সায়েন্স ফিকশন রক্তদ্বীপ-১
নিশির ডাকে
বসন্তের শুরু। মেঘ-কুয়াশীহীন আকাশ। চাঁদটাকে একটু বড়ই দেখাচ্ছে। টুকটাক কথাবার্তা কানে আসলেও কুকুর বিড়ালের ডাকাডাকি নেই। নেই বাদুড়ের পাখা ঝাপটানি।
‘গেলাম মা।’
‘এত রাইতে কই যাস! নিশির ডাকে ধরব কইলাম!’
‘রাইত হয় নাই। যামু আর আমু। আব্বা যেন খুঁজতে বাইর না হয়। চইলা আসমু।’
‘তোর বাপ গেসে মাছ ধরতে। তারে খুঁজতে আমারেই বাইর হইতে হইব।’
কিশোর রতনকে নিয়ে মায়ের চিন্তা কাটে না। ছেলে সৈকতের পশ্চিমে যাচ্ছে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে। মা রোকেয়া বেগম দরজা লাগিয়ে ভেতরের ঘরে বসে থাকে চুপচাপ। মনে অজানা শঙ্কা।
‘ও রতনের মা, বাড়ি আছো? এক ঘড়া পানি নিয়া গেলাম।’
‘দশ ঘড়া নিয়া যাও। এই কবিরাজি পুশকুনির পানি তো আর শেষ হবি না।’
গত অমাবস্যার রাতে ঘোষালের ছোট ছেলেটা মারা গেছে এই পুকুরেই। আচমকা একটা গাছের ডালে বাড়ি খেয়ে পাড় থেকে পুকুরে পড়ে যেতে দেখেছিল আয়শাবুড়ি। বুড়ির দৃষ্টিশক্তি নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে ঘোষালের ছেলেকে আর পাওয়া গেল না। লাশও ভেসে উঠল না। রোকেয়ার কানে এখনও ঘোষালের বউয়ের কান্নার শব্দ বাড়ি খায়। রতনও যদি…!
দুলে উঠলো রোকেয়ার শরীর। কপালে বিন্দু ঘাম। ভয়টা জেঁকে বসেছে বিনা কারণে। শক্তসমর্থ শরীর। তবু মনে হচ্ছে জ্ঞান হারাবে।
উঠে দাঁড়াল রোকেয়া। পড়ে গেল না। অজানা আতঙ্কে জলদি দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। কানের ভেতর কীসের যেন গুঞ্জন।
সামনেই কলতলা। আশপাশে ঝোপঝাড়। কলতলার পাশে বড় পুকুর। আজব এক পুকুর। আকাশে চাঁদ না থাকলেও মাঝে মাঝে পানি জ্বলজ্বল করে। পুকুরে কি কেউ পড়ে গেল? রতন না তো! বিপদ! ভীষণ বিপদ! কিন্তু কীসের বিপদ? রোকেয়া বেগম চাঁদের আলোর মাঝে উঠোনে দাঁড়িয়ে আছেন। কানের কাছের শব্দটা বাড়ছে। রোকেয়া বেগম বুঝতে পারছেন শব্দটা তিনি একাই শুনছেন। আর কেউ শুনছে না। কারণ শব্দটা হচ্ছে তার মাথার ভেতর।
আচমকা পাহাড় সমান ভয় চেপে ধরল বুকে। রতনই বিপদে পড়েছে! অনেক বড় বিপদ!
ছুটতে শুরু করল রোকেয়া বেগম। ভূতে পাওয়ার মতো চোখ ঠিকরে বের হয়ে আসছে। ছুটছে বাড়ির পেছনের গাছগাছালি ছাওয়া জঙ্গল ধরে। এরপর ধানি জমি। খানিকটা এগোলেই পুবের সৈকত। পায়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই রোকেয়ার।
‘ওই তো রতন! রতন তুই জঙ্গল থেইকা সইরা যা! রতন তোর পিছে বাঘ! তোরে খাইতে আসতেসে!’ একপর্যায়ে উঁচু নিচু জমিতে আছড়ে পড়ল রোকেয়া বেগম। থিকথিকে কাদাভর্তি ছোট ডোবা। ওঠার চেষ্টা করছে। পা আঁকড়ে ধরেছে কাদা। টেনে নামাচ্ছে নিচে!
পনের দিন পর। অমাবস্যার ঘুটঘুটে অন্ধকারে বাড়ি ফিরছেন পিন্টু বনিক। সমুদ্রে গজিয়ে ওঠা এক চিলতে কুসুমচর দ্বীপের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। স্কুল বলতে চালাঘর। সাইকেলের প্যাডেল ভেঙে গেছে। তাই পা-ই ভরসা।
কদিন পর স্কুলটা বন্ধ হয়ে যেতে পারে ভেবে বিমর্ষ পিন্টু। দিন দিন ছাত্র-ছাত্রী কমছে। দ্বীপ ছেড়ে ভাগতে শুরু করেছে মানুষজন। অভিশাপ লেগেছে। জমিজমাও চুপ। ফসল হচ্ছে না অনেক দিন। মাছই ভরসা।
ভাবনার ফাঁক গলে বারবার নিজের মৃত দাদার ছবিটাই ভাসছিল পিন্টু বণিকের মাথায়। দাদার মানসিক সমস্যা ছিল। অনেকে বলে খুনখারাবিও করেছেন। খুন! শব্দটা মাথায় ঝন করে বাড়ি দিয়ে গেল। শিরদাঁড়ায় শীতল স্রোত। যেন দাদার অশরীরী আত্মা তার পিছু নিয়েছে।
‘পিন্টু! পিন্টু! আমারে এক গেলাস পানি দে!’ ঝাঁকি খেলেন পিন্টু বণিক। স্পষ্ট বুঝতে পারছেন কথাটা শুনেছেন মাথার ভেতর। আশপাশে কেউ কিছু বলেনি! তারপরও এদিক ওদিক টর্চের আলো ফেললেন। পিন্টু বণিক বুঝতে পারছেন তিনি ভয়ে আচ্ছন্ন হয়ে গেছেন।
ভূতপ্রেতে বিশ্বাস করেন না একচুল। কিন্তু নিজেকে যতই বোঝানোর চেষ্টা করছেন ততই চেপে ধরছে উটকো ভয়। দাদা যেন রামদা হাতে ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছেন।
হনহন করে হাঁটা দিলেন পিন্টু। বুকের ধড়ফড়ানি বাড়ছে। মনে হলো ঘাড় ফেরালেই দেখতে পাবেন ত্রিশ বছর আগের মৃত দাদার বিকৃত লাশটা তাকিয়ে আছে ফ্যালফ্যাল করে। আর বলবে, আমারে পানি দে।
আচমকা হ্যাঁচকা টান। হুড়মুড়িয়ে পড়লেন পিন্টু বণিক। মেরুদণ্ডের দুয়েকটা হাড় নড়েচড়ে গেছে নির্ঘাৎ। একটা কিছু চেপে ধরেছে গলা। চাপ ক্রমে বাড়ছে। দড়ির মতো, কিন্তু দড়ি নয়। হাল ছেড়ে দিতে বেশিক্ষণ লাগল না পিন্টু বণিকের। দেহখানা ধীরে ধীরে গায়েব হয়ে গেল জঙ্গলের ভেতর।
বারো পনের দিন পর। মধ্যরাত। সমুদ্রের একটা বড় খাড়ি এসে ঢুকেছে কুসুমচরের দক্ষিণ-পশ্চিমে। সেখানে মাছ শিকারে জাল নিয়ে হাঁটছে রোগা পাতলা মধ্যবয়সী হামু। হামিম থেকে হামু। মাছ ধরা তার নেশা।
লোকের বানানো নামটা ভালই লাগে। প্রায়ই বিড়বিড় করে ‘আমি হামু মাছ খামু’। মাছ ধরে, খায়দায় আর গভীর রাত পর্যন্ত দ্বীপ চষে বেড়ায়।
আজ কাউকে দেখতে পেল না খাঁড়ির তীরে। জাল ফেলতেই প্রথম ঝাঁকে অনেকগুলো ছোট মাছ। হামু সেগুলোকে পুঁটি বলে ছড়া কাটে। ‘পুঁটিরে পুঁটি, তুই আমার ঘুঁটি।’
দ্বিতীয়বার জাল ফেলার আগেই খচ করে বিঁধল ভয়টা। জালে যদি একগাদা সাপ উঠে আসে! বাঘ সিংহ সামনে আসলেও ভয় পাবে না হামু। কিন্তু সাপে তার ভীষণ ভয়। জাল টেনে তুলছে না। যেন সে নিশ্চিত জাল ওঠালেই ফণা তুলে ধরবে শখানেক গোখরা। যারা কিনা যুগ যুগ ধরে ঘাপটি মেরে বসে আছে খাড়িতে।
জালটা পানিতে ছুড়ে ফেলল হামু। অপার্থিব ভয়টা তাড়ানোর চেষ্টা করল। মনে পড়ে গেল কিছুদিন আগেও জঙ্গলে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল একজনের হাড়গোড়।
ছুট লাগাল হামু। পেছনের ডোবায় একগাদা সাপের হিস হিস কানে বেজে চলেছে।
হামু ছুটে চলেছে পশ্চিমের সৈকতে। ঘাটে যেতে পারলেই যেন বেঁচে যাবে এ যাত্রা। মসৃণ বালিতে দৌড়াতে কষ্ট হচ্ছে না।
ওই তো কাছেই! আর একটু! এক লাফে নৌকায় চড়েই ইঞ্জিন চালু করল। ভরা কাটালের রাতে পানির অভাব নেই। দুলে উঠল গোটা সমুদ্র। কুসুমচরের পাথুরে খাঁজে আছড়ে পড়ল একরাশ পানি। নৌকায় ঘুমিয়ে ছিল এক জেলে। তার ঘুম ভাঙল না। তরতর করে এগিয়ে চলল হামু। তার পেছনে ধু ধু চর ভেসে যাচ্ছে চাঁদের আলোয়। চোখে একরাশ ভয় নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে লোকটা।
সায়েন্স ফিকশন রক্তদ্বীপ-২
অপার্থিব
‘তুই তো বিজ্ঞানী। তুইও মানিস ভূত আছে! শুনে ভাল লাগল।’
‘অবশ্যই বিশ্বাস করি। পৃথিবীতে কত প্রকার প্রাণী আছে সেটা কেউ জানে না। জানতে আরো কয়েকশ বছর লেগে যাবে। একদিন ভূতও আবিষ্কার হবে। সেটার বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হবে। ধর আমি আবিষ্কার করে ফেললাম। নাম হবে তুষারোবিয়া ইশতিয়াকিরাম।’
উদ্ভিদবিজ্ঞানী, লেকচারার ও লেখক তুষার ইশতিয়াকের কথায় রাগ করতে গিয়েও করতে পারছে না ব্যবসায়ী বন্ধু মিলন। ব্যবসার কাজে এদিক ওদিক ঘুরতে থাকে। তুষার জানে, ঘোরাঘুরিটা ব্যবসার জন্য না, ওটা মিলনের নেশা। বিচিত্র সব জায়গায় ঝামেলা না পাকালে ওর দমবন্ধ লাগে।
‘তুই বিশ্বাসের ব টাও করিস না। আমি জানি। কিন্তু তোকে ভূত গিলিয়ে ছাড়ব। শুধু চল একবার কুসুমচর।’
‘কুয়াকাটা কক্সবাজার হলে কথা ছিল। কুসুমচরে গিয়ে কী খাব, কই থাকব।’
‘সব ব্যবস্থা আছে। ব্যবসা করি দশ বছর। লাইনের অভাব নাই। আর চরটা যে থানার আন্ডারে, সেখানে আমার বন্ধু আছে। সিকিউরিটি রিস্ক নাই। ডাকাত দুচারটা থাকতে পারে, থাকুক। তারচেয়ে বড় কথা..।’
কথাগুলো কান দিয়ে বের করতে ব্যস্ত ছিল তুষার। এবার হেসে ফেলল, ‘সেখানে ভূত আছে। আর ভূতের জন্য আমাকে বাড়তি প্রটেকশন নিতে হবে?’ এক কাজ কর, বাজার থেকে এক কেজি রসুন কিনে আন। ভূত রসুন ভয় পায়।’
মিলনের চেহারাই বলছে কুসুমচরে তার বিশেষ আনাগোনা নেই। কিন্তু তুষারের উঠে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকানো দেখে মুখে হাসি। বুঝে নিল, যেতে রাজি হয়েছে বন্ধু। অ্যাডভেঞ্চারের এই আকালে এমন সুযোগ কেউ হাতছাড়া করে!
‘বেশি কিছু নিস না। ব্যাগ ভারি হলে ঘুরতে সমস্যা।’
‘ঠিক আছে। যাব আর আসব। ক্যামেরা ছাড়া আর কিছু নেব না। ফিরে এসে পাণ্ডুলিপিও জমা দিতে হবে। আর যদি লেখার মতো গল্প না পাই, তবে তোকে মেরে হরর গল্প বানিয়ে দেব।’
‘গল্প না দোস্ত, আরব্যরজনীর মহাকাব্য লিখতে পারবি। জলদি গোছা। লঞ্চ ধরতে হবে।’
নৌকা পাড়ে ভেড়ার আগেই লাফিয়ে নামল মিলন। বুঝিয়ে দিল এ কাজ সে বহুবার করেছে। জিন্সের তলানি ভিজে যাওয়াটাকে গা করল না। তুষার নামল সাবধানে। নিজের দিকে যতটা না, তারচেয়ে বেশি খেয়াল ক্যামেরার ব্যাগে।
চোখ বুলিয়ে নিল। সৈকত সামান্যই। ঝাউবন, নারকেল আর বুনো গাছের ঝোপঝাড়ই বেশি। কিছু গাছ অচেনা।
মাত্র নেমেছে ওরা। এমন সময় উটকো সতর্কবার্তা।
‘নাইমো না! নাইমো না! একদম শেষ হইয়া যাইবা। খুব ভয়! খুব ভয়!’
পাশের একটা ছোট পানসি নৌকা থেকে কে যেন বলল কথাটা।
‘ডাবল মার্চ ম্যান!’ তাগাদা মিলনের।
তুষার ধীরে হাঁটছিল। মিলনের কথায় বুঝল আশপাশে রিকশা বা ভ্যানগাড়ির আশা না করাই ভাল। পাশেই একটা বড় ইঞ্জিন নৌকা ছাড়ছে। তাকাল তুষার। গাদাগাদি করে বসেছে লোকজন। সবার হাতে বোঁচকা। দুচারটে ছাগলও চোখে পড়ল।
‘দ্বীপ ছাড়ছে নাকি?’
তুষারের প্রশ্ন শুনতে পেল না মিলন। হনহন করে হেঁটে এগিয়ে গেছে অনেকখানি।
‘যাচ্ছি কোথায়?’
‘জানি না!’
মিলনের কথায় টেনশন নেই। জানি না কথাটা এমন করে বলল যেন আগে থেকেই সব জেনে বসে আছে।
ঘাবড়ে গেল না তুষার। কুসুমচরে পরিচিত কেউ থাকার প্রশ্নই আসে না। তবে ব্যবস্থা একটা হবেই।
দুপুরের মধ্যে জুটে গেল থাকা-খাওয়ার জায়গা। বুড়ো নিশিকান্তের কুটির ঘরে।
কুসুমচরের লোকজন চর ছেড়ে খুব কমই বের হয়। সবাই বলে চর। ছোটখাট দ্বীপও বলা যায়। অজস্র বুনো ঝোপঝাড় আর বড় বড় গাছের ছড়াছড়ি। টেকনাফ থেকে দক্ষিণ-পুবে। দেশের জলসীমাতে থাকলেও এ দিকটায় জেলেনৌকারও আনাগোনা তেমন নেই।
বিদ্যুৎ নেই। ক্যামেরার ব্যাকআপ ব্যাটারি আছে দুটো। মোবাইল ফোনও কাজ করবে না নিশ্চয়ই। ও নিয়ে দুঃখ নেই তুষারের। এমন দুর্গম চরে সেলফোন টাওয়ার মানায় না।
‘তুই তো রীতিমতো কলম্বাস! এ দ্বীপ আবিষ্কার করলি কী করে?’
‘আরে! মাছের কারবার এসব চরেই তো জমে। ফসল তেমন ফলে না। সবাই মাছ ধরে।’
মিলন যতই ব্যবসার গল্প ফাঁদুক, তুষার বুঝতে পারে তার শৈশবের বন্ধুটা অ্যাডভেঞ্চার বলতে পাগল। ইদানীং প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে কী করে এই নেশায় তুষারকেও আসক্ত করা যায়।
রাতে খাওয়ার সময় মিলন বেশ উত্তেজিত। অচেনা সামুদ্রিক মাছের ভুনা দিয়ে গপাগপ গিলল তুষার।
বাঁশের বেড়া আর টিনের ঘর বুড়ো নিশিকান্তের। সঙ্গে চিরু নামের যে ছেলেটা আছে সে পাশের একটা লাগোয়া ঘরে শুয়েছে। তুষার গল্প জমানোর চেষ্টা করল তার সঙ্গে। গুছিয়ে বলতে না পারলেও চিরু জানাল সে একবার এক দানোর কবলে পড়তে যাচ্ছিল। নিশির ডাক পেয়ে নাকি ঘর ছেড়ে দৌড় দিয়েছিল। পরে দানো তাকে তুলে আছাড় দেয়। সে যাত্রা বেঁচে যায়। পরে শুনতে পায়, ওই রাতেই মারা গিয়েছিল হরিপদের নাতি।
বসন্তের শেষের দিক। কড়া শীতের আমেজ নেই। ঝিরি ঝিরি বাতাস। বিছানায় তড়াক করে লাফিয়ে উঠেই ব্যাগের ভেতর থেকে একটা ফাইল বের করল মিলন। একগাদা পুরনো পত্রিকার কাটিং। জাতীয় দৈনিক নয়। পটুয়াখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে ছাপা হয়।
‘পড়!’
‘সারমর্ম করে দে। পড়ার সময় নেই।’
মিলন গোছাতে ব্যস্ত হয়ে গেল কাটিংগুলো। চোখ বোলাতে লাগল তুষার। সব অপঘাতে মৃত্যুর সংবাদ। কোনোটারই ক্লু মেলেনি। এক বালক নিখোঁজ হওয়ার তিন মাস পর আচমকা এক জেলের জালে তার কংকাল উঠে আসে। দ্বীপের ভেতরেরই কোনো এক পুকুরের তলা থেকে। আরেক তরুণীর লাশ পাওয়া গিয়েছিল গাছের উঁচু একটা ডালে ঝুলন্ত অবস্থায়। গলায় গাছের একটা গুড়ি পেঁচানো ছিল।
‘নির্ঘাৎ খুন করে আত্মহত্যা বলে বাঁচার চেষ্টা।’
‘শার্লক হোমসগিরি পরে খাটা। আগে সবকটা দেখে নে।’
একই ধরনের আরো গোটা দশেক সংবাদ দেখল তুষার। হাই তুলল। মিলন চোখ বড় বড় করে তাকাল বন্ধুর দিকে।
‘তুই একটা হাঁদারাম!’
‘আমি গোয়েন্দা নই, পুলিশও নই। আমি লেখক। বানিয়ে বানিয়ে গল্প লিখি।’
‘তারিখগুলো দেখ! তা হলে বুঝবি, ঘটনা সত্য না মিথ্যা।’
‘হুম।’
দশ মিনিট সময় লাগল মেলাতে। ভ্রূ কোঁচকাল তুষার। নিছক কাকতাল বলে উড়িয়ে দিতে আসলেই কষ্ট হচ্ছে। সবকটা মৃত্যু হয়েছে পূর্ণিমা না হয় অমাবস্যার রাতে।
‘সম্ভবত প্রথম কয়েকটা ঘটনার পর খুনি কিংবা খুনিরা এই ধারণাটাকেই বেছে নিয়েছে। মানে তোর কাউকে খুন করা দরকার, পূর্ণিমা বা অমাবস্যার রাতেই সেটা কর, তাহলে দোষ পড়বে ভূত বেচারার কাঁধে। ভাল বুদ্ধি। এটা নিয়ে বরং একটা সিরিয়াল কিলারের গল্প ফাঁদা যায়।’
মিলন কাটিংগুলো দ্রুত হাতে গোছাল। তুষারের দিকে তাকাচ্ছে না। ঝড়ের আগের শীতলতা তার চেহারায়।
‘শোন! আজ পূর্ণিমা। গত দুই বছরে গুনে গুনে ৪৮ জন মারা গেছে এই দ্বীপে। আজও একজন..।’
তুষারও সিরিয়াস ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকল মিলনের দিকে। এরপর হো হো করে হেসে উঠল। আড়াল থেকে নিশিকান্তের গলা শুনে থেমে গেল।
‘বাবারা আইজকা নিশির ডাক আছে। কুসুমচর জাইগা উঠব। ঘুমাইয়া পড় জলদি। না জানি আইজ কার কপালে মরণ।’
কথাটার মধ্যে একটা কিছু ছিল। বিষাদ ভর করল। তুষার আর কথা বাড়াল না। কাগজ কলম বের করে মন দিল যাত্রা শুরুর পর্ব লেখায়।
মিলন তাকিয়ে রইল জানালার ওপাশে। দ্বীপগ্রামে এমন বাঁধভাঙা চাঁদের আলোয় অতিপ্রাকৃত বিষয়গুলোকেই মনে হয় খুব স্বাভাবিক। মনে হয় দূর থেকে কে যেন নীরবে গলা ফাটিয়ে ডাকছে। মিলন ঘাড় ফেরাতেই ইঙ্গিতটা বুঝে নিল তুষার।
‘হুমম, খারাপ না।’
সায় মিলেছে বন্ধুর। রোমাঞ্চপ্রিয় মিলনকে আর ঠেকায় কে! একেই বুঝি বলে নিশির ডাক।
সারাদিনের ক্লান্তি উবে গেল এক লহমায়। গায়ে চাদর চাপিয়ে চুপিসারে ঘর ছেড়ে অচেনা দ্বীপ চষে বেড়াতে বেরিয়ে পড়ল দুজন।
সাজানো গোছানো সৈকত নেই। ছোট্ট ইঞ্জিন নৌকার ঘাট আছে পশ্চিম প্রান্তে। দক্ষিণে আর কোনো ভূখণ্ড নেই। উত্তরে বেশ কিছুদূর এগোলে ছোটখাট কয়েকটা চরের দেখা মিলবে। তবে ওগুলোতে বসতি নেই। গাছগাছালির জন্যই সম্ভবত কুসুমচরে কয়েকটি পরিবার এসে আশ্রয় নিয়েছিল।
বড়জোর সাত-আট বর্গকিলোমিটার। বেশিরভাগ এলাকা জঙ্গল। চাঁদের আলোর ছড়াছড়ি। আর আছে ভীতিকর নিরবতা।
‘খেয়াল করেছিস? পোকামাকড়ের শব্দ নাই।’
মিলন ভয় পাওয়ার পাত্র নয়। তবে অস্বাভাবিক নিরবতা কান এড়াল না।
‘আজকে পূর্ণিমা। এ কারণে…।’
‘চল সাগরে চাঁদের আলো দেখে আসি।’
‘কেন, জঙ্গল ভয় করছে?’
‘যাব যাব। কিন্তু সাগরে ভাসা চাঁদ দেখার লোভ সামলাতে পারছি না।’
সদ্য বত্রিশে পা রাখা দুই বন্ধু হেঁটে চলল সৈকতের দিকে।
কালেভদ্রে এখানে বড় লঞ্চ ভিড়ে। বেশিরভাগ ইঞ্জিন নৌকা। দুচারটে ছোট পানসি আছে। সমুদ্র শান্ত থাকলে খানিকটা দূরে গিয়ে জাল পাতে ওগুলো। ঘাটে এখন একটাই নৌকা। ঢেউয়ের তালে দুলছে। ওদিকেই এগিয়ে গেল।
‘কিডা! কিডা! আমার নৌকায়! যা! যা! হুস হুস!’
‘আমি মিলন। আপনে কিডা?’
‘সঙ্গে কিডা?’
‘সঙ্গে আমার বন্ধু। নাম তুষার।’
‘আমি হামু। তোগোরে খামু। যা ভাগ! হুসসস।’
‘আসলেই মাথা নষ্ট। সকালেই সন্দেহ হইছিল।’ বিড়বিড় করলো মিলন।
‘হামু ভাই। বাইরে আসেন। আমাদের খান।’ হাসল তুষার।
‘তোগোরে খাইব। কুসুমচরে নিশি তোগোরে খাইব। আইজকাই খাইব। তোরা ভাগ।’
‘ভেগে যাব কোথায়?’
এমন সময় একটা পানসি এসে ভিড়ল।
‘কিডা! রতনের বাপ?’
‘হরে হামু। কী রান্না করছিস?’
‘পুঁটি মাছ পাই না। কাঁকড়ার ঝোল। খাইলে আহো।’
রতনের বাবার দিকে এগিয়ে যায় এবার দুই বন্ধু। কথা শুরু করে তুষার।
‘আমরা নতুন। বেড়াতে এসেছি। কী মাছ ধরলেন?’
‘চিংড়ি পাইসি আইজকা। তোমরা বাইরে কেন? মরার শখ হইসে? জলদি যাও। এইখানে দেহার কিসু নাই। থাইকো না বেশিদিন।’
‘আপনার কি মরার শখ নাকি? আপনি পড়ে আছেন যে।’
‘বাঁচা মরা নিয়া ভাবি না। আমিও হামুর মতো। জলের সংসার। একটা পুলা ছিল। নাম রতন। বউটা মরনের পর ও ভাইগা গেল ঢাকায়। আমার খবরই লয় না।’
মিলন বলল, ‘আমরা সবই জানি। এসেছি ঘটনার তদন্ত করতে। এই হামু কি আসলেই নৌকায় থাকে। আমার তো মনে হয় ওই খুন খারাবি কইরা ভূতের কান্ধে দোষ চাপাইতেসে।’
‘হাহাহাহা।’
মাঝির অট্টহাসিতে চাপা পড়ে গেল যাবতীয় সন্দেহ।
‘হামুয় করবো খুন খারাবি! যে কিনা গত দুই বৎসর মাটিতেই পা রাখে নাই?’
‘স্ট্রেঞ্জ!’
মিলনও চমকাল। এমন অদ্ভুত গাছ সে আগে দেখেনি। তবে তুষারের মুখে ভয় নেই। হাসি হাসি।
‘এখানে ড্রাগন বøাড ট্রি?’
‘কী বললি?’
‘এ গাছ দেখা যায় মধ্যপ্রাচ্যের দিকে। মরুর গাছ। দ্বীপে থাকার প্রশ্নই আসে না। তবে একটু অন্যরকম।’
‘মনে হয় সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে বীজ টিজ এসে গেছে।’
‘আরে! বাওবাবও আছে দেখছি।’
‘বাংলায় বল তুষার! তুই বোটানি পড়েছিস বলে উল্টোপাল্টা নাম বলবি আর আমি বিশ্বাস করব?’
‘আরে এগুলো গাছের নাম।’
‘বাসায় যাই ঘুম দেই। গাছ দেখার শখ নাই। সকালে দেখিস। পূর্ণিমা শেষ হোক।’
‘আরে তুই না এডভেঞ্চার চেয়েছিলি? এটাই আসল..।’
কথা শেষ হলো না তুষারের। তার আগেই বুকে কাঁপন ধরানো এক চিৎকার। মধ্যবয়সী কোনো পুরুষের। ব্যথা কিংবা রাগের নয়। ভয়ের চিৎকার। অপার্থিব ভয় যেন লোকটার মাথায় চেপে বসেছে।
‘কোন দিক থেকে!’ কাঁপা গলায় জানতে চাইল তুষার। মিলনের কান খাড়া। ইশারা করতেই তাকে অনুসরণ করল তুষার।
পুবের দিকে দৌড়াচ্ছে দুজন। একসময় ধানক্ষেত ছিল। এখন সবুজের লেশমাত্র নেই। হলদেটে মাটি। নিশিকান্তের বাড়ি পেরিয়েছে। এরপর ক্ষেত। তারপর আবার জঙ্গল। গাছগুলো যথারীতি অচেনা। দুয়েকটা পরিচিতও আছে। নারকেলের সারি যেখানে হালকা হয়ে দক্ষিণের সৈকতে মিলেছে, চিৎকারটা আসছে সেখান থেকে।
কোনো মানুষের গলায় এত জোর থাকতে পারে জানা ছিল না তাদের। দৌড়াতে গিয়ে তুষারের একবার মনে হলো পা থেমে থেমে যেতে চাইছে। মাথাটাও কাজ করতে চাইছে না। বন্ধুর দিকে তাকাল। মিলন ভ্রূ কোঁচকাল। বুঝতে চাইল, তুষার কেন অযথা ভয় পাচ্ছে। একজন বিপদে পড়েছে। তাকে বাঁচানো তো তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
মাথাটা ঝিম ঝিম করছে তুষারের। জার্নিল ধকলে সম্ভবত শরীর আর সাড়া দিতে চাইছে না। বহুদিন এভাবে ঝেড়ে দৌড়ও দেয়নি। বুক ওঠানামা করছে ভীষণ। মিলনের শক্তসমর্থ শরীর। তুষার তার সঙ্গে পাল্লাও দিতে পারছে না।
‘দাঁড়া!’ হাঁপাচ্ছে তুষার।
হঠাৎ থেমে গেল চিৎকার। মরে যায়নি তো লোকটা?
‘মনে হয় শেষ!’ মিলনের কথা শেষ না হতেই জঙ্গলের ভেতর থেকে ছুটে এল একটা শরীর। দুহাত সামনে বাড়িয়ে ছুটছে। গগনবিদারি চিৎকারটা তাদের দুজনের কানের পাশ দিয়ে সাঁ করে চলে গেল। মুহূর্তের জন্য চোখে পড়ল লোকটাকে। পেটা শরীর। জেলে হবে।
‘পানি পানি! মাগো! ডুইবা গেলাম।’
শব্দ লক্ষ্য করে ছুট লাগাল। আচমকা নাক চেপে ধরল দুজন।
‘ভূতের গন্ধরে বাপ!’
‘বিউট্রিক এসিড! গন্ধের রাজা। আমরা কি এর মধ্যেই পা দিলাম নাকি!’
বোঁটকা গন্ধটাই এখন বড় মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়াল। নিশ্বাস নেওয়া দায়। দুজন ছুটে চলল ঝোপঝাড় মাড়িয়ে।
‘এ এসিডের গন্ধ এক মাইল দূর থেকেও পাওয়া যায়।’
গাছপালার পাশাপাশি রসায়নেও দখল ভাল তুষারের। তবে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে জুড়ি নেই মিলনের। আপাতত গন্ধটা চাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। পকেটে থাকা রুমালটাকে ছিড়ে দুটুকরো করে একটা বাড়িয়ে দিল বন্ধুর দিকে।
‘তুই জিরিয়ে নে। আমি দেখি।’
তুষারের আগে ও নিজেই দেখে আসতে চায় বিপদটা। এই ফাঁকে চাঁদের আলোয় আশপাশ দেখার সুযোগ পেল তুষার। বিড়বিড় করে অচেনা সব গাছের নাম আওড়ে যাচ্ছে। ‘কারনিভোরাসও আছে!’
‘কী বললি?’
‘আরে পোকামাকড় খায় এমন গাছ আছে এই জঙ্গলে।’
‘বলিস কী! তাহলে!’
‘আরে ধুর! পোকামাকড় পর্যন্তই। একটা ছোট্ট চড়–ইও খেতে পারবে না এগুলো।’
আশ্বস্ত হলো মিলন। আবার হন্যে হয়ে খুঁজতে শুরু করলো লোকটাকে। কয়েক জায়গায় ভাঙা শুকনো ডাল দেখতে পেল। তুষারকে ইশারা করতেই এগিয়ে গেল।
‘পুবের দিকেই গেছে।’ বলল তুষার।
‘ওই দিকে সৈকত নাই। এখন চল। সকালে দেখা যাবে। আর আশা নাই। নিয়া গেছে।’
‘কে নিয়ে যাবে! কাউকে তো দেখিনি!’
উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মরে করলো না মিলন। চোখে এক ধরনের রাগ চিকচিক করছে। তুষার এগিয়ে গেল এবার। ‘তুই দাঁড়া আমি দেখি।’
‘আরে থাম থাম! বীরপুরুষ! ভূতের কারবার, আগেই বলেছিলাম!’
আচমকা সাহস চেপে বসল যেন দুজনের বুকে। রাত, জঙ্গল, আর বাজে গন্ধ কোনোটারই তোয়াক্কা করছে না।
টেনশন না থাকলেও তুষারের মনের খটকা যাচ্ছে না। আশপাশে কোনো প্রাণী বা পোকার শব্দ নেই। পুরো জঙ্গলে একমাত্র তারাই যেন জীবিত। আর গাছগুলো দাঁড়িয়ে থেকে তাদের কাজকর্ম দেখছে।
ভয়টা তাড়িয়ে দিল তুষার। মনোযোগ দিল খোঁজায়। হাঁটতে হাঁটতে দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব কোণায় এলো। একটা খাঁড়ির মতো আছে। ওপাশে দ্বীপের বাড়তি একটা অংশ। ঘন জঙ্গলে ঢাকা ওই দিকে কোনো বসতি চোখে পড়ল না। এপাশে ঘাটও নেই। লোকটা সাঁতরে ওপারে যেতে পারে, তবে সাঁতরালে চোখে পড়ত। আচমকা গায়েব হলো কী করে?
কেমন যেন একটা আলস্য জাঁকিয়ে বসছে তুষারের শরীরে।
‘চল, যাই। ঘুম পাচ্ছে।’
কথা বলতে বলতেই হাই তুলল তুষার। মিলন তরতাজা। চাইলে আরো ঘণ্টাখানেক জঙ্গল চষে বেড়াতে পারবে।
‘নারে, ঘুমে পড়ে..।’
কথা বলার শক্তি নেই তুষারের। অস্বাভাবিক বিষয়টা টের পেলেও প্রকাশ করতে পারছে না। কী যেন বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। একরাশ ঘুম চেপে ধরেছে। চাঁদের আলোয় চিকচিক করা বালির সৈকতটা যেন রাজকীয় এক বিছানা। সঙ্গে সমুদ্রের গর্জনের ক্লাসিক্যাল সঙ্গীত। বসে পড়ল তুষার। সচকিত মিলন।
‘ওঠ! ওঠ! চল যাই!’
কে শোনে কার কথা। প্রথমে হাঁটু গেড়ে বসল। সেকেন্ডের মধ্যে শুয়ে পড়ল তুষার। বুক ওঠানামা করছে ছন্দের তালে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন!
বিপদেই পড়েছে মিলন। ভয়ও পাচ্ছে খানিকটা। এমনটা হওয়ার কথা নয়। দুবার নাকের হাত নিয়ে দেখল। নাহ, শ্বাস নিচ্ছে। সিদ্ধান্তটা নিতে দেরি করেনি। কাঁধে তুলে নিল তুষারকে।
মাত্র মিনিটখানেক এগিয়েছে। হাঁপাচ্ছে মিলন। ‘কী খাস তুই! দেখতে হাড্ডি, ওজনে হাতি।’ ঘুমে বেহুঁশ তুষারের কানে কথাটা ঢুকলোই না। খানিকপর মিলন বুঝতে পারল পথ হারিয়েছে। ভয়ের চেয়ে ক্লান্তি বেশি। পারলে নিজেই ঘুমিয়ে পড়ে।
পাশে অদ্ভুত এক লতানো ফুলের গাছ। চমকে উঠল মিলন। মনে হলো লতার একটা ফুল ঘাড় বাঁকিয়ে ওকে দেখছে! নড়ে উঠল? নাহ, এই ছোটখাট ফুলগাছ আবার মানুষ খাবে কী করে! একটু আগে যে তাগড়া লোকটা ভ্যানিশ হয়ে গেল ওকে কী তবে! চিন্তাটা মাথায় আসতেই রেগে গেল মিলন। হাত বাড়িয়ে একটান দিয়ে টেনে হিঁচড়ে উপড়ে ফেলল অদ্ভুত লতানো গাছটা। এরপর ভয় কিংবা রাগের তোপে শরীরে শক্তি গজিয়ে উঠল। তুষারকে কাঁধে করে ছুট লাগাল দক্ষিণ-পশ্চিম কোণা বরাবর।