সুস্থ থাকতে আস্থা রাখুন চিকেনে : জেনে নিন রেড মিট খাওয়ার নিয়ম

হৃদরোগ, হাই প্রেশার, কোলেস্টেরল ইত্যাদির প্রকোপ বাড়ানোর ব্যাপারে যতই নাম খারাপ থাক, খাসি–গরু বা শুয়োরের মাংস পুরোপুরি ছেঁটে ফেলা ভোজনরসিকের পক্ষে অসাধ্য কাজ৷ চিকিৎসাবিজ্ঞান আশ্বাস দিচ্ছে— তার দরকারও নেই৷

কারণ, বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এ সবের মধ্যে এমন সব গুণও আছে, যে রয়েসয়ে খেলে উপকারের পাল্লাই ভারী হয়৷ যেমন, ভাল জাতের প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন বি ১২৷ কাজেই যে দেশে অপুষ্টি ও রক্তাল্পতার এত রমরমা, সেখানে একে পুরোপুরি বর্জন করার কথা না ভাবাই ভাল৷

‘তবে হ্যাঁ, সেই অজুহাতে নিয়মিত খেতে শুরু করলে কিন্তু মুশকিল৷ কেউই তো আর চর্বি ছেঁটে ফেলে, প্রায় বিনা তেলে স্টু বানিয়ে খান না, খান ভেজেভুজে, তেলে-ঝালে গড়গড়ে করে, তাকে আরও অস্বাস্থ্যকর বানিয়ে৷ দু’-এক টুকরোতেও সন্তুষ্ট থাকেন না প্রায় সময়, খান কবজি ডুবিয়ে৷ কাজেই একেবার ছাড় দিয়ে দিলে বিপদ৷’ জানিয়েছেন  শল্য চিকিৎসক  সাধন চন্দ্র রায়৷

ভাবছেন, যা এত কাল করে এসেছেন— মানে, মাংসের যে অংশে চর্বি কম আছে (লিন কাট) সেই মাংস কিনবেন ও যতটুকু চর্বি চোখে দেখা যাচ্ছে তা বাদ দিয়ে দেবেন। এমনকী, কষানোর পর ভেসে ওঠা তেলও বাদ দেবেন। তাই তো?

না, তা-ও আপনাকে নিয়মিত এবং প্রচুর পরিমাণে খাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া যাবে না৷ কারণ এর মূলে আছে একটি দুঃসংবাদ৷

কী দুঃসংবাদ?

সাম্প্রতিক একটি গবেষণার সূত্র ধরে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন গরু, শুয়োর বা খাসির মাংসের সব বিপদের মূলে শুধু স্যাচুরেটেড ফ্যাট আর কোলেস্টেরল নয়৷ নিয়মিত ও প্রচুর পরিমাণে এই জাতীয় মাংস খেলে পাকস্থলিতে কিছু ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়া দ্রুত গতিতে বাড়তে শুরু করে৷ এদের উপস্থিতিতে মাংসের কারনিটিন নামের উপাদান ভেঙে গিয়ে ট্রাইমিথাইল্যামিন যৌগে পরিণত হয়। যা আবার রক্তে শোষিত হয়ে ও লিভারের বিপাক ক্রিয়ায় ভেঙে পরিণত হয় ট্রাইমিথাইল্যামিন-এন-অক্সাইডে৷ হার্টের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম রক্তনালিতে চর্বি জমিয়ে ইসকিমিক হৃদরোগের সূত্রপাত ঘটাতে যা অদ্বিতীয়৷

তবে হ্যাঁ, যদি ন’মাসে-ছ’মাসে খান, চর্বি ছেঁটে খান ও দু’-এক টুকরোয় সন্তুষ্ট থাকেন, খেতে পারেন৷  আর সঙ্গে যদি  দু’-একটা নিয়ম মানতে পারেন, তা হলে তো হয়েই গেল৷

রেড মিট খাওয়ার নিয়ম

  • রোগের বাড়াবাড়ি না থাকলে ও ডাক্তার বারণ না করলে সপ্তাহে এক দিন দু’-চার টুকরো খেতে পারেন৷
  • খাসির চর্বির পকোড়া অত্যন্ত স্বাদু। একবার খেলে বার বার খেতে ইচ্ছে করে৷ কাজেই হৃদরোগ, হাই প্রেশার, হাই কোলেস্টেরল ইত্যাদি থাকলে একটাও খাবেন না৷ এ সব না থাকলে ও বয়স কম হলে ন’মাসে-ছ’মাসে এক–আধটা খেতে পারেন৷ তবে এটা কিন্তু ডাক্তারি ছাড়পত্র নয়, মনে রাখবেন৷
  • খাসি-শুয়োর-গরু যে মাংসই খান না কেন, শরীরের যে অংশে চর্বি কম আছে, সেই অংশ থেকে মাংস কিনুন, যাকে বলে ‘লিন কাট’৷
  • লিন কাট থেকে দৃশ্যমান সব চর্বি ছেঁটে ফেলুন ও মাংস কষানোর পর ভেসে ওঠা তেল ফেলে দিন৷ রান্নার পর মাংস ফ্রিজে রেখে দিলে গ্রেভিতে মিশে থাকা চর্বি শক্ত হয়ে যায়৷ তখন সেটা ফেলে বাকিটা গরম করে খান৷
  • রান্নায় কম তেল দিন৷ খুব কষিয়ে বা ভেজে রান্না করার বদলে বেক, গ্রিল, রোস্ট, স্টার ফ্রাই, সতে বা স্টু খেলে বেশি উপকার৷
  • কম নুনে রান্না করতে পারলে ভাল৷
  • মেটে, কিডনি ইত্যাদি জায়গায় কোলেস্টেরল বেশি থাকে৷ কাজেই নিয়মিত খাবেন না৷ তবে মেটেতে আয়রন ও ভিটামিন বেশি থাকে বলে মাসে এক-আধবার দু’-চার টুকরো খেতে পারেন৷

আর মুরগি?

সে তো সব সময় খেতে পারেন৷ কারণ এমনিতেই তাতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও কোলেস্টেরল তুলনায় কম৷ তার উপর লিন কাট কিনলে, তারও আবার চামড়া ও চর্বি, যতটুকু চোখে দেখা যায়, বাদ দিয়ে দিলে ফ্যাটের পরিমাণ যা দাঁড়ায়, তা স্বাস্থ্যের হিসেবে মোটামুটি ঠিকঠাক৷ বড় মুরগি হলে কষানোর পর ভেসে ওঠা তেল ফেলে দিলে তো কথাই নেই৷ আর সবচেয়ে বড় কথা, পাকস্থলীর ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়ারাও এত নির্মম নয় এর প্রতি৷ কাজেই সপ্তাহে দু’-তিন দিন খেলে ক্ষতি তো নেই-ই, বরং ভাল৷ কম তেলে, কম আঁচে, রান্না করলে আরও ভাল৷