ময়মনসিংহের নান্দাইলের খামারগাঁও গ্রামের আছিয়া বেগম (৮০)। এ বয়সেও বিধবা কিংবা বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন না তিনি। জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে এ প্রতিবেদককে প্রশ্ন করেন, ‘বাজান (বাবা) আর কত বয়স অইলে আমি ভাতা পাইয়াম।’
আছিয়া বেগম জানান, তাঁর বাবা-দাদার অনেক নামডাক ছিল। ছিল পুকুরভরা মাছ, গোলাভরা ধান। আরো ছিল গোয়ালভরা গরু-মহিষ। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সব হারিয়ে এখন অন্যের জায়গায় বসবাস করছেন তিনি। ভিক্ষা করছেন। প্রতি শুক্রবার পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে যে টাকা পান, তা দিয়েই চলতে হয় সাত দিন।
তিনি আরো জানান, প্রায় তিন যুগ আগে তাঁর স্বামী আব্দুল মন্নাছ মারা যান। মানসিক ভারসাম্যহীন, স্বামী পরিত্যক্তা একমাত্র মেয়ে নুরজাহান বেগমকে নিয়ে চলছে তাঁর জীবন-সংসার। ৮০ বছর বয়সেও তাঁর ভাগ্যে জোটেনি বিধবা কিংবা বয়স্ক ভাতা। পাননি ভিজিএফ, ভিজিডিসহ অসহায় মানুষকে দেওয়া সরকারের কোনো সুযোগ-সুবিধা।
আছিয়া বেগম বলেন, ‘আগে এই বাড়ি-ওই বাড়িতে কাম-কাজ করে খাইতাম, অহন পারি না। শইল্লে কুলায় না। বল-শক্তি পাই না। দূরের আডে (বাজারে) যাইতাম পারি না। ঘরে একটা মাত্র ছুঁড়ি (মেয়ে), হেইডাও পাগল। পেডের জ্বালা মিডাইতে মাইনষ্যের কাছে আত (হাত) পাইত্যা জীবন বাঁচাইতে অইতাছে। মেঘ আইলে বাইরে যাইতাম পারি না। তহন উবাস (না খেয়ে) তাওন লাগে। চেয়ারম্যান-মেম্বার বেহের (সবার) দ্বারে গেছি। কেউ একখান কাড করে দেয় না। ইশারা-ইঙ্গিতে টেহা চায়। আমি অত টেহা পাইয়াম কই? সরহার আমরার লাইগ্যা সুবিধা দেয়; কিন্তুক হেরা আমরারে দেয় না। আল্লার কাছে বিচার দিছি। যদি কারো দয়া অয়।’
এ ব্যাপারে চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আব্দুর রাশিদ বলেন, ‘আমার দুই বছর সময়ে (মেয়াদে) মাত্র দুটি কার্ড পেয়েছিলাম। এর মধ্যে আর কোনো কার্ড পাইনি। এবার পেলেই আছিয়া বেগমকে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’