তালেবানের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার পদক্ষেপ চায় হাজারা জনগোষ্ঠী

আফগানিস্তানের হাজারা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ওপর তালেবান জঙ্গিদের চালানো নির্যাতনের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার হস্তক্ষেপ চায় দেশটিতে আশ্রিত হাজারা সম্প্রদায়ের সদস্যরা। দাবি আদায়ে কর্মসূচি পালন করেছে শুক্রবার (৩০ নভেম্বর) তারা কর্মসূচি পালন করেছেন অস্ট্রেলিয়ার সংসদ ভবনের সামনে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, শিয়া মুসলমান হাজারা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ওপর সুনির্দিষ্টভাবে হত্যা, নির্যাতন চালিয়ে আসছে আফগান তালেবান। দেশটির মালিস্তান ও জাঘোরির মতো জেলায় তাদের সহিংসতায় দিন দিন বাড়ছে ভুক্তভোগীর সংখ্যা।
অস্ট্রেলিয়াতে হাজারাদের কর্মসূচি

হাজারা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা পূর্ব এশীয়দের মতো দেখতে। তারা শিয়া ধর্ম পালন করে এবং ফারসিতে কথা বলে। নারীদের শিক্ষার অধিকার ও তাদের প্রকাশ্যে চলাচলের অধিকার স্বীকার করার মতো প্রগতিশীল মূল্যবোধ লালন করে। আফগান তালেবান সুন্নিদের সংগঠন হওয়ায় হাজারারা অব্যাহতভাবে তাদের হামলার মুখে রয়েছে। সম্প্রতি আফগান তালেবানের সঙ্গে যোগ হয়েছে ‘ইসলামিক স্টেট’ (আইএস) জঙ্গি গোষ্ঠী। আফগানিস্তানে নিপীড়নের শিকার হওয়া হাজারাদের অনেকেই অস্ট্রেলিয়াতে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে তাদের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। তবে অস্ট্রেলিয়া অস্থায়ীভিত্তিতে আশ্রয় দেওয়া অনেক হাজারাকে আফগানিস্তানে ফেরত পাঠিয়েছে, স্থায়ী নাগরিকত্বের আবেদন খারিজ করে দিয়ে। পরে দেখা গেছে তার অপহরণের শিকার হয়েছেন এবং এদের কয়েকজনকে তালেবান যোদ্ধারা হত্যাও করেছে।

ডেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক নিয়ামাতুল্লাহ ইব্রাহিমি। হাজারা সম্প্রদায়ের এই সদস্য বলেছেন, ‘হাজারাদের ওপর সম্প্রতি বৃদ্ধি পাওয়া নির্যাতনের ঘটনা অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় নেওয়া হাজারাদের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। কারণ এদের আত্মীয়-স্বজন তো বটেই পরিবারের অনেক নিকট সদস্যও আফগানিস্তানে রয়েছেন। এদের অনেকেই ইতোমধ্যে নিহত ইয়েছেন, বিশেষ করে মালিস্তান ও জাঘোরি জেলায়।’

সাজ্জাদ আসকারী (২২) এখন অস্ট্রেলিয়াতে শরণার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন। তার ভাষ্য, ‘আফগানিস্তানে থাকা পরিবারগুলোর ওপর দিয়ে কি বয়ে যাচ্ছে তা পুরোপুরি জানাও সম্ভব নয়। এতে অস্ট্রেলিয়াতে থাকা হাজারাদের ওপর মানসিক চাপ বাড়ছে। আমরা সেখানে ছিলাম । আমরা অনুমান করতে পারি, তাদের কেমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে। আমার বাবাকে জঙ্গিরা হত্যা করেছে। আমার মা যেমন কষ্টে আছেন, তেমনি আমরাও।’ আল জাজিরা লিখেছে, নভেম্বর মাসের শুরুতে আফগান তালেবান গজনী প্রদেশে অবস্থিত হাজারা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে হামলা করা শুরু করে। এতে অন্তত ৬৩ জন প্রাণ হারান, বাস্তচ্যুত হন হাজার হাজার মানুষ।

শুকুফা তাহিরি নামের ‘রিফিউজি কাউন্সিল অব অস্ট্রেলিয়ার’ একজন সাবেক কর্মকর্তা তার পরিবারের সদস্যদের বাস্তচ্যুত হওয়ার কথা জেনেছেন টিভি দেখে। সম্প্রতি টেলিভিশনে প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে তিনি দেখতে পান, বাস্তচ্যুতদের মধ্যে তার বৃদ্ধ দাদিও রয়েছেন। তিনি আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘এসব বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় হয়েছে ওপর একটি প্রদেশে। তাদের রয়েছে খাদ্য ও পানীয়ের সংকট। এসব হাজারাদের নিজেদের বাসস্থানে ফিরে যাওয়ার আর কোনও সম্ভাবনা নেই।’ আফগান তালেবান এখন যে শান্তি আলোচনা করতে চাইছে সে বিষয়ে শুকুফা তাহিরির মূল্যায়ন: তালেবান যোদ্ধারা শান্তি আলোচনার ভাব নিয়ে আসলে আরও বেশি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। হাজারাদের ওপর যে হামলা সম্প্রতি হয়েছে তা ক্রমেই আফগানিস্তানের অন্যান্য এলাকায় প্রসারিত হবে। শান্তি আলোচনা কার্যত আফগান তালেবানকে মনোবল যুগিয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আফগানিস্তানবিষয়ক গবেষক প্যাট্রিসিয়া গোসম্যান বলেছেন, কাবুলে যেসব হাজারা সদস্য আইএস জঙ্গিদের হামলার শিকার হয়েছেন তারা মনে করেন, আফগান সরকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই তাদেরকে ভুক্তভোগী হতে হয়েছে। আর এখানেই চলে আসে অস্ট্রেলিয়ার ভূমিকার প্রসঙ্গ। আফগান যুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায়ে মোট ২৫ হাজার অস্ট্রেলীয় সেনা অংশগ্রহণ করেছে। ১৭ বছর ধরে আফগানিস্তান পরিচালনায় তারা সরাসরি জড়িত। আফগানিস্তানে, বিশেষ করে ওরুজগান প্রদেশটিতে, তাদের অবস্থান শক্তিশালী। অথচ ওই প্রদেশেই গত মাসে হাজারাদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’ চালানো হয়েছে।

আফগানিস্তানে হাজারদের ওপর চলা নির্যাতনের লাগাম এখনই টেনে ধরাতে অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্ববাসী উদ্যোগী না হলে তার পরিণতি হাজারদের জন্য খুব খারাপ হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। পেশায় আইনজীবী এমন একজন হাজারা বেসমেল্লাহ রেজাই বলেছেন, ‘এখনই যদি বিশ্ব এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নেয় তাহেল আফগানিস্তানের হাজারাদের অবস্থা হবে ইরাকে আইএসের নিপীড়নের শিকার ইয়াজিদিদের মতো।’