীদের পরিবারের সদস্যদেরও এর আওতায় আনা হতে পারে। তবে তার জন্য পৃথক প্রিমিয়াম দিতে হবে। সব বিষয় পরিচালনার জন্য করা হবে একটি নীতিমালা। গতকাল বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অজিত কুমার পালের সভাপতিত্বে এসংক্রান্ত বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বেড়েছে প্রায় শতভাগ। এরপর দেওয়া হয়েছে স্বল্প সুদে গাড়ি ঋণ সুবিধা। ভর্তুকি দিয়ে গৃহঋণ সুবিধাও পাচ্ছেন তাঁরা।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এবার ১৩ লাখ ৬২ হাজার সরকারি চাকুরে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আসছেন। পুরো বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হবে জীবন বীমা করপোরেশনের মাধ্যমে। গতকালের বৈঠকে জীবন বীমা করপোরেশন কিভাবে এটি বাস্তবায়ন করবে তার একটি রূপরেখা দিয়েছে। কিন্তু এ রূপরেখা অনুযায়ী কাভারেজ মাত্র পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আসে। বৈঠকে এটিকে বাড়িয়ে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সরকারি চাকরিজীবীরা স্বাস্থ্য বীমার আওতায় মেয়াদ শেষে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পাবেন। তবে এ ক্ষেত্রে গ্রেডের ভিত্তিতে বিভিন্ন ধাপ থাকবে। এসব ধাপের ওপর ভিত্তি করে টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। তবে ধাপ যা-ই হোক না কেন হাসপাতালের বেড ভাড়া, কনসালটেন্সি ফি, অপারেশন থেকে শুরু করে ওষুধ কেনা, অক্সিজেন সরবরাহ, অ্যাম্বুল্যান্স সার্ভিস সব কিছু এর আওতায় আসবে।

আর এ সব কিছু করা হবে শ্রীলঙ্কার ‘আগ্রাহারা ইনস্যুরেন্স কম্পানি’র স্বাস্থ্য বীমার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। তবে এ বীমার জন্য সরকার কোনো ভর্তুকি দেবে না। প্রিমিয়ামের টাকা কাটা হবে চিকিৎসা ব্যয় থেকে। সরকারি চাকরিজীবীরা চিকিৎসা খরচ বাবদ এক হাজার ৫০০ টাকা করে ভাতা পান। এ ক্ষেত্রে পুরো টাকার অর্ধেক যাবে ফিক্সড ডেপোজিটের একটি তহবিলে। বাকি অর্ধেক টাকা যাবে প্রিমিয়াম খরচ হিসেবে। প্রিমিয়ামের টাকা থেকে হাসপাতালের ব্যয় বহন করা হবে। আর তহবিলের টাকা পাওয়া যাবে বীমার মেয়াদ শেষে।

সুবিধা : সরকারি চাকরিজীবীদের গোষ্ঠী বীমার সঙ্গে অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে স্বাস্থ্য বীমা রাখা হচ্ছে। এ বীমার সুবিধাভোগীর বয়স হবে সর্বনিম্ন ১৮ বছর এবং সর্বোচ্চ ৫৯ বছর। এখানে ১৮ বছর রাখা হচ্ছে সরকারি চাকুরেদের পরিবারের সদস্য অন্তর্ভুক্তির সুবিধা দেওয়ার জন্য।

হাসপাতাল চিকিৎসা খরচ বাবদ সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে গতকালের বৈঠকে। এ খরচ দেওয়া হবে সর্বোচ্চ ২০ দিনের জন্য। রুম ভাড়া হিসেবে ২০ দিনের জন্য ছয় হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে বৈঠকে। কনসালটেন্সি ফি বাবদ সর্বোচ্চ ৯ হাজার টাকার দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ওষুধ সংক্রান্ত খরচ ধরা হয়েছে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা। বিভিন্ন টেস্ট করার জন্য সরকারি চাকুরেদের তিন হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়ার কথা বলা হয়েছে বৈঠকে। সার্জারি ফি বাবদ সর্বোচ্চ ৯০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া অক্সিজেন, থেরাপি, অ্যাম্বুল্যান্স সার্ভিসসহ অন্যান্য সার্ভিসের জন্য ৪৭ হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রেগন্যান্সি কাভারেজে নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। অ্যাবরশন বা মিসকারেজের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। আর সিজারিয়ান ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে বৈঠকে।

শর্ত : বীমার দাবির ক্ষেত্রে হাসপাতালের কাভারেজ ছাড়া প্রেগন্যান্সি সংশ্লিষ্ট কোনো দাবি এর আওতায় পড়বে না। প্রথম দুই বছরের মধ্যে হার্নিয়া, গল ব্লাডারের পাথর অপসারণসহ বেশ কিছু রোগের ক্ষেত্রে কোনো অর্থ দেওয়া হবে না। ইচ্ছাকৃত ইনজুরি, মাদকদ্রব্য নেওয়া, অ্যালকোহল, এইডসের টেস্ট ও অন্যান্য খরচ এর আওতায় পড়বে না। এগুলোসহ আরো বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে বৈঠকে উপস্থাপিত স্বাস্থ্য বীমার রূপরেখায়।

বৈঠকে উপস্থিত একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, এগুলো এখন প্রস্তাব আকারে রয়েছে। এ প্রস্তাবগুলোর সঙ্গে আরো সুবিধা যোগ হবে। সরকারি চাকরিজীবীদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়া হবে। প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রেও সুবিধা বাড়বে। বিষয়গুলো চূড়ান্ত করতে আরো সময় লাগবে বলে তিনি জানান।

সরকারি চাকরি