পিজি হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এবিএম আবদুল্লাহর পরামর্শ : স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করে রোজা !

পিজি হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এবিএম আবদুল্লাহর পরামর্শ : স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করে রোজা !

পবিত্র মাহে রমজান আসন্ন। শুধু আত্মশুদ্ধিই নয়, এ মাস আত্মনিয়ন্ত্রণেরও। রোজার অন্যতম লক্ষ্য মানুষের স্বাস্থ্যগত উন্নতি সাধন। অনেক রোগীই যে কোনো অবস্থায় রোজা রাখতে বদ্ধপরিকর। আবার অনেকেই নিজের মতো অজুহাত তৈরি করে রোজা না রাখার পক্ষে যুক্তি খোঁজেন। আসলে দীর্ঘস্থায়ী রোগেও রোজা রাখা সম্ভব। রোজা রাখলে অনেকে স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় করেন।

রোজার মাসে পেপটিক আলসারের রোগীরা খালি পেটে থাকবেন, ডায়াবেটিস রোগীরা কীভাবে রোজা রেখে ইনসুলিন নেবেন, উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা কীভাবে দু’বেলা বা তিনবেলা ওষুধ খাবেন এসব চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েন। আবার কিছু অসুস্থ ব্যক্তি এমনকি সুস্থ ব্যক্তিরাও দুর্বলতা ও নানারকম দুশ্চিন্ত-দুর্ভাবনার কারণে রোজা নিয়ে গড়িমসি করেন। আসলে রোজা রাখলে শরীরে তেমন কোনো বিরূপ প্রভাব পড়ে না। স্বাস্থ্যের উন্নতি

প্রকৃতপক্ষে রোজায় কারও স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে গেছে বা রোজা রেখে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হয়ে কারও মৃত্যু হয়েছে, এমন ঘটনা শোনা যায়নি। রোজা কষ্টকর ইবাদত এবং রোজা রাখলে শরীরে চাপ পড়ে বলে অনেকেই রোজা রাখেন না। কিন্তু মনে রাখতে হবে- শরিয়তের বিধান অনুযায়ী, সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া রোজা পরিত্যাগ করা সম্পূর্ণ অনুচিত। সুস্থ ব্যক্তি তো বটেই, অনেক অসুস্থ ব্যক্তিরও রোজা ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না।

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সুচিন্তিত অভিমত হলো, রোজা স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, কোনো ক্ষতি করে না। বরং শরীর-মনের উন্নতি লাভে সহায়ক। পেপটিক আলসার, ডায়াবেটিস, হৃদ রোগ ও বাত-ব্যথার রোগীরাও সরাসরি রোজায় উপকার পান। পেপটিক আলসারের কারণে অনেকেই রোজা ছেড়ে দেন। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, পেপটিক আলসারে রোজা বিশেষ উপকারী।

মানুষের পেটই হলো সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু। পেট ঠিক থাকলে সব ঠিক থাকে। আর পেটে সমস্যা দেখা দিলে স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়। সারা বছরে একবার পেটের নিস্কাশন প্রয়োজন। এক মাস সিয়াম পালন করলে উত্তম রূপে পেটের দূষিত ও ক্ষতিকর পদার্থের নিস্কাশন ঘটে। পাকস্থলীতে এক ধরনের উপকারী জীবাণু খাদ্য হজমে সাহায্য করে। বছরের ১১ মাস এসব জীবাণু অনবরত খাদ্য হজম কাজে লিপ্ত থাকার ফলে দুর্বল হয়ে পড়ে। দীর্ঘ এক মাস রোজার ফলে এ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য জীবাণুগুলো বিশ্রাম পায়। বিশ্রামের ফলে এরা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে বাকি ১১ মাস আবার খাদ্য হজমে ভালোভাবে সাহায্য করতে পারে।

মানবদেহে চর্বি ও কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে হৃদরোগ, রক্তচাপ, বহুমূত্রসহ নানা জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। রোজা চর্বি বা কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে নিরাপদ রাখে। রোজা মস্তিস্কের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রোজা অবস্থায় কিডনি ও লিভার বিশ্রাম পায়। কিডনির মাধ্যমে শরীরে প্রতি মিনিটে ১ থেকে ৩ লিটার রক্ত সঞ্চালিত হয়। অপ্রয়োজনীয় পদার্থগুলো প্রস্রাবের সঙ্গে নির্গত হয়। সুস্থ মানুষের লিভার আরও সুষ্ঠুভাবে কার্যক্ষম হয়। তবে লিভার বা কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীরা রোজা রাখার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

লেখক: ডা. এবিএম আবদুল্লাহ, অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

 

স্ট্রোক সাধারণত বাথরুমেই হয়ে থাকে কেন?

স্বাস্থ্যের উন্নতি করে রোজা